ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

মুম্বাই-কলকাতার কড়চা-১১

নজর দেবেন না, এটা অমিতাভের বাড়ি!

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৫
নজর দেবেন না, এটা অমিতাভের বাড়ি! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মুম্বাই থেকে ফিরে: জুহুর কাছাকাছি থেকে বলিউডের বিগ বি অমিতাভের বাড়িতে একবার ঢুঁ মারবো না তা কি হয়! এ ঢুঁ মারা কিন্তু অন্দরে প্রবেশ নয়, বাইরে থেকে একনজর দেখা। মুম্বাইয়ে পা রেখে প্রথম দিনই কাজটি সেরে ফেলেছিলাম।



মুম্বাইয়ের এক সময়ের ‘পশ’ জায়গা জুহু বিচ থেকে অল্প কয়েক মিনিটের রাস্তা। চৌরাস্তার একটি বাঁক পেরিয়ে রাঁধাচূড়া গাছের পাশে এসে থামলো সদাহাস্য রাম উদগারের অটো, যার সদয় আগ্রহে এ যাত্রা। রকমারি ফুল, গাছ ঘেরা বাড়ির মূল গেটের বাঁধারে সিকিউরিটি রুমের পাশে ছোট করে হিন্দিতে লেখা ‘জলসা’। হিন্দি সিনেমাপ্রেমীদের কাছে নিশ্চয় নামটি পরিচিত। এটাই অমিতাভের বচ্চনের বাড়ি।


বাড়ির কাছের গেটটি অবশ্য ‍আরও পরিচিত। কারণ অভিষেক-ঐশ্বরিয়ার সেই আলোচিত বিয়ে হয়েছিলো এ বাড়িতেই। এবং সেসময় ক্যামেরা ভিতরে যেতে না পারলেও গেটের সামনে অভিষেকের ঘোড়ায় চড়ে নাচ নজর কাড়ে সবার।

কালো পোশাক পরা সিকিউরিটি কয়েকজন ঘোরাফেরা করছিলেন সামনে। তাদের কাছে জানা গেলো অমিতাভ বাড়ি নেই। তবে রোববার দেখা দেবেন তার ভক্তদের। আমাদের মন খারাপ হয়ে গেলো। কারণ রোববার পর্যন্ত থাকার পরিকল্পনা আমাদের নেই। তাই ছিমছাম বাড়িটি ঘুরেফিরে বাইরে থেকে দেখার চেষ্টা।


সমস্ত বাড়িজুড়েই বাগানবিলাস, বেলি, শিউলি, চামেলি, কাঠবেলি, পাম, মোচেন্ডা, স্পাইডার লিলি, মাধবীলতাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ও পাতা বাহার গাছ দেখা গেলো। বাড়ির মূল ভবনের পাশে প্রায় সাত ফুট পাঁচিলের উপর আবার তিন চার ফুটের লোহার বেষ্টনী। বাড়ির সামনে অর্থাৎ, গেটের ডানপাশে আরেকটি ভবন। দ্বিতীয় গেট দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখা গেলো একটি সিলভার কালারের বিএমডাব্লিউ, একটি সাদা মার্সিডিজ বেঞ্জ ও একটি অডি দাঁড়ানো। ধরে নিলাম তার ১৫টির বেশি গাড়ির তিনটি এখানে।


বাড়ির সামনে ডেনের দুর্গন্ধ কারো নাক এড়াবে না। উঁকি-ঝুঁকি মের কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে ফিরে গেলাম বিচে। ধরে নিলাম এ যাত্রা আর দেখা হলো না। কিন্তু মুম্বাইয়ের পানি-খাবার-বাতাস কিছুতেই আমাদের ছাড়তে চাইছিলো না। তাই ভাগ্য আমাদের টেনে নিয়ে গেলো রোববার পর্যন্ত। মাঝে কেটে গেলো চারদিন। মাঝের চারদিনের বিড়ম্বনার গল্প আরেকদিন। চলুন সেই রোববারের গল্পে ফিরি।

অমিতাভের সঙ্গে সরাসরি দেখা করা, হাত মেলানোর সুযোগ কিছুতেই চাড়তে চাইলেন না অমিতাভভক্ত আপা। আমাদেরও যে আগ্রহ নেই তা নয়। তাই অতিরিক্ত তিনদিন থাকার নানা কষ্ট নিয়েও ফের গন্তব্য অমিতাভের বাড়ি। এতেও যদি কিছুটা লাঘব হয় দুঃখ-কষ্ট!


বিকেল ৪টার দিকে আমরা বাড়ির সামনে পৌঁছে দেখি রাস্তা জ্যাম করে শুধু কালো মাথা দেখা যাচ্ছে। কয়েকশ নারী-পুরুষ সেখানে উপস্থিত। এসেছেন দিল্লি, তামিলনাড়ু থেকেও। বাড়ির সামনে পুলিশ। জানতে পারলাম অমিতাভ বাড়িতে আছেন। দেখা দেবেন ঘণ্টাখানেকের মধ্যে। মনে আশার সঞ্চার হলো।


এরইমধ্যে পুলিশ বারবার নারীদের সাবধানে থাকার তাগিদ দিচ্ছিলেন। ৭০ বছরের বৃদ্ধাও বাদ ছিলেন না সাক্ষাৎপ্রত্যাশীদের মধ্যে। পরিচয় হলো দিল্লির এক ব্যক্তির সঙ্গে। গত সপ্তাহে দেখেছেন অমিতাভকে। কিন্তু তার স্ত্রী বিশ্বাস করেনি। তাই এ সপ্তাহে আবার এসেছেন ছবি তুলতে। তিনি বারবার আমাদের আশ্বাস দিলেন, অপেক্ষা করলে দেখা পাবেন।


যাইহোক ভিড় ঠেলে গেটের সামনে ক্যামেরা তাক করে এগিয়ে থাকলাম। এসময় চোখে পড়লো গেটে লেবু, আলু, কাঁচামরিচ একসঙ্গে গেঁথে গেটে জামা-কাপড় বা মশারি টাঙানো হুকের মতো লাগানো হুকে ঝুলানো। দিল্লির দোকান, ট্যাক্সি অনেক জায়গায় এটা দেখেছি। কিন্তু অমিতাভের বাড়ির গেটে দেখে জিজ্ঞেস করলাম। একজন জানালেন, যে নজর না লাগে সেজন্য এটা টাঙানো হয়। একধরনের ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে করা টোটকা।

মনে মনে ভাবলাম, যার দিকে চোখ রাখে বিশ্বের কোটি মানুষ, যার বাড়ি দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমান অসংখ্য মানুষ তিনি কিনা ‘নজর’ না লাগার টোটকা ঝুলিয়েছেন! অবশ্য মনে প্রাণে ধার্মিক অমিতাভের কাছে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার।


এ ‍বাড়িতে এখন থাকেন না। শুধু রোববার সময় কাটাতে আসেন। পাশের রোডের আরেকটি বাড়ি প্রতীক্ষায় সপরিবারে থাকেন। আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকলাম। গেট একটু ফাঁক হলেই চিৎকার, আর ঝুঁকে পড়া। সিকিউরিটি, পুলিশ সবাই হিমশিম সে ভিড় ঠেকাতে।

কিছুক্ষণ পর একটি কালো রঙের মার্সিডিজ বেঞ্জ বের হতেই আবার হুমড়ি খেয়ে পড়া। অসংখ্য ক্যামেরার ক্লিক। তবে ভিতরে ড্রাইভার ছাড়া কাউকে দেখা গেলো না। জানা গেলো, এটা তার গাড়ি হলেও তিনি বের হননি। দাঁড়িয়ে থাকার প্রায় দু’ঘণ্টা পর সবাইকে হতাশ করে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা এসে সবাইকে ফিরে যেতে বললেন। জানালেন, আজ দেখা দেবেন না, শরীর খারাপ।


কি আর করা, ব্যর্থ মনোরথে অন্য সবার মতো ফিরে এলাম। আপা রাগে, ক্ষোভে শুধু বলতে থাকলেন, আমরা এত দূর থেকে এসে দেখা করতে এলাম আর দেখা দিলো না! জীবনেও ভুলবো না। এরপর থেকে টিভি স্ক্রিনে দেখলেও আপা মুখ ঘুরিয়ে নেন। ভক্তদের কি এভাবে হতাশ করতে আছে!

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৫
এএ

** চোখের সামনে আম্বানির বিলিয়ন ডলারের বাড়ি!
** ডায়মন্ড ব্যবসায়ীদের মালাবার হিলে ‘ঝুলন্ত উদ্যান’
** এটাই তো বলিউডি মুম্বাই!
** মুম্বাইয়ের ‘বাজু’তে দিনভর ঘোরাঘুরি
** সাগরকোলে হাজি আলী দরগা
** বলিউড তারকাদের বেহাল জুহু বিচ!
** প্রথম দর্শনেই মুম্বাইপ্রেম, চিকিৎসায় মন ভালো
** মনভোলানো খানাপিনায় ২৬ ঘণ্টায় মুম্বাই
** সোনার হরিণ ট্রেন টিকিট, অতঃপর হাওড়া স্টেশন
** ৫৫২ টাকায় ঢাকা থেকে কলকাতা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।