ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাভেলার্স নোটবুক

নয়নাভিরাম টাঙ্গুয়ার পথে | জাভেদ বিন-এ-হাকিম

ভ্রমণ / ট্রাভেলার্স নোটবুক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৫
নয়নাভিরাম টাঙ্গুয়ার পথে | জাভেদ বিন-এ-হাকিম ছবি: জাভেদ বিন-এ-হাকিম

প্রকৃতিকে এমন দরদ দিয়ে ভালোবেসেছি যে, ছুটি পেলেই প্রকৃতির টানে ঘর ছেড়ে ছুটে চলে যাই দূর বহুদূর অপার সৌন্দর্যের  প্রাকৃতিক কোনো এক লীলা ভূমির প্রান্তরে, সেখানে হাজির হয়ে বলে উঠি আমরা এসেছি তোমার প্রেমের টানে, ‘বরণ করে নাও’ তুমি তোমার অপার সৌন্দর্য দিয়ে। প্রকৃতিও আমাদের সানন্দে বরণ করে নেয়, তা না হলে দেশের দর্শনীয় স্থানে যেতে যোগাযোগের যে অবস্থা?

শুক্রবারের সাথে আরো একদিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ছুটি যোগ হওয়ায় দে-ছুট ভ্রমণ সংঘের প্রকৃতি প্রেমিক পাঁচ বন্ধু সুনামগঞ্জ জেলার অন্তর্গত মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত মৎস্য ও পাখির অভয় আশ্রম টাঙ্গুয়ার হাওড়ের উদ্দেশ্যে ছুট দিলাম।

ভ্রমণে সহযোগিতা করলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা রাশিদুল সিকদার রাজু। ভ্রমণের স্থান নির্ধারণ, সঙ্গি ও আয়োজন সর্বদা আমাকেই করতে হয়। তাই নির্বিগ্ন ভ্রমণের  টেনশনটাও থাকে অন্যদের চেয়ে আমার খানিকটা বেশি। সারা রাত জার্নি শেষে খুব ভোরে পৌঁছাই সুনামগঞ্জ। সময় স্বল্পতার জন্য শহর থেকে স্পিড বোট রিজার্ভ করে সুরমা নদীর উপর দিয়ে ছুটলাম টাঙ্গুয়ার দিকে। যেতে যেতে দেখা হল সুরমার দুপারের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য। কিছু কিছু দৃশ্য দেখে মনে  হবে যেন শিল্পীর তুঁলিতে আকাঁ কোনো ক্যানভাস। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে চাই অন্তর্দৃষ্টি, বাহ্যিক কোনো লোলুপ দৃষ্টি দিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করা যায় না।

জানা হল সুরমার তলদেশ হতে তোলা কালো মাটি। হাওড়বাসীর নিকট যা কিনা কালো সোনা হিসেবে পরিচিত, পরবর্তীতে শুকিয়ে জ্বালানি হিসেবে গ্রাম গঞ্জে ব্যাপক হারে  ব্যবহৃত হয়। দেখতে দেখতে, জানতে জানতে আর গাইডের কথা শুনতে শুনতে প্রায় তিন ঘণ্টা পর এসে পৌঁছলাম বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মৎস্য ও পাখির অভয় আশ্রম টাঙ্গুয়া হাওড়ে।

বোট হতে নামার পর চেনা অচেনা নানান প্রজাতি পাখির কলকাকলি আর হাওড়ের মনোরম দৃশ্য দেখে, মুহূর্তের মধ্যেই সকল ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। দায়িত্ব প্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব হতে অনুমতি নিয়ে হাজারো মাইল পাড়ি দিয়ে আসা পরিযায়ী পাখি দেখার জন্য, ডিঙ্গী নৌকা নিয়ে জলে ভাসি। হাওড়ের স্বচ্ছ জলে পাখির নৃত্য সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। একেবারে সীমান্ত ঘেঁষা মেঘালয় পাহাড়ের কোলে জীব বৈচিত্র্যে ভরপুর আমাদের টাঙ্গুয়ার হাওড়। প্রহরীর মতো সটান হয়ে থাকা হিজল কড়ছ গাছগুলো সন্ধ্যায় ফিরে যাওয়া পাখিদের আশ্রয়ের স্তম্ভ। এমন নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশে উচ্ছ্বসিত দে-ছুটের নতুন সদস্য দোস্ত মজিবরের সরল উক্তি, জাভেদ তুমি ঠিকই বলেছ- নির্মল প্রকৃতি মানুষের মনকে করে আরো উদার  আর চরিত্র করে তুলে বর্ণীল।

টাঙ্গুয়ার হাওড়ের পরিধি তাহিরপুর ও ধর্মপাশা এই দুই উপজেলার সম্মুখে প্রায় একশত কিলোমিটার বিস্তৃত। এই হাওড়কে ঘিরেই রয়েছে ৪৬টি গ্রামের প্রায় ৪০ হাজার জেলে পরিবারের জীবন জীবিকা। এখানে সারা বছর জুড়েই থাকে পাখির কম বেশি বিচরণ। স্থানীয়দের ভাষায় তীব্র শীত মৌসুমে পাখির জন্য মাটির দেখা পাওয়া যায় না। সরকার ২০০০ সালে টাঙ্গুয়ার হাওড়কে রামসার সাইট ঘোষণা করেছেন। এর জলাশয়ে ১২০ হতে ১৫০ প্রজাতির লতাগুল্ম ও ওষুধী গাছ রয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওড়ে এখনো প্রায় তিনশত প্রজাতির মাছের বিচরণ।

সরকার প্রতিবছর এর জলাশয় হতে প্রচুর রাজস্ব আয় করে থাকে। হাতিগাথা চেক পোস্টের সামনে মাছের প্রজনন ও অভয় আশ্রম। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হল, সময় স্বল্পতার কারণে সেখানে যাওয়া হল না। পাখিদের হরেকরকমের তামাশা দেখতে দেখতেই ঘরির কাটায় বেজে ওঠে বিদায়ের সুর। আমাদের সবার মনেই রয়ে গেল আরো অনেক কিছু না দেখার বিশাল হাহাকার।

স্পিড বোট স্ট্রার্ট করল, ফিরে চলা আবারো সেই যান্ত্রিক কোলাহল শহরের পানে। আমাদের মতো আর কারো যেন নিরাপদ রাত্রি যাপনের অভাবে টাঙ্গুয়ার খোলা প্রান্তর হতে অদেখার কষ্ট নিয়ে ফিরতে না হয়। আকাশে তারার মেলা, চাঁদ বিহীন অন্ধকার রাত্রির আকাশে জ্বল জ্বল করা তারাগুলো যেন আমাদের উদ্দেশ্যে বলছে, তোমাদেরকে আবার আসতে হবে! সত্যিই তো আমাদেরকে আবারও যেতে হবে দুর্লভ প্রজাতির মাছের নাচন আর দেশে নতুন করে আসা কোনো পরিযায়ী পাখির কলতান শুনতে, বিদায় টাঙ্গুয়া।

যোগাযোগ
ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জে সরাসরি বিভিন্ন পরিবহনের বাস সার্ভিস রয়েছে। ভাড়া পরিবহনভেদে ৫০০ হতে ৫৫০ টাকা মাত্র। রাত্রে থাকার জন্য শহরে, বিভিন্ন মানের আবাসকি হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে। ভাড়া প্রতি ডাবল বেডের কক্ষ ৩০০ হতে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। অথবা রাত কাটাতে না চাইলে আগের দিন রাত্রের গাড়ীতে রওনা দিয়ে পরের দিন সারা বেলা কাটিয়ে দিন হাওড়ের হিজল-কড়চ গাছের ছায়ায়, সন্ধ্যায় ফিরতি পথ ধরে রাতের গাড়ীতে চলে আসুন রাজধানীর পথে। খাবার খাবেন যেকোনো রেস্টুরেন্টে টাঙ্গুয়া হাওড়ের ছোট মাছের চরচড়ী আর ঘাঘর মাছের দো-পেঁয়াজা দিয়ে।

প্রিয় পাঠক, ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে।

আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।  

প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন- 


বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।