ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

সৈকতে কিটকট বসবে ৫ ফুট দূরত্বে, না মানলে ব্যবস্থা 

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২২
সৈকতে কিটকট বসবে ৫ ফুট দূরত্বে, না মানলে ব্যবস্থা 

কক্সবাজার: বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি পর্যটক হয়রানি রোধে সম্প্রতি নানা উদ্যোগ নিয়েছে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ। পাশাপাশি সৈকতে শৃঙ্খলা  ফেরানোর চেষ্টাও চলছে।

 

দেখা গেছে, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি কিটকট (চেয়ার) সৈকতের সৌন্দর্য আড়াল করে রেখেছে। এসব নানা বিষয় নিয়ে বাংলানিউজের মুখোমুখি হয়েছেন, ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সুনীল বড়ুয়া।

বাংলানিউজ-সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটক হয়রানি রোধে এবং সমুদ্র সৈকতকে পর্যটকবান্ধব করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের ইতিবাচক নানা উদ্যোগ চোখে পড়ছে। কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আপনাদের এসব উদ্যোগ? 

মো. রেজাউল করিম-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের পর্যটন খাতকে শক্তিশালী করতে ও অর্থনীতিতে আরো বেশি অবদান রাখার জন্য পর্যটন খাতকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ থেকেই মূলত ট্যুরিস্ট পুলিশের পথচলা।  পর্যটনকে আকর্ষণীয় ও কার্যকর করার জন্য পর্যটন এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই মূলত ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন সমুদ্র সৈকতসহ সকল পর্যটন এলাকায় নিরাপত্তাসহ শৃঙ্খলা আনতে নিরলস কাজ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক দিন হয়ে গেল তেমন কোনো পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি। অনেকগুলো সংস্থা এই বিচের সঙ্গে জড়িত। কেউ এগিয়ে আসেনি। ব্যবসায়ীরাও তাদের স্বার্থের বাইরে চিন্তা করছেন না। তাই এবার ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের সবার সহযোগিতা নিয়ে কিছু কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কঠোর হাতে আইন প্রয়োগের ফলে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনও হয়েছে। সামনে আরো বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে যার ফলে পর্যটন নগরীতে আরো পরিবর্তন দেখা যাবে।

বাংলানিউজ- সমুদ্র সৈকতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কিটকটগুলোকে শৃঙ্খলায় আনা জরুরি। আমরা দেখতে পাচ্ছি,বর্তমানে  জায়গার তুলনায় অনেক বেশি কিটকট সৈকতে বসানো হয়েছে। যে কারণে একটু দূরে দাঁড়ালে কিটকটের জন্য সমুদ্র দেখা যায় না। এ বিষয়টি সমাধানে কী ভাবছেন?

রেজাউল করিম-কিটকটের বিষয়ে আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিটিং করেছি, কিটকটের অনুমোদন দেয় বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির পক্ষে জেলা প্রশাসক। আমরা বিশ্লেষণ করে দেখেছি, কিছু পয়েন্টে জায়গার তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক কিটকটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। লাইসেন্সের শর্ত মোতাবেক পাশাপাশি দুটি কিটকটের মাঝে দূরত্ব রাখতে হবে ৫ ফুট। কিন্তু এই দূরত্ব কোনো ব্যবসায়ীই মানেন না। আমরা বিচে সরেজমিনে মেপে ব্যবসায়ীদের দেখিয়ে দিয়েছি এবং তাদের বলা হয়েছে সেভাবেই কিটকটগুলো বসাতে হবে। এরপরও না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 লাবণী পয়েন্ট হতে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত মেপে, বিচে প্রবেশের পর্যাপ্ত জায়গা রেখে আমরা দেখব কতটি কিটকট বসানো যায়। অতিরিক্ত কিটকট সরিয়ে নেওয়া হবে এবং তাদের লাইসেন্স বাতিলের জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হবে।

বাংলানিউজ- সৈকতে যেকোনো বিষয়ে শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্ব আগে বর্তায় বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি বা জেলা প্রশাসনের ওপর। তাদের সহযোগিতা কতটা পাচ্ছেন

মো. রেজাউল করিম-কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব মূলত বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির। বিচ কেন্দ্রিক যত সেবা যেমন ফটোগ্রাফার, বিচ বাইক, ওয়াটার বাইক, কিটকট চেয়ার, দোকান, টিউব, লকার এসব কিছুরই লাইসেন্স দেয় জেলা প্রশাসন। এসকল লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে বা রিনিউ করার ব্যাপারে আজ পর্যন্ত আমরা দেখলাম না বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির কোনো সদস্যের মতামত নিতে। প্রতিবছর এসব সেবার লাইসেন্স রিনিউ করে কোটি কোটি টাকা আয় হচ্ছে। কিন্তু এই টাকা কোথায় যায়, বিচের বা ট্যুরিজমের কী উন্নয়ন হয় আমরা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য হিসেবে কিছুই জানি না। সভায় এ বিষয়ে প্রশ্ন করলেও  কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক স্বচ্ছতা বা এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ করলে আসলে কক্সবাজারের পর্যটনের কোনো উন্নয়ন সম্ভব বলে আমরা মনে করি না। পর্যটনের উন্নয়নের জন্য  আমাদের কাছে কোনো বাজেট নেই। আবার  বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটিও আমাদের সাপোর্ট দেয় না। তাই আমরা ট্যুরিস্ট পুলিশ আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে থেকে বিচকে নিরাপদ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন যারা বিচে ভ্রমণে আসেন তারা সেই পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন।

বাংলানিউজ-মূলত পর্যটন শিল্পের প্রসারে সমুদ্র সৈকতের  কোন কোন সাইটে শৃঙ্খলা ফেরানো জরুরি বলে আপনি মনে করছেন?

রেজাউল করিম-পর্যটন শিল্পের বিকাশে দরকার বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ। সমুদ্র সৈকতের শৃঙ্খলা ফেরাতে সবচেয়ে বেশি জরুরি সমুদ্রকে শাসন না করা, প্রকৃতির নিয়মে ভাঙবে, প্রকৃতির নিয়মেই আবার গড়বে। বিচটাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, কিটকট চেয়ার সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা, বিচের মধ্যে যত দোকান পাট আছে তা সরিয়ে ফেলে বিচের পাশে সুন্দর ইকো ফ্রেন্ডলি দোকান করে দেওয়া, ফটোগ্রাফারের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা এবং প্রকৃত যারা ফটোগ্রাফারের কাজ জানে ও অভিজ্ঞতা আছে তাদের লাইসেন্স দেওয়া। এছাড়া বিচ বাইক, ওয়াটার বাইকের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা করে দেওয়া, সারারাত পর্যাপ্ত লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা, সবচেয়ে ভালো হয় নির্দিষ্ট কিছু প্রবেশপথ করে বাকি জায়গাগুলো ইকো ফ্রেন্ডলি দৃষ্টি নন্দন বাউন্ডারি ওয়াল করে দেওয়া।
বাংলানিউজ- আশা করি এমন উদ্যোগ চলমান থাকবে।  সময় দেওয়া জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

মো. রেজাউল করিম- আমরা সৈকতকে পর্যটকেদের মনের মতো করে সাজাতে চাই। আমাদের ইতিবাচক পরিবর্তনের এ যাত্রায় অপনাদের সহযোগিতা চাই। আশা করি পাশে থাকবেন।  বাংলানিউজ এবং আপনাকেও ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২২
এসবি/এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।