ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

সুন্দরের শীলন- সুশীলন

শুভ্রনীল সাগর, ফিচার এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
সুন্দরের শীলন- সুশীলন সুশীলন / ছবি: শুভ্রনীল সাগর

দেখতে দেখতে ২৫ বছর কেটে গেলো। স্মৃতি হাতড়ে পেছনে গেলে, দুই যুগ আগের একটি ছোট্ট উদ্যোগ আজ  বিশাল এক মহীরুহ, এক অনুপ্রেরণাদায়ী গল্প।

সুশীলন (মুন্সীগঞ্জ, সাতক্ষীরা) ঘুরে: দেখতে দেখতে ২৫ বছর কেটে গেলো। স্মৃতি হাতড়ে পেছনে গেলে, দুই যুগ আগের একটি ছোট্ট উদ্যোগ আজ  বিশাল এক মহীরুহ, এক অনুপ্রেরণাদায়ী গল্প।

১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস। সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বেনাদনা ও পানিয়া গ্রামের কয়েকজন তরুণ প্রথম সুশীলনের উদ্যোগ হাতে নেন। এরপর মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রমের প্রস্তুতি ও কর্মী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শুরু হয় পথযাত্রা।  

সুশীলনের কার্যক্রম

সেসময় কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন ছিলো সবদিক থেকে অনগ্রসর। সবচেয়ে পিছিয়ে এ জনপদকে কেন্দ্র সুশীলনের স্বাপ্নিকরা ব্রত নিলেন- তারা দেশের হয়ে উঠবেন। পিছিয়ে পড়া এ সমাজকে একটি জাগ্রত সমাজে রূপান্তরিত করবেন, যার মাধ্যমে ‘মানুষ মানুষ হয়ে উঠবে’।   

সংগঠনের মূল দর্শন ঠিক হলো- মানুষ অসীম সম্ভাবনার আঁধার; সেই সম্ভাবনার বিকাশ ঘটানো এবং মানুষের সেই অর্জন মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানো।

সুশীলনের কার্যক্রম

বেশ কয়েকটি মৌলিক নীতিমালা ও মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ উপযোগী সমাজ প্রতিষ্ঠা করার ভিশন নিয়ে সুশীলন এগিয়ে চললো। সঙ্গে থাকলো সুবিধাবঞ্চিত ও সমাজে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সুযোগ সৃষ্টি ও সক্ষমতা বিকাশের মিশন।

এসব নিয়েই এগিয়ে চললো সুশীলন। আজ পথযাত্রা ও অর্জনের একটি মাইলফলক অতিক্রম করেছে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছরের নভেম্বরে ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন করেছেন তারা।

সুশীলনের কার্যক্রম

দীর্ঘ এ পথচলায় সুশীলন কাজ করেছে- বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী বিশেষ করে উপকূল, নদী-তীরবর্তী, জলাভূমি ও পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে। পাশাপাশি জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, মানবাধিকার ও সুশাসন নিশ্চিতকরণ, স্থায়ীত্বশীল প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং জনসংগঠন ও নেতৃত্ব উন্নয়ন নিয়ে।

দীর্ঘ এ পথ পরিক্রমায় সুশীলন গড়ে তুলেছে আটটি জনসংগঠন। এগুলো হলো- স্বাধীকার (সালিস কমিটির নারী সদস্যদের নেটওয়ার্ক), সুসমাজ (নাগরিকদের সংগঠন), শুভশক্তি (যুবদের সংগঠন), শুভসকাল (দরিদ্র মানুষের সংগঠন), সুসময় (কৃষকদের সংগঠন), স্বউন্নয়ন (ওয়াটসান বিষয়ক সংগঠন), সুদিন (তৃণমূল পর্যায়ের সব স্তরের মানুষের সংগঠন) এবং সিআউজি (ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের অংশ নেওয়া ও স্বচ্ছতা আনার সংগঠন)।

সুশীলনের কার্যক্রম

সু অর্থ সুন্দর, শীলন অর্থ চর্চা অর্থাৎ সুন্দরের চর্চার এ কর্মযজ্ঞ এগিয়ে নিয়ে চলেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মোস্তফা নুরুজ্জামান।

পড়াশোনা শেষ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ছাত্রজীবন থেকে দেশের জন্য, দরিদ্র মানুষের জন্য কিছু করা যায় কিনা এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেন। একসময় মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে প্রভাবিত হয়ে গ্রামে ফিরে এসে মানুষের জন্য কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন সুশীলন।

সম্প্রতি সমাজ পরিবর্তনের অন্যতম এ স্বাপ্নিক সুশীলনের কর্মযজ্ঞ ঘুরিয়ে দেখালেন।  

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জে প্রায় ৮০ বিঘা জায়গার উপর সুশীলন গড়ে উঠেছে। রয়েছে পুকুর, সেরিকালচার, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, ডেইরি ফার্ম প্রভৃতি।

খুব কাছেই সুন্দরবন হওয়ায় অঞ্চলটি লবণাক্ত। এখানে ফসলের আবাদ করা কঠিন। এরপরও মিঠা পানি সরবরাহ করে আলু, কপি প্রভৃতির চাষ হয়।  

সুশীলনের কার্যক্রম

বর্তমানে সুশীলনে কাজ করছেন ৬২৮ জন কর্মী। এর মধ্যে নারী ১৯৭ জন ও পুরুষ ৪৩১ জন। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন ৫৮৭ জন। এর মধ্যে নারী ৫৮৫ জন এবং পুরুষ দুইজন।

দেশের সমাজসেবা অধিদফতর ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান থেকে নিবন্ধিত সুশীলনের অফিস রয়েছে ৪২টি।  

প্রতিষ্ঠান প্রধান মোস্তফা নুরুজ্জামান শোনালেন সুশীলনকে নিয়ে তার স্বপ্নের কথাও। মুন্সীগঞ্জ অঞ্চলে তিনি সুশীলন পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও কলেজ করতে চান। এ প্রতিষ্ঠানকে যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলাই তার একান্ত ইচ্ছা।

আরও যোগ করেন, আমার বহুদিনের ইচ্ছা একটি ওয়াটার মিউজিয়াম করা। লবণাক্ত অঞ্চল হওয়ায় এখানকার মানুষের পানির ভীষণ কষ্ট। ওয়াটার মিউজিয়াম করে তাদের পানির কষ্ট দূর করতে চাই।

আরও পড়ুন
** বাঘের খোঁজে কটকার টাইগার পয়েন্ট​
** সুশীলনের ব্যাঘ্রতট থেকে সুন্দরবনের হাতছানি
** সিরিয়াল-তামিল-চাইনিজ ছবির দখলে দুবলার চর
** একটু-আধটু কুমড়া-মুলায় দুবালার চর
** দুবলার চরের জেলেদের জীবনগাথা
** না দেখলেই নয় হাড়বাড়িয়া ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র!
**এইসব দিনরাত্রি রয়ে যাবে গাবখান-বলেশ্বরের বাঁকে
** বুড়িগঙ্গা-মেঘনা ছুঁয়ে পশুর নদীর ডাকে

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
এসএনএস
  

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।