ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

সেতুপাড়ে বিনোদনকেন্দ্র, ওমান-দুবাই থেকে আসছে পাথর

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
সেতুপাড়ে বিনোদনকেন্দ্র, ওমান-দুবাই থেকে আসছে পাথর

পদ্মাসেতু প্রকল্প এলাকা থেকে ফিরে (মাওয়া ও জাজিরা): নদীর পাড় সব সময় বিনোদনপ্রেমীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। বিকেল হলেই বিনোদনপ্রেমীদের ভিড় লেগে যায়। কেউ আসেন সময় কাটাতে, কেউ পরিবার-পরিজন নিয়ে আবার কেউবা আসেন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে। এসব কথা মাথায় রেখে এবার পদ্মা বহুমুখী সেতু পাড়ে গড়ে উঠছে পরিকল্পিত বিনোদন কেন্দ্র। শুধু পদ্মার পাড়ে বেড়াতে নয় সরকারি অর্থায়নে নির্মিত দেশের মেগা প্রকল্প দেখতে সারা দেশের মানুষ ভিড় করবে পদ্মাপাড়ে! এসব চিন্তা থেকেই শরিয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাউডোবা ইউনিয়নে বিনোদন কেন্দ্রটি নির্মিত হবে।

বিনোদনকেন্দ্রের জন্য পদ্মাসেতুর ৪২ নম্বর পিলারের কাছে ৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে অধিগ্রহণ করা হবে আরও জমি।

পদ্মাপাড়ের এই স্থানটি একদিকে যেমন পদ্মাসেতুকে রক্ষা করবে স্রোত থেকে অন্যদিকে বিনোদনপ্রেমীদের কাছে টানতেও কাজে লাগানো হবে। নদীশাসন কাজের আওতায় করা হচ্ছে এসব কাজ।

নদীশাসন এবং বিনোদনকেন্দ্র নির্মাণে ব্যবহার করা হবে ওমান ও দুবাইয়ের পাথর। অ্যামিউজমেন্ট পার্ক, এন্টারটেইনমেন্ট পার্ক, কালচারাল ভিলেজ, মিউজিয়াম ও রিসোর্টও থাকবে সেখানে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদাউস বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের সব দর্শনীয় স্থানের কাছেই রিসোর্ট থাকে। সেই হিসেবে পদ্মাসেতু আমাদের কাছে সব থেকে বড় স্থান। তাই সেতুপাড়ে রিসোর্ট ও বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।

নদীশাসনের পাশাপাশি চলছে বিনোদকেন্দ্র গড়ে তোলার কাজও।  ছবি: ডি এইচ বাদল

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ৪২ নম্বর পিলারের পাশে ফেলা হচ্ছে বড় বড় পাথর। মূলত এটা নদীশাসন কাজেরই একটা অংশ। মূল সেতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে নদীশাসন কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। উভয়পাড়ে ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলে নদীশাসন কাজ চলমান। মূল সেতুকে উত্তাল পদ্মার ঢেউ থেকে নিরাপদে রাখা নদীশাসন কাজের অন্যতম লক্ষ্য। পদ্মা সেতুর মূল কাজ পাঁচ ভাগে বিভক্ত। এগুলো হচ্ছে- মূল সেতু, নদীশাসন, পুনর্বাসনকেন্দ্র নির্মাণ, দুই তীরে দুটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও নির্মাণ অবকাঠামো তৈরি।

নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ৬৪ শতাংশ। ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা ব্যয়ে নদীশাসনের কাজ বাস্তবায়ন করছে চীনের সিনো-হাইড্রো করপোরেশন লিমিটেড। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে নদীশাসন কাজ শুরু হয়। এরমধ্যে ৪ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। মোট ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে ইতোমধেই ৬ কিলোমিটার পাড় বাঁধা হয়ে গেছে। নদীশাসন কাজের আর কোনো চ্যালেঞ্জ নেই। পদ্মাসেতুর মূল কাজের সঙ্গে নদীশাসন কাজও সম্পন্ন হবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

নদীশাসন কাজ জাজিরা অংশে ১১ কিলোমিটার ও মাওয়া অংশে হচ্ছে দুই কিলোমিটার। জাজিরা অংশের মাটিতে পানি পড়লেই গলে যায় ফলে এই অংশে নদীশাসনের কাজ বেশি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে মাওয়া অংশে মাটির গুণাগুণ ভালো। ওজন ও গুণাগুণের ভিত্তিতে ছয় টাইপের পাথর করা হচ্ছে। ২৫ থেকে ৪০, ৩০ থেকে ৫০, ৫০ থেকে ৭৫, ১৫০ থেকে ২৭৫, ৩৫০ থেকে ৭০০ ও ৬০০ থেকে ১০০০ কেজি ওজনের পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে নাদীশাসনে।

পদ্মাসেতুর জন্য ৬ লাখ মেট্রিক টন পাথর প্রয়োজন। ইতোমধেই ৬০ শতাংশ পাথর প্রকল্প এলাকায় চলে এসেছে। বাকি ৪০ শতাংশ পাথর দুবাই ও ওমান থেকে আসবে। প্রথমে পানিপথে দুবাই ও ওমান থেকে মাদারভেসেলে পাথর চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে, এরপরে লাইটার জাহাজে আনা হয় প্রকল্প এলাকায়।

পাথর আনা হচ্ছে ওমান ও দুবাই থেকে ।  ছবি: ডি এইচ বাদল

নদীশাসন কাজে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। মূল সেতুর মতোই নদীশাসন কাজের চ্যালেঞ্জ। পদ্মাসেতু রক্ষার্থে পাড় বাঁধাই করার কাজও চ্যালেঞ্জিং। পদ্মা নদীর ভেতর থেকে ড্রেজিং করে মাটি ফেলতে হয়। এরপরে ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলতে হয়। ধীরে ধীরে নদীর নিচ থেকে বাঁধতে হয় তীর। অনেক সময় মুহূর্তের মধ্যে পদ্মার উত্তাল ঢেউ এলোমেলো করে দেয় নদীশাসন কাজ।

নদীশাসন কাজের তদারকি করছেন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (নদীশাসন) আবু জাহিদ মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, মূল সেতুর মতো নদীশাসন কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। মূল সেতুর কাজ যেদিন সম্পন্ন হবে একই সময়ে নদীশাসন কাজ সম্পন্ন হবে। নদীশাসন কাজ অন্যতম চ্যালেঞ্জিং। দুই পাড় বাঁধার আগে পানির নিচে প্রটেকশনের কাজ করতে হয়। এই প্রটেকশন কাজও এগিয়ে গেছে। পদ্মার খরস্রোত চোখের পলকে সব কিছু এলোমেলো করে দেয়। মাটির কিছু গুণাগুণের জন্য অনেক সময় গর্ত সৃষ্টি হয়। ফলে জিও ব্যাগ ও ব্লক ভাসিয়ে নিয়ে যায় পদ্মা। তবে সব চ্যালেঞ্জিং কাজের অবসান হয়েছে।

‘নদীপাড়ে বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এই জন্য জাজিরায় ৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও জমি অধিগ্রহণ করা হবে। নদীশাসন কাজে পাথরের কোনো সংকট হবে না। দুবাই ও ওমান থেকে পাথর আসছে। পাথরের মানও অনেক ভালো। ’

নদীর দুই তীরে প্রায় ১৩ কিলোমিটারজুড়ে নদীশাসন কাজ চলছে। প্রকল্প এলাকায় সংযোগ সড়ক, অফিস ভবন, ল্যাবরেটরি, মসজিদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ডুপ্লেক্স ভবনের মোটেল, ওভারহেড পানির ট্যাংক, বিদ্যুতের সাবস্টেশন, গার্ডদের বাসস্থানসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে।

নদীশাসন কাজের মাধ্যমেই পদ্মার উত্তাল ঢেউ থেকে এসব অবকাঠামো নিরাপদে রাখা হবে। নদীশাসন কাজে বিভিন্ন সাইজের রক, স্টোন চিপস, বালি, সিমেন্ট ও অন্য সামগ্রী সাইট মোবিলাইজেশন প্রক্রিয়াধীন। নদীর পাড় বাঁধার জন্যই এসব আয়োজন। ফলে নদীশাসন কাজ শুধু পদ্মাসেতুর মূল অবকাঠামোই রক্ষা করবে না টানবে পযর্টকও।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
এমআইএস/এইচএডি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।