ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

সাদা পাথরের রাজ্য, জল গড়িয়ে পড়ছে তৃষ্ণার্ত ধলাইয়ের মুখে

শফিকুল ইসলাম খোকন, কোম্পানীগঞ্জ থেকে:  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২৪
সাদা পাথরের রাজ্য, জল গড়িয়ে পড়ছে তৃষ্ণার্ত ধলাইয়ের মুখে সাদা পাথরের গা ছুঁয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে ঝরনার জল। যেখানে জলকেলিতে মগ্ন পর্যটকেরা।

ঘোরাঘুরি কে না পছন্দ করে; ভ্রমণের কথা ভাবনায় এলেই একটা গভীর সুখ অনুভব হয়। আর সেই ভ্রমণ যদি হয় সাদা পাথরের দেশে, তাহলে তো কথাই নেই।

সেই সাদা পাথরের সন্ধানে শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল নয়টায় রাতারগুল বন থেকে রওয়ানা হলাম নিজস্ব গাড়িতে। সফরসঙ্গী পরিবেশকর্মীরা সাদা পাথরের গল্প শোনালেন, তার পর থেকেই সবার মাঝে এক নতুন অনুভূতি জাগে।

ভ্রমণ যে ক্লান্তি ও গ্লানিতে ভরে ওঠা মনকে আবারও কোনো এক জাদুকাঠির ছোঁয়ায় সতেজ করে তোলে তার প্রমাণ পেলাম সফরসঙ্গী পরিবেশকর্মীদের কাছ থেকে।  

পর্যটন স্পটটিতে পৌঁছে বুঝলাম, মনকে সতেজ করে তুলতে চাইলে সিলেটের ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর থেকে ঘুরে আসতেই হবে। সবুজে মোড়ানো মেঘালয় পাহাড় ঘিরে রেখেছে মেঘ, পাদদেশ ছুঁয়ে বহমান স্বচ্ছ শীতল জলরাশি। উঁচু-নিচু ঢেউ এসে খেলছে ধলাই নদের বুকে।  

ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরের দেশে একদিন

ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, উঁচু পাহাড়। এপারে বাংলাদেশের সাদা পাথরের রাজ্য। উঁচু পাহাড় দেখে আনন্দ যেন থামছেই না, পাঁচ একর জমিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এই সাদা পাথর। ছোট, মাঝারি, বড় আকৃতির পাথর। সাদার মধ্যে নিকষকালো পাথরও আছে। কোনোটি খয়েরি রঙের। যেন এলাকাজুড়ে পাথরের বিছানা।  

পাথর মাড়িয়ে ঝরনার আবাহন। কোথাও হাঁটু সমান, আবার কোথাও কোমর পানি। কোথাও তারও অনেক বেশি। তবে শীত মৌসুমে পানি কম। পাথরের ওপর দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে তৃষ্ণার্ত ধলাইয়ের মুখে।  

কোথাও কোথাও পানির রং খয়েরি, আবার পাশেই পাহাড় থেকে ঝরনার পানিতে চেহারা দেখা যায়। শীতেও পর্যটকদের ওই ঝরনার পানিতে নেমে কেউ গোসল করছেন আবার কেউ কোমর সমান নেমে ছবি তুলছেন। জীবনকে খানিকটা চাঙা করতে অনেকেই সাঁতার কাটছেন ধলাইয়ের শীতল জলরাশিতে। এ এক অসাধারণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা! কী ঠান্ডা পানি, কী স্বচ্ছ! দেখে মনে হবে, ফিল্টারিং করা! 

নদের পানিতে নামতে হলে আপনার জিনিসপত্র রাখার জন্য এখানে সুব্যবস্থা রয়েছে। সামান্য খরচে জিনিসপত্র নিরাপদে রেখে নিতে পারেন এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।

পাহাড়-পাথর-জল, পাহাড়ের ওপরে কালো আর সাদা মেঘ, নিচে সাদা পাথর আর ঝরনার পানি মাঝে মাঝে রূপ পরিবর্তন করে একসঙ্গে এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেখা পাওয়া গেছে শুধু সিলেটের বিছনাকান্দিতে। সেখানে যেন পাথরের সুবিশাল এক ‘বিছানা’ (শয্যা) পাতানো।  

এ মৌসুমের প্রথম পাহাড়ি ঢলের সুবাদে ঠিক সে রকম আরেক ‘বিছানা’ তৈরি হয়েছে। তবে এখানে এসে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ সাদা পাথরের বিছানা এলোমেলো হওয়াতে সতর্কতার সঙ্গে হাঁটাচলা করতে হবে, না হয় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।

‘সাদা পাথর’ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির পাশের একটি এলাকা। সীমান্তের শূন্য রেখার কাছে অবস্থান।  এলাকাটি ‘সাদা পাথর’ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি।

যেভাবে যাবেন: 

সড়ক পথ: সিলেট শহরের আম্বরখানা থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ভোলাগঞ্জ বাজার। ভাড়া জনপ্রতি ১৬০ থেকে ২০০ টাকা। চাইলে লেগুনা কিংবা অন্য অন্যান্য গাড়ি ভাড়া করেও যাওয়া যায়। ভোলাগঞ্জ বাজারের ফেরিঘাট থেকে নৌকা ভাড়া করতে হবে। ভাড়া যাওয়া-আসা মিলিয়ে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা।

নৌপথ: সিলেট শহর থেকে বাদাঘাট হয়ে উমাইরগাঁও। সেখান থেকে সরাসরি ভোলাগঞ্জের নৌকা ভাড়া করা যায়। রিজার্ভ ভাড়া ২৫০০ থেকে ২৮০০ টাকা। জনপ্রতি ভাড়া ১০০ টাকা করে। ১১২/১৫ জন হলেই ছেড়ে দেয় নৌকা।

সচেতনতা ও সতর্কতা:

সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে তা নষ্টের কারণ হওয়া ঠিক নয়। মনে রাখতে হবে যেখানে আনন্দ সেখানে বিপদও। পাথর থাকায় খুব সতর্কতার সঙ্গে হাঁটতে হবে। না হলে ঘটে যেতে পারে দুর্ঘটনা। পরিবেশ হুমকিতে পড়ে এমন কিছু অবশ্যই করা উচিত হবে না। পলিথিন বা প্লাস্টিকের বোতলসহ পরিবেশ বিপন্ন হয় তেমন কিছু মনের অজান্তেও ফেলে আসা ঠিক নয়। প্রকৃতিকে বেঁচে থাকতে দিতে হবে তার নিজের মতো করে।

পর্যটন স্থানটি ভারত সীমান্তবর্তী। তাই সীমান্তের কাছাকাছি না যাওয়াই ভালো। ঘুরে বেড়ানোর সময় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যদের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। আর ভুলেও গভীর পানিতে নামা যাবে না। তীব্র স্রোতের কবলে পড়লে সাঁতার জানা মানুষেরও বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে।

সাদা পাথরের দেশে লেখক

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২৪
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।