ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

দুই দিনে লাখো পর্যটক শরণখোলা রিভারভিউ ইকোপার্কে

এস.এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২৩
দুই দিনে লাখো পর্যটক শরণখোলা রিভারভিউ ইকোপার্কে

বাগেরহাট: ঈদের ছুটিতে লাখো দর্শনার্থীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বাগেরহাটের শরণখোলার বলেশ্বর নদীর তীরের ‘রিভারভিউ ইকোপার্ক’। একসঙ্গে নদী, নীল আকাশ ও প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে সেখানে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।

ঈদের দিন এবং ঈদের পরের দিন (২২ ও ২৩ এপ্রিল) সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উপচে পড়া ভিড় ছিল। পরিবার-পরিজন নিয়ে নির্মল পরিবেশে বিনামূল্যে সময় কাটাতে পেরে খুশি দর্শনার্থীরা।

রোববার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে শরণখোলা উপজেলা সদরের বলেশ্বর নদীর তীরের বড়ইতলা এলাকায় অবস্থিত রিনভারভিউ ইকোপার্কে গিয়ে দেখা যায় সেখানে তীল ধারণের জায়গা নেই। নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু-কিশোরে পরিপূর্ণ পার্ক এলাকা। শরণখোল উপজেলা প্রশাসনের দাবি দুই দিনে লাখেরও বেশি দর্শনার্থী এসেছে এই ইকো পার্কে। আগামী শনিবার (২৯ এপ্রিল) পর্যন্ত একইরকম ভিড় থাকবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

এদিকে দর্শনার্থীদের ঘিরে পার্ক এলাকায় থাকা ফুসকা, চানাচুরসহ বিভিন্ন খাদ্য বিক্রেতা ও স্পিডবোট-নৌকা চালকদের আয়ও বেড়েছে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি এলাকা থেকে ইকো পার্কে ঘুরতে আসা রাজু আহমেদ বলেন, অনেকদিন আগে শুনেছিলাম শরণখোলায় ঘোরার জায়গা তৈরি করেছে। আজ বন্ধুদের নিয়ে এসে খুব ভাল লাগল।

স্ত্রী, দুই সন্তান ও মাকে নিয়ে রিভারভিউ ইকোপার্কে আসা বাগেরহাট সদর উপজেলার রনবিজয়পুরের বাদশা হাওলাদার বলেন, কোনো উপলক্ষ ছাড়া স্বাভাবিক সময়ে এতদূরে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা খুবই কষ্টকর। ঈদের ছুটি হওয়ায় সবাই মিলে এসেছি। খুবই ভাল লাগছে, বাচ্চারাও খুশি হয়েছে।

শারমিন আক্তার নামের এক তরুণী বলেন, বাড়ি শরণখোলায় হলেও, চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকি। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে এসেছি। মা ও বাবাকে নিয়ে রিভারভিউ পার্কে এসেছি। বিকেলে ঠাণ্ডা বাতাস, নদীর ঢেউয়ের গর্জন ও মাথার উপর নিল আকাশ এ এক অপরূপ দৃশ্য। এটা আসলে ছবি দেখে উপভোগের বিষয় না। প্রকৃতি কত সুন্দর হয় এখানে না আসলে বোঝা যাবে না।

চানাচুর বিক্রেতা আল-আমিন বলেন, ঈদের আগের দিন থেকে দর্শনার্থী বাড়তে শুরু করেছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বিক্রি হচ্ছে। অন্য সময় যে, বিক্রি কম হয় তা এই সময়ে পুষিয়ে যায়।

শুধু প্রকৃতি না, এই ইকোপার্কে রয়েছে সমুদ্র সৈকতের মতো ছাতা ও বিচ খাট। যেখানে দর্শনার্থীরা বিশ্রাম নিতে পারেন। সেই সঙ্গে স্পিডবোট ও ট্রলারে করে বিশাল নদীতে ঘোরারও সুযোগ রয়েছে।

স্পিডবোট চালক মো. সেলিম বলেন, পার্কের বয়স এখনো এক বছর হয়নি। প্রথম থেকেই আমি এখানে আছি। কম আয় ও লোকসান স্বীকার করে ধৈর্য ধরে এখানে ছিলাম। গত দুই দিনে আমার আশার থেকেও বেশি আয় হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে ধৈর্য ধরে ভুল করিনি।

ট্রলারচালক মামুন বলেন, শহরের মানুষ একটু নদীর মধ্যে যেতে চায়। নদীর লোনা জল হাত দিয়ে ছুঁযে দেখতে চায়। সেটা এই ইকোপার্কে এলে সম্ভব। অল্প খরচে আমরা মানুষকে নদীর মধ্যে ঘোরাঘুরি ও ছবি তোলার সুযোগ করে দিচ্ছি। এভাবে দর্শনার্থী আসলে, ভবিষ্যতে ট্রলার ও স্পিডবোট বাড়বে। ।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুর-ই-আলম সিদ্দিকি বলেন, বলেশ্বর নদীর তীরকে আমরা পর্যটন বান্ধব করে গড়ে তুলেছি। আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি, কাজ চলছে। এরই মধ্যে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল পরিমাণ দর্শনার্থী আসছে। দুই দিনে এক লাখেরও বেশি দর্শনার্থী এসেছে। আশা করি আগামীতে বিভিন্ন উৎসবে এই দর্শনার্থীর পরিমাণ বাড়তে থাকবে।

বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ঠেকাতে শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদীর তীরে তৈরি করা  বেড়িবাঁধকে টেকসই করতে মাটির ওপর কনক্রিটের ব্লক দেওয়া হয়। ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে উপজেলা সদরের রায়েন্দা-মাছুয়া ফেরিঘাট সংলগ্ন বড়ইতলা এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটারের বেশি জায়গা জুড়ে কংক্রিটের ব্লকে রঙ করে উপজেলা প্রশাসন। জায়গাটির নাম দেওয়া হয় শরণখোলা রিভারভিউ ইকোপার্ক। এরপর থেকে এই ইকোপার্ক কেন্দ্রিক নানা কর্মযজ্ঞ চলতে থাকে। সেই সঙ্গে দর্শনার্থীও বৃদ্ধি পেতে থাকে।

যেভাবে যাবেন রিভারভিউ ইকোপার্কে -ঢাকাসহ যেকোন স্থান থেকে পরিবহনে সড়কপথে শরণখোলা উপজেলা সদরের রায়েন্দা বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। সেখান থেকে ভ্যান বা অটোতে রায়েন্দা-মাসুয়া ফেরিঘাট হয়ে বড়ইতলায় যেতে হবে। এছাড়া হেঁটেও যাওয়া যায়, তাতে সময় লাগবে ১০ থেকে ১৫মিনিট।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২৩
এমএমআই/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।