ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

পৃথিবীর ভূতুড়ে কিছু স্থান! যেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০২১
পৃথিবীর ভূতুড়ে কিছু স্থান! যেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ পৃথিবীর ভূতুড়ে কিছু স্থান! যেখানে প্রবেশ নিষিদ্ধ

ভ্রমণ করতে কে না ভালোবাসে! আমরা সবাই ঘুরতে পছন্দ করি। সুন্দর স্থানের সৌন্দর্য উপভোগ করতে সবাই চায়! এ কারণেই পর্যটকরা সবসময় নতুন নতুন  স্থানে বেড়াতে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকেন।

পর্যটকদের মধ্যে অনেকেই থাকেন যাদের রহস্যময় ও ভয়ঙ্কর স্থানে যাওয়ার একটু বাড়তি আগ্রহ থাকে।

প্রথম শুনে থাকলে হয়তো অবাক হবেন যে- বিশ্বের বেশ কিছু নিষিদ্ধ স্থান রয়েছে, যেখানে পর্যটকদের যাওয়ার অনুমতি নেই। অনেকেই সেসব স্থানকে ভৌতিক বা রহস্যময় হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

আসলে কী আছে সেসব স্থানে? ভূত বা অদৃশ্য আত্মা নেই তো?

আসুন জেনে নেই স্থানগুলো সম্পর্কে-

 

লাসকক্স গুহা, ফ্রান্স

লাসকক্স গুহাতেও জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। এ গুহাটি ফ্রান্সে অবস্থিত। তবে স্থানটি ভূতুড়ে নয়। ওই গুহার মধ্যে আদিম মানুষের আঁকা দেওয়াল চিত্র রয়েছে। সেগুলো যাতে নষ্ট না হয়, এ কারণেই প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেখানে।

এ গুহার গায়ে আদিমানবদের আঁকা প্রায় ১৭ হাজার বছরের পুরোনো ছবি আবিষ্কৃত হয় ১৯৪০ সালে। যদিও প্রথম দিকে পর্যটকদের গুহায় প্রবেশের অনুমতি মিললেও এখন মিলছে না। কারণ, অতিরিক্ত লোক প্রবেশের কারণে গুহার ভেতরে দূষণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে দেওয়ালের প্রায় ৬০০ প্রাচীন ছবি। অবশেষে ১৯৬৭ সাল থেকে গুহায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করে ফ্রান্স সরকার। গুহাটি প্রায় ৫ দশক ধরে বন্ধ রয়েছে।

 

নর্থ ব্রাদার আইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র

নিউইয়র্কে প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটকরা ঘুরতে আসেন। সেখানকার প্রতিটি দর্শনীয় স্থানই পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। তবে সেখানকার নর্থ ব্রাদার আইল্যান্ডে প্রবেশ নিষিদ্ধ।

নর্থ ব্রাদার আইল্যান্ড ছোট্ট একটি দ্বীপ এলাকা। পুরো এলাকাটি আজ পরিত্যক্ত।

জানা যায়, সেখানকার সব ঘর-বাড়ি পরিত্যক্ত হওয়ায় পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ সেখানে। যেকোনো সময় সেগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে। এ কারণেই এ দ্বীপে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ।

ইতিহাস মতে, এক সময় নর্থ ব্রাদার আইল্যান্ডেই গড়ে ওঠে কোয়ারেন্টাইন হাসপাতাল। ১৬১৪ সালে এক সংক্রমণ রোগ ছড়িয়ে পরে এ দ্বীপে। এ আইল্যান্ডের অতীত মৃত্যু এ রোগের সঙ্গে জড়িত। ১৮৮০ সালে এবং পরে ১৯৪০ সালে এ অঞ্চলে সংক্রমক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়লে আক্রান্ত ব্যক্তিদের এ দ্বীপে নির্বাসিত করা হয়। যারা মারা গিয়েছেন, তাদের সবাইকে এ দ্বীপেরই এক স্থানে মর্গ বানিয়ে সংরক্ষিত রাখা হয়েছিল।

এরপর ১৯৫১ সালে স্থানটি মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে চালু করা হয়। এরপর বিভিন্ন ভৌতিক ও রহস্যময় কারণে ১৯৬৩ সালে নর্থ ব্রাদার আইল্যান্ড পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়।

 

রাজার সমাধি

প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে চিনের ২১০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের রাজা কিন শি হুয়াং-এর সমাধিতেও। মৃত্যুর পর তার দেহের সঙ্গে ২০০০ সৈন্যের টেরাকোটার মূর্তিও কবর দেওয়া হয়েছিল। এ রাজার সমাধি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল খুবই গোপন এক স্থানে। ১৯৭৪ সালে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক হঠাৎই এ রহস্যময় টেরাকোটার সমাধির খোঁজ পান। রাজার শেষ চিহ্ন নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এ সমাধিতেও পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধ।
লোকমুখে প্রচলিত আছে- এ সমাধির নিচে পানিতে বাস করে মৎস্যকন্যারা।

 

প্যারিসের ক্যাটাকম্ব

খুবই বিষ্ময়কর একটি স্থান প্যারিসের ক্যাটাকম্ব। এখানে হাজার হাজার কঙ্কালের খুলি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে প্যারিসের ক্যাটাকম্বের দেওয়াল। এক সময় গণকবর দেওয়া হত এখানে। এ ক্যাটাকম্বের পাশেই ছিল এক সমাধিস্থান। মৃতদেহের ভারে সমাধিস্থানটি ধসে পড়লে এ ক্যাটাকম্বের খোঁজ পায় বিশ্ব। ‘প্লেস দি গ্রেভে’র দাঙ্গায় নিহতদের এখানে কবর দেওয়া হয়েছিল।
লোখমুখে প্রচলিত আছে- সপ্তদশ শতকে এ ক্যাটাকম্বের ভেতরে নিখোঁজ হয়ে যান এক ব্যক্তি। যার মৃতদেহ পাওয়া যায় ১১ বছর পর। অষ্টদশ শতকে রাজপরিবারের সদস্যদের হত্যা করে ফেলা হয়েছিল এখানে। রটনা রয়েছে, অতৃপ্ত আত্মাদের বাস ক্যাটাকম্বে। এ কারণে সেখানে প্রবেশ নিষেধ করেছে সরকার।

 

ভানগড়, রাজস্থান

অনেকেই রাজস্থানের ভানগড়ের নাম শুনেছেন। সেখানকার আলওয়ার জেলার আরাবল্লি পাহাড়ের সরিস্কায় রয়েছে ভানগড় কেল্লা। সপ্তদশ শতাব্দীতে রাজা মাধো সিং এ কেল্লা নির্মাণ করেন। এক সময় রাজপরিবারের সদস্যদের কোলাহলে মুখরিত থাকত কেল্লাটি। অথচ লোকমুখে শোনা যাচ্ছে- কেল্লাটি বর্তমানে ভূতুড়ে স্থান। এ কারণেই ভানগড় দুর্গে সন্ধ্যার পর প্রবেশ নিষেধ। রাতে এ দুর্গে কেউ প্রবেশ করলে প্রাণ নিয়ে আর বাইরে বের হতে পারেন না।

 

পার্কি বিচ

ভূত আর ভৌতিক কাহিনীর জন্য বিখ্যাত পার্কি বিচ। প্রায় ১৫ কিলোমিটার লম্বা, ৩০০-৩৫০ ফুট চওড়া এবং ২০ কিলোমিটার ঝাউবনযুক্ত এ সৈকতটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। কিন্তু ভৌতিক স্থানের তালিকায় একে সবার ওপরে রাখা হয়।

সুন্দরে ঘেরা এ সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে প্রচলন আছে ভৌতিক কাহিনীর। সন্ধ্যার পর এ স্থানের থেকে ভেসে আসে অদ্ভুত পদশব্দ, চিৎকার ও ভূতুড়ে আওয়াজ, যা যে কারো মনে ভয় ধরিয়ে দিতে পারে। মনে হয় শব্দগুলো দূর থেকে ভেসে আসছে, আবার মনে হয় যেন পানির ভেতর থেকে আসছে। মাঝে মধ্যে মনে হয় পার্শ্ববর্তী বন থেকে আসছে। আর এই শব্দগুলো যেনো কৌতূহলী মানুষকে পানিতে টেনে নিয়ে যেতে চায়।

সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের অনেকে জানিয়েছেন, তারা মাছ ধরতে গভীর সাগরে গেলে এমন অনেক লোককে দেখা যায়, যাদের আগেই মৃত্যু হয়েছে।

তাদের ধারণা, সাগরে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের আত্মা ঘোরাঘুরি করে সেখানে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০২১
জেডএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।