ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

পাথুরে পিয়াইন নদীর প্রান্তরে

মো. জাভেদ-বিন-এ-হাকিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫
পাথুরে পিয়াইন নদীর প্রান্তরে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কদিন যেতে না যেতেই মন অস্থির হয়ে ওঠে, বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছা করে। ফলে রাত দুপুরে ফেসবুকে স্ট্যাটাস।

সকালের মধ্যেই ব্যাপক সাড়া। হঠাৎ পরিকল্পনা তাই ইচ্ছে থাকার পরও বাহিনী বড় করা গেল না। যে কজন হলাম, ‘দে-ছুট’ ভ্রমণ সংঘের বাহিনী নিয়ে রাতের বাসে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলাম। সাংবাদিক কে.এম মাহ্বুব ভাই সাহায্যের হাত প্রসারিত করলেন। তিনি সিলেটের সাংবাদিক নোভেল ভাইকে অনুরোধ করেন আমাদের বিছনাকান্দি ভ্রমণে সহযোগিতার জন্য। প্রাণবন্ত নোভেল ভাই আন্তরিকতায়ও সমান।   সিলেটের পথে কখন কোথায় আছি, তা জেনে নিচ্ছিলেন যাত্রা শুরুর পর থেকেই।

সকালে পৌঁছাই লন্ডনি শহরের হুমায়ুন চত্বর। কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসেন গোয়াইন ঘাট উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আ. মতিন সাহেব। একগাল হেসে পরিচয় পর্ব শেষে ছুটি তার সঙ্গে। সিএনজি তার ধারণ ক্ষমতার চাইতে একজন বেশি নিয়ে চলছে ভোঁ ভোঁ শব্দ তুলে। সালুটিকর বাজারে এসে নাস্তার জন্য খানিকটা বিরতি। গাড়িতে আমাদের বসার কষ্ট বুঝতে পেরে কৌশলে আবদুল মতিন ভাই সালুটিকর হতে বিদায় নিলেন। তবে ভাড়া করে দিলেন একজন দক্ষ-ভদ্র চালকের সিএনজি গাড়ি।

বিছনাকান্দি যাওয়ার পথে সরু রাস্তার দু-পাশে গগনচুম্বি গাছ, ছায়াঘেরা নিরিবিলি পরিবেশ, বিস্তৃত ফসলের মাঠ নজরে আসে। এমন একটা পথ ধরে আমাদের সিএনজি ছুটতে থাকে। এর সঙ্গে রাত জাগা ‘দে-ছুট’ ভ্রমণ সংঘের বন্ধুদের চলতে থাকে ক্যামেরায় ক্লিক প্রতিযোগিতা। এভাবেই ছবি তোলে, দু’দিকের নানা দৃশ্য উপভোগ করতে করতে আমরা হাদারপার বাজারে পৌঁছি। বাজারের টি স্টলে সিলেটি চা পান করে খেয়া ঘাটের দিই ছুট। কিন্তু এতো হন্তদন্ত হয়ে ছুটার পরও সফল হইনি। পিয়ান নদীতে পানি কম থাকায় হেঁটে  যাওয়াই স্থির হলো। তবে চালক সোহেলের পরামর্শে আরো একটি সিএনজি ভাড়া নিই।

এবড়ো থেবড়ো জমির ‌ওপর দিয়ে গাড়ি চলছে। ধীরে ধীরে আমরা মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে বিছনাকান্দির জল পাথরের বিছানার দিকে এগিয়ে যাই। আর আফসোস করতে থাকি, ওই সবুজে মোড়ানো সারি সারি পাহাড় কেন এ দেশের হলো না! পাথরের ভাগাড় ভরা পিয়াইন নদীর তীরে সিএনজি থামে। আমরা অবাক বিস্ময়ে বিছনাকান্দির রূপ দেখতে থাকি, নদীতে কখনো হাঁটু, কখনো কোমর পর্যন্ত পানি পেরিয়ে এগিয়ে যাই প্রায় নোম্যান্স ল্যান্ডের দিকে। বিজিবি এসে সতর্ক করে। আর এগিয়ে না গিয়ে এখানেই থামি।

এবার জলকেলিতে মেতে ওঠার পালা। চরম গরমে বিছনাকান্দির পানিতে পরম আনন্দে গোসল করতে শুরু করি। স্থানীয়রা সীমান্তের ওপারের বাজারে চা পান করতে নিয়ে যেতে চায়, আমরা বারণ করি। তবে কেন যেন সীমান্ত নিয়ে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানির উক্তিটি বার বার মনে পড়ছিল। তিনি বলেছিলেন, আসাম আমার,পশ্চিম বঙ্গ আমার, ত্রিপুরাও আমার। তবে কেন আমাদের হল না? কি কারণে হলো না—জানি না!

আমাদের বিছনাকান্দিতে রয়েছে ছোট বড় অগণিত পাথরের সমারোহ। চার পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লাখো-কোটি পাথর, দেখে যেন মনে হয় পুরো এলাকাটাই পাথরের বিছানা। স্বচ্ছ শীতল পানির তলদেশে পাথরের পাশাপাশি নিজের শরীরের লোমও দেখা যাবে স্পষ্ট। টল টলে পানিতে অর্ধ-ডুবন্ত পাথরে মাথা রেখে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যেতে মন চাইবে। দীর্ঘ সময় জল পাথরের বিছানায় শুয়ে বসে গোসল করার পর আযানের ধ্বনি শুনে চেতনা ফিরে পাই। বিছনাকান্দির সৌন্দর্য অসাধারণ। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের জলপাথরের ভূমি বিছনাকান্দি! দৃষ্টির শেষ সীমানা পর্যন্ত শুধু পাথর আর পাহাড়। যখন ফিরে আসি তখন মনে হয় পিছন থেকে সীমান্তের দিগন্ত ছোয়া মেঘালয় পাহাড় ডেকে ওঠে।

কীভাবে যাবেন
দিনে বা রাতে ঢাকার সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল এবং গাবতলী থেকে বিভিন্ন পরিবহনের এসি/নন-এসি বাস সিলেটের পথে চলাচল করে। ভাড়া এসিতে গাড়ীতে ৯০০ থেকে ১,১০০ টাকা।   রাত যাপনের জন্য দরগা রোডে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। রুম ভাড়া ৫০০ হতে ৫,০০০ টাকা। আম্বরখানা ও হুমায়ুন চত্বর হতে সিএনজি-মাইক্রো ভাড়া পুরো দিনের জন্য যথাক্রমে ২,৫০০ হতে ৪,০০০ টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।