ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

খাগড়াছড়িতে সন্ধান মিললো ‘দেবতা গুহার’

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২০
খাগড়াছড়িতে সন্ধান মিললো ‘দেবতা গুহার’ দেবতা গুহা। ছবি: বাংলানিউজ

খাগড়াছড়ি: সবুজ বনে ঘেরা পাহাড় যেন এক বিষ্ময়ের নাম। সব সৌন্দর্য নিয়ে যেন চুপটি করে বসে আছে। একটু যখন ওই সৌন্দর্যে ক্লান্তি আসে তখনি যেন নিজের বুকে লুকিয়ে রাখা নতুন অবাক করা কোনো সৌন্দর্য আলোর মুখে ছেড়ে দেয় পাহাড়। আর সেই সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা।

বলা যেতে পারে এবারও তেমনটিই ঘটেছে। খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বুনো প্রকৃতির মাঝে সন্ধান মিলেছে নতুন আরও একটি গুহার।

স্থানীয়দের ভাষায় এটি ‘দেবতা গুহা’। অনেকে আবার ‘ভুতাছড়া’ গুহা বলে থাকে। আর গুহা দেখতে গেলে বাড়তি পাওনা হবে নতুন দু’টি ঝরনা!

এতদিন খাগড়াছড়িতে আলুটিলা গুহা ছিল। মাসখানেক আগে দীঘিনালার একই ইউনিয়নে সন্ধান পাওয়া গেছে ‘তাবাক খ’ গুহার। সর্বশেষ সন্ধান মিললো দেবতা গুহার। তবে এই গুহার সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য অপর দু’টি গুহার চেয়ে বেশি। দেবতা গুহা।  ছবি: বাংলানিউজপ্রায় ২৫০ ফিট দৈর্ঘ্যের দেবতা গুহার প্রথম ৬০ ফিট ওপরে পাথুরে ছাদ রয়েছে। ছাদের শেষ প্রান্ত থেকে গুহার বাকি ১৬০ ফিট শুধু দু’দিকে রয়েছে প্রায় ২৫ ফিট উচ্চতার লম্বা দেওয়াল। অনেকটা পাহাড়ের খাদে এ গুহার অবস্থান হওয়ার কারণে বর্ষায় গুহার ভেতরে পানি প্রবাহমান থাকে।

স্থানীয়দের মতে, পাহাড়ি ঢলে গুহাটি তৈরি হয়েছে।

খাগড়াছড়ির অন্যতম আলুটিলা গুহায় মশাল নিয়ে যেতে হলেও ‘দেবতা গুহায়’ মোবাইল ফোনের আলোয় যথেষ্ট। গুহাটি সরু হওয়ায় মুখের দিকের আলো গুহার শেষ প্রান্ত থেকে দেখা যায়। ছাদ ও দেওয়াল আঁকড়ে বেয়ে গেছে বুনো লতা। পাহাড় বেয়ে গুহার ভেতরের দেওয়ালজুড়ে পানির আবছা আস্তরণ তৈরি হয়েছে। ছুঁলেই ভিজে যায় হাত। গুহা থেকে বের হওয়ার পর দূর থেকে বাকি অংশ দেখতে অনেকটা বাংকারের মত। যা সত্যিই আপনাকে মুগ্ধ করে তুলবে। দেবতা গুহা।  ছবি: বাংলানিউজএদিকে গুহার পাশেই আধা কিলোমিটার দূরে রয়েছে ছোট একটি ঝরনা। আর গুহার দক্ষিণে তিন কিলোমিটার দূরে রয়েছে বড় আকৃতির আরেকটি ঝরনা। যেটি স্থানীয়দের কাছে ‘আলং’ ঝরনা নামে পরিচিত।  

খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালার এক নম্বর মেরুং ইউনিয়নের চোংড়াছড়ি ১৬ নম্বর সড়কের পশ্চিম দিক থেকে নোয়ারাম কার্বারী পাড়া পর্যন্ত প্রথম তিন কিলোমিটার কিছুটা ইট বিছানো পথ হলেও বাকিটা মাটির রাস্তা। মূলত এই পথটুকুই যানবাহন চলাচলের কথা ছিল। শুষ্ক মৌসুমে কোনোভাবে মোটরসাইকেল নিয়ে যেতে পারলেও বর্ষায় এই পথে যান চলাচল কঠিন। যদিও নোয়ারাম পাড়া পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের জন্য মাটি কাটা হয়েছে। দেবতা গুহা।  ছবি: বাংলানিউজতিন কিলোমিটার পথ শেষ করলে পৌঁছে যাবেন নোয়ারাম কার্বারী পাড়ায়। সেখানে ‘ভুতাছড়া’ নোয়ারাম কার্বারী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সোজা রাস্তা দিয়ে শুরু করতে হবে হাঁটা। প্রায় তিন কিলোমিটার অর্থাৎ দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় পাহাড়ি পথ ধরে আপনাকে হাঁটতে হবে। আঁকা-বাঁকা পাহাড়িপথ, স্থানীয়দের সহজ-সরল জীবনযাপন, প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে দেখতে পৌঁছে যাবেন দেবতা গুহায়। তবে নোয়ারাম কার্বারী পাড়া থেকে একজন অভিজ্ঞ গাইড নিলে সবচেয়ে উত্তম। না হয় বুনো প্রকৃতির ভেতর পথ ভুল করতে পারেন।

অপরদিকে গুহার সামনের হাঁটাপথটি মিলিত হয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মধুপুরে। সে পথটি যান চলাচলের উপযোগী করা গেলে পর্যটকরা সহজে গুহা ও ঝরনা দেখে দীঘিনালা হয়ে সাজেক কিংবা খাগড়াছড়ি আসতে পারবেন।

স্থানীয় সাংবাদিক জাকির হোসেন বলেন, অন্য গুহাতে গা ছমছম করা একটা অনুভূতি থাকলেও ‘দেবতা গুহা’ পর্যটকদের প্রশান্তি দেবে। গুহার ভেতরের চেয়ে বাইরের ছাদবিহীন বাকি অংশ দেখে ইচ্ছে করবে সেখানে বসে সময় পার করতে। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকদের জন্য এটি অনন্য একটি পর্যটনী স্পট হতে পারে। দেবতা গুহা।  ছবি: বাংলানিউজস্থানীয় কার্বারী (পাড়া প্রধান) নোয়ারাম কার্বারী বলেন, এটি পর্যটকদের জন্য একটি দর্শনীয় স্পট হতে পারে। এজন্য মেরুং-চোংড়াছড়ি মুখ থেকে সড়কটি নির্মাণ করা খুবই প্রয়োজন। যদি সড়কটি জেলা সদরের মধুপুরের সঙ্গে সংযোগ ঘটানো যায়। পর্যটকসহ স্থানীয়দের যাতায়াত সহজ হবে।

স্থানীয়দের প্রত্যাশা প্রাণ-প্রকৃতি ঠিক রেখে পর্যটকরা ঘুরে দেখবেন স্পটগুলো।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২০
এডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।