ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পর্যটন

‘দেশের স্বার্থ সবার আগে’

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৬
‘দেশের স্বার্থ সবার আগে’

জেনেভা (সুইজারল্যান্ড) থেকে: আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতিতে অভিভূত আমাদের উন্নয়ন অংশীদার দেশগুলো।

দেশের স্বার্থ সবার আগে। তাই দেশের মানুষের কল্যাণেই নিবেদিত এ মিশন।

বলছিলেন, সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এম শামীম আহসান।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মিশন প্রধান হিসেবে এখানে যোগ দেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১৯৮৬ সালে যোগ দেওয়া পেশাদার কূটনীতিক শামীম আহসান ব্রাজিল, ইরান ও ব্রুনাইয়ে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

এর আগে দিল্লি ও জেনেভায় বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন তিনি।

মিশনের কার্যক্রম, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, উন্নত বিশ্ব থেকে দাবি আদায়ে বাংলাদেশের অবস্থান, অভিবাসী ইস্যুতে নিজ দপ্তরে বাংলানিউজের সঙ্গে মুখোমুখি হন তিনি। প্রথমেই শুরু করি মিশনের সাফল্যে খবর দিয়ে। দীর্ঘ কয়েক মাসের দর-কষাকষির পর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) মেধাস্বত্ব আইনের বাধ্যবাধকতা থেকে আরও ১৭ বছরের ছাড় পেয়েছে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) ওষুধশিল্প। এর ফলে বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জেনেরিক ওষুধ উৎপাদনের জন্য মেধাস্বত্ব আইন প্রযোজ্য হবে না। জেনেভায় মেধাস্বত্ব অধিকারের বাণিজ্য-বিষয়ক চুক্তি বা ট্রিপস কাউন্সিলের সভায় এ ছাড়ের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ফলে দেশের ওষুধ শিল্পের জন্য রচিত হয়েছে মাইলফলক।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা প্রতিষ্ঠার পর কোনো চুক্তির আওতায় এই প্রথম এতো দীর্ঘমেয়াদে কোনো ছাড়কে আমাদের মিশনের বড় কূটনৈতিক অর্জন বলা যায়।

যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওষুধশিল্পকে মেধাস্বত্ব আইনের বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিরোধিতা করে আসছিলো।

স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সমন্বয়ক হিসেবে বাংলাদেশ ছয় মাসের বেশি সময় ধরে এ ছাড় পেতে যুক্তরাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে এসেছে। শেষ পর্যন্ত এলডিসির দেশগুলোকে এ সুবিধা দিতে রাজি হলেও বাংলাদেশের এ সুবিধা পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের স্তরে পৌঁছেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের ওষুধশিল্প যথেষ্ট এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অনড় অবস্থানের কারণে বাংলাদেশসহ এলডিসি গ্রুপের সব দেশের ওষুধশিল্পের জন্য ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র।

এই যে কূটনৈতিক লড়াই করে দেশের স্বার্থ আদায়। এটাই চ্যালেঞ্জ আর লক্ষ্য এ মিশনের।

এই মিশনের সঙ্গে দূতাবাসগুলোর কাজের ব্যাপক ভিন্নতা রয়েছে। জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক রক্ষার জন্য স্থায়ী ব্যবস্থার অংশ হিসেবেই পরিচালিত হচ্ছে এই মিশন। আমাদের জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ করে জেনেভায় জাতিসংঘের ইউরোপীয় সদর দপ্তরের সঙ্গে সার্বিক সম্পর্ক রক্ষায় কাজ করছি। জেনেভায় জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাগুলোর সঙ্গে আমরা দর কষাকষি করছি।
এখানে থাকা ২৮টির মধ্যে ১৫টি সংস্থার সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হয় আমাদের। এর বাইরে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক রক্ষা করতেও ছুটতে হয় দেশটির রাজধানী বার্ন-এ।

সার্বক্ষণিক সম্পর্ক রাখতে হয় জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে। বিভিন্ন কমিটির সদস্য হওয়ায় কাজও বেড়ে গেছে আমাদের।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিসহ অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের দফতর ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা বক্তব্য বিবৃতি দেয়। সেটা কখনো কখনো সরকারের জন্যও বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এসব বিষয়ে মিশনের কৌশলের ধরনটি কি?

জবাবে এম শামীম আহসান বলেন,  এখানে আমাদের কাজ করতে হয় কূটনৈতিকভাবেই। পর্দার সামনে ও আড়ালে। যখন কোনো বিবৃতি প্রকাশ হয়, আমাদের স্বার্থের বাইরে গেলে তাদের বক্তব্যকে আমরা জোরালোভাবে খণ্ডন করি। তখন সেই পরিস্থিতিতেই তাৎক্ষণিক জবাব দেই আমরা। পরে সেই আঙ্গিক তুলে ধরে পরামর্শের মাধ্যমে প্রকৃত পরিস্থিতি অবহিত করে ভ্রান্তি দূর করতে হয়।

জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কোনো স্বীকৃতি পেলে যেমন উচ্ছ্বাস করি, আবার স্বার্থের বাইরে গেলে আমরাই অভিযোগ করি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর! বিষয়গুলো তখন মিশন প্রধান হিসেবে সামাল দেন কি করে?

জবাবে তিনি বলেন, সব কিছুর সঙ্গেই পরম্পরা আছে। তারা তাদের পক্ষ থেকে বিষয়টা দেখে। কিন্তু প্রেক্ষিতটা তাদের কাছে স্পষ্ট নয়। যেমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এগুলো সম্পর্কে যৌক্তিক ব্যাখ্যা না দিলে বিভ্রান্তির অবকাশ থাকে। তারা যা বলে, তাদের দৃষ্টিকোণ আর বিধি বিধান থেকে। আমরা আমাদের জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা, প্রেক্ষিত, দেশের আইন অনুযায়ী আমাদের অবস্থানকে স্পষ্ট করি।

তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তি খাত বিশেষ করে ডিজিটাল বাংলাদেশের বিস্ময়কর অগ্রগতি, কমিউনিটি ক্লিনিক অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছে এখানে। ইউরোপ থেকে আশি হাজার অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তৎপরতা দেখিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

অবৈধ অভিবাসন বন্ধে সরকারের ওপর প্রচ্ছন্ন চাপ ও তৈরি করতে তাদের প্রতিনিধিদল সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছে। বিষয়টি নিয়ে কি ভাবছে মিশন?

আন্তজার্তিক অভিবাসী সংস্থার মাধ্যমে অভিবাসন ও উন্নয়নের বিষয়টি আমরা তুলে ধরছি। বিশ্বের ৯০টি দেশে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠী সংশ্লিষ্ট দেশের উন্নয়ন, বিনিয়োগে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। তাই অভিবাসী বিষয়ক সমস্যা ও তার সমাধান, তাদের প্রতি মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে দেশগুলোকে সচেতন করছি আমরা। তবে দেশগুলোর তো নিজস্ব সার্বভৌমত্বের বিষয় আছে। তাই তাড়না থেকে সিরিয়ার পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার কথা ভেবে যারা অবৈধভাবে অভিবাসী হচ্ছেন তারা ভুল করছেন। বিষয়টি নিয়ে সর্তক করতে জাতীয় পর্যায়ে নিরন্তরভাবে বলা হচ্ছে। তারপরও জীবনের বিরাট ঝুঁকি নিয়ে যারা অভিবাসী হচ্ছেন, তারা যে সতর্কতাগুলো জানেন না এটার ভাববার বিশ্বাসযোগ্য কোনো কারণ নেই।

এ বিষয়ে নিজেদের দায়িত্ব নিজেদের নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করলে দায়টাও নিজের নিতে হবে, যোগ করেন জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এম শামীম আহসান।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১৬
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।