ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়ায়-৩

বর্ণনাতীত কষ্ট, তবু স্বপ্ন ছোঁয়ার আশায় পাড়ি

রিয়াসাদ সানভি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৯, ২০১৫
বর্ণনাতীত কষ্ট, তবু স্বপ্ন ছোঁয়ার আশায় পাড়ি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বান্দরবান থেকে ফিরে: পথে যার সঙ্গেই দেখা সেই অবাক হলো এ পথে আমাদের মাত্র দু’জনকে দেখে। দু’টি পাড়া আছে, একটি নতুন তাম্লো আরেকটি পুরোনো তাম্লো।

আজ রাত কাটাবো পুরনো তাম্লো পাড়ায়। জুমের পথ ধরে একটানা হাঁটছি। অন্য সময় হলে এ পথে হাঁটতে হাঁটতেই সাকা হাফংয়ের চূড়া চোখে পড়ে। স্বপ্নচূড়া আজ একবারও দেখা দিলো না মেঘের উৎপাতে।

অনেক জায়গায় রাস্তা এতো খাঁড়া  রীতিমতো ভয় পাইয়ে দেয়। এর মধ্যে আবার সদ্য কেনা প্লাস্টিকের ট্রেকিং স্যান্ডেলটির ফিতে ছিঁড়ে গেছে। এ রকম রাস্তায় ফিতে ছেঁড়া স্যান্ডেল নিয়ে চলা যে কি বিপদ তা শুধু যারা পড়েছেন তারাই বলতে পারবেন। এভাবে পুরনো তাম্লোর ঝিরিতে এসে নামলাম। এখানে গত বছর একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছিলো। নতুন তাম্লো পাড়া পাহাড়ের একবারে মাথায়। তার মানে যতটুকু নেমেছি ততটুকু উঠতে হবে।   ২০০০-২৫০০ ফিট নেমেছি। সমান দূরত্ব উঠতে হবে।

স্বপ্ন চূড়ায় যাবো কষ্ট করতে হবে না একটু! সদ্য বৃষ্টিতে পিচ্ছিল পাহাড়ি চড়াই বাইতে লাগলাম। রাস্তার বেশির ভাগই গিয়েছে বাঁশবনের ভেতর দিয়ে। পাতা, আগাছায় পথ আরও পিচ্ছিল। সাথে মশা আর জোঁকের উৎপাত। ক্লান্তিতে কোথাও থামারও উপায় নেই। একটানা উঠতে হচ্ছে। অবশেষে ক্লান্তিকে জয় করে নতুন তাম্লো পাড়ায় পৌঁছে একটু জিরিয়ে নিলাম।

তৌহিদ জানালো আমাদের আজকের গন্তব্য পুরনো তাম্লো পাড়া এখান থেকে এক ঘণ্টার পথ। যদিও এ পাড়া থেকে বেরিয়েই পুরনো তাম্লোর ঘরগুলোর চাল দেখা যাচ্ছিলো। কিন্তু পাহাড়ের নিয়ম আলাদা। দৃষ্টিসীমায় থাকলেই এখানে কোনো কিছু কাছে এসে যায় না। অনেক সময় অনেক দূরের জিনিসও কাছের মনে হয়। এসব না ভেবে একটানা চলতে হবে।

আবার জুম শুরু হলো। সেখানে গাদা বন্দুক হাতে শিকারিরা ভিড় করেছে। জুমে এবার টিয়া পাখি আর হরিণের ব্যাপক উৎপাত। সেখানে আলাপ হলো পুরনো তাম্লো পাড়ার কারবারির সঙ্গে। তার সঙ্গে কথা বলে তার ঘরেই রাত কাটানোর অনুমতি নিয়ে নিলাম।

দূর থেকে পানিতে টাইটুম্বুর রেমাক্রিকে দেখা যাচ্ছিলো। আশা ছিলো অন্তত এরপর থেকে রেমাক্রিতে নামা যাবে। অবস্থা দেখে ঠিক হলো থানদুই পাড়া হয়ে যাওয়ার। রেমাক্রিতে নামা যাবে না। নতুনের মতো পুরনো তাম্লো পাড়াও একেবারে পাহাড়ের শীর্ষে। আমরা এখন আছি তার পাশের পাহাড়ে। সেখান থেকে পথ নেমে গেছে দুই পাহাড়ের মাঝখানে থাকা ঝিরিতে। ঝিরি পার হয়ে আবার সেই পাহাড়ের শীর্ষে উঠতে হবে। দিনের এই শেষ ওঠা-নামাতে যে পরিমাণ কষ্ট হলো তা বর্ণনাতীত।

বৃষ্টি পথের অবস্থা একেবারে বিতিকিচ্ছিরি করে ফেলেছে। তাম্লো পাড়ার কারবারির ঘরে এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে একেবারে শেষ বিকেল। এরপর সাধারণত যা হয় সেসবই হলো। গোসল, নিজ হাতে রান্না-খাওয়া। পরের দিন ঈদুল আজহা।

কাছের মানুষদের ছেড়ে বহু দূরে এই পাহাড়ে এসেছি একটি লক্ষ্য নিয়ে। ঈদের দিনেই হয়তো লক্ষ্য পূরণের আনন্দে ভাসতে পারি। তবে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। দিনের পথচলা শুরু হবে তখনই।

** বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়ায়-১: পাহাড়জয়ের স্বপ্নপথে যাত্রী আমি একা
** বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়ায়-২: মেঘ চেপে ধরলো চারপাশ থেকে, পথ দেখা দায়

বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।