ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন বরিশালের দর্শনীয় স্থানে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৩
ঈদের ছুটিতে ঘুরে আসুন বরিশালের দর্শনীয় স্থানে

বরিশাল: কীর্তনখোলা, আড়িয়াল খাঁ, সন্ধ্যা, সুগন্ধা, মেঘনা, কালাবদর, কারখানা, পায়রা, তেতুলিয়া, লোহালিয়া, আগুনমুখা, বলেশ্বর, কচা, বিশখালী, আন্ধারমানিকসহ তিন ডজনের মতো ছোট-বড়, বিখ্যাত-অখ্যাত নদী বেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বরিশাল বিভাগ।  

ঈদের ছুটিতে ঘুরে দেখা যেতে পারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরা নদী ও অঞ্চলগুলোর পাশাপাশি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোতে।

ঘুরে দেখা যেতে পারে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটা।

সাগরকন্যা কুয়াকাটা: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি সাগরকন্যা কুয়াকাটা। ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সৈকত বিশিষ্ট কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্রসৈকত। যেখানে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে দেখা মিলবে বন, লাল কাঁকড়া, বিভিন্ন ধরনের পাখির।

সমুদ্র সৈকতের কাছে রাখাইন পল্লি কেরানীপাড়ার শুরুতেই একটা বৌদ্ধ বিহারের কাছেই আছে একটি প্রাচীন কূপ। আর প্রাচীন কূয়াটির সামনেই আছে প্রাচীন সীমা বৌদ্ধ বিহার, যাতে রয়েছে বিশালাকৃতির অষ্ট ধাতুর তৈরি ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের মূর্তি। এর কাছাকাছি স্থানেই রয়েছে সংরিক্ষত প্রাচীন আমলের নিদর্শন একটি বিশালাকৃতির কাঠের নৌকা।

এছাড়া কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত থেকে কয়েক কিলোমিটার আগে রাখাইন আদিবাসীদের আবাসস্থল মিশ্রিপাড়ায় আছে একটি বৌদ্ধ বিহার, যাতে রয়েছে উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ মূর্তি। কুয়াকাটায় ভ্রমণে গেলে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর সোনারচরেও ঘুরে আসা যায়। সোনার চরে আছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, আকর্ষণীয় দৃশ্য ও মনোরম পরিবেশ।  



বর্তমানে পদ্মাসেতু হওয়ার পর ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে সরাসরি বিলাসবহুল বাসে কুয়াকাটা যাওয়া সম্ভব।  গাবতলী, শ্যামলী, কলাবাগান, আরামবাগ, মালিবাগ, মতিঝিল, গুলিস্তান, কমলাপুর থেকেও গ্রিনলাইন, সোহাগ, ইউরো কোচ, সাকুরা, হানিফ, শ্যামলীসহ বিলাসবহুল বিভিন্ন পরিবহন ঢাকা থেকে সরাসরি কুয়াকাটা যাত্রী সেবা দিচ্ছে। এর বাইরে ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে বরিশাল ও পটুয়াখালী হয়ে কুয়াকাটা যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে বরিশাল নগরের রুপাতলী থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় এবং পটুয়াখালী বাস টার্মিনাল থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টায় নির্ধারিত সময়ের বাসে কুয়াকাটা যেতে পারবেন। কুয়াকাটায় বিলাসবহুলসহ সাধারণ মানের বেশ কিছু হোটেলের বাইরে রিসোর্ট রয়েছে। যেখানে নির্ধারিত মূল্যে রুম পাওয়া যায়, তবে ঈদের এ সমযে অনলাইনের হোটেলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে অগ্রিম রুম বুকিং দিয়ে যাওয়া ভালো।

শুভ সন্ধ্যা সৈকত: বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের নলবুনিয়ায় অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা শুভ সন্ধ্যা সৈকত। পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর মিলিত জলমোহনায় সৈকতটির অবস্থান। এর বেলাভূমি প্রায় চার কিলোমিটার লম্বা এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। তালতলী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে সোনাকাটা ইকোপার্ক সংলগ্ন নলবুনিয়ার এই চরটি এখন পর্যটন এলাকা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট টেংরাগিড়ি এই বেলাভূমির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। যেখানে সাগরপাড়ে সবুজের সমারোহে বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ও পাখির কুহুতান। এই চরের কাছেই রয়েছে তালতলীর বিশাল রাখাইন পল্লি। যে পল্লিতে কুপিবাতি জ্বালিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে তাঁতে কাপড় বোনার কাজ। তাঁতশিল্প ছাড়াও রাখাইনদের ঐতিহ্যবাহী বৌদ্ধ মন্দিরও অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। এখানে যেতে হলে ঢাকা, বরিশাল কিংবা পটুয়াখালী থেকে সরাসরি বাসে বরগুনা যেতে হবে। যদিও ঢাতা থেকে সরাসরি বরগুনায় লঞ্চেও যাওয়া যায়। বরগুনা থেকে স্থানীয় বিভিন্ন বাহনে শুভসন্ধ্যা সৈকতে যাওয়া যায়।  

ভাসমান বাজার: বরিশালের উজিরপুরের হারতা, বানারীপাড়া সদর, ঝালকাঠী সদরের ভিমরুলি, পিরোজপুরের নেছারাবাদের আটঘর-কুড়িয়ানা ও নাজিরপুরের বৈঠাকাটায় দক্ষিনাঞ্চলের বৃহৎ ভাসমান বাজারগুলোর অবস্থান। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভরা এ অঞ্চলের খাল ও নদীতে ঘুরে ঘুরে কৃষি কর্মযজ্ঞ যেমন মন কারবে যে কারও। তেমনি ভাসমান বাজার থেকে প্রাকৃতিক যেকোনো খাদ্যশস্য অল্প মূলে ক্রয় করাও যাবে এখানকার হাটগুলো থেকে। শান্ত এসব নদী ও খালে নৌকা এবং ট্রলার চলার ঢেউয়ে দোল খায় অন্য নৌকাগুলোও। আর সেই ঢেউয়ের তালে তালে চলে নৌকায় কেনাবেচা।  



হাটবারে এসব ভাসমান বাজারে যাওয়াটা উত্তম। সেক্ষেত্রে বরিশাল থেকে সড়কপথে বানারীপাড়ার সদর ও উজিরপুরের হারতা বাজারে সরাসরি যাওয়া যায়। এছাড়া ভিমরুলি ও আটঘর-কুড়িয়ানার ভাসমান বাজারে যেতে চাইলে বরিশাল শহর ও ঝালকাঠি শহর থেকে লেগুনায় চেপে যাওয়া যায়। তবে পিরোজপুর থেকে সড়কপথে যেতে সময়টা বেশি লাগে। আর বৈঠাকাটাতে যেতে হলে পিরোজপুর সদর ও অথবা নেছারবাদ উপজেলা থেকেও যাওয়া যায়।  ঢাকা থেকে কেউ সরাসরি এসব স্থানে যেতে চাইলে তাকে অবশ্যই সড়ক বা নৌপথে বরিশাল, ঝালকাঠী ও পিরোজপুর সদরে আসতে হবে। আর প্রতিটি বাজারে গিয়ে নৌকা ও ট্রলার ভাড়ায় পাওয়া যায়। যা নিয়ে বাজারসহ আশপাশে দিনভর ঘুরে বেড়ানো যায়।  

দুর্গাসাগর দীঘি ও প্রাচীন স্থাপনা: রাজবংশের রাজা শিব নারায়ণের প্রজাবৎসল স্ত্রী রানী দুর্গাবতী ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দে বিশাল এক দীঘি খনন করে এখনো অমর হয়ে আছেন। তার নামেই বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধপাশায় অবস্থিত এই দীঘি  দূর্গা সাগর নামে পরিচিত। সাগর দিয়ে যার বিশালত্বকে বুঝানো হয়েছে। বিভাগে থাকা একমাত্র বিশালাকৃতির এই দীঘি পর্যটক ও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এর মাঝে রয়েছে একটি সুন্দর দ্বীপ। দীঘির চারিপাশে ঘন সবুজ বিভিন্ন ধরনের গাছপালার মাঝ দিয়েই রয়েছে সরু রাস্তা। এর মাঝেই রয়েছে বসার বেঞ্চি।

বরিশাল থেকে পাবলিক বাস ছাড়াও থ্রি-হুইলার বিভিন্ন বাহনে মাত্র আধ ঘণ্টায় আসা যায় এখানে। আর এখান থেকে অল্প দূরত্বে উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়ায় অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন বায়তুল আমান জামে মসজিদও একনজর দেখে আসতে পারেন যে কেউ। এছাড়া বরিশাল শহর থেকে স্বল্প দূরত্বে থাকা প্রাচীন মিয়া বাড়ি মসজিদ, গৌরনদী উপজেলার কমলাপুর মসজিদ, কসবা মসজিদ, বাকেরগঞ্জের নসরত গাজী জামে, বরগুনার বিবিচিনি শাহী মসজিদ, পিরোজপুরের মমিন মসজিদ, ভোলার নিজাম হাসিনা ফাউন্ডেশন মসজিদ ঘুরে দেখা যেতে পারে।

আর এসব মসজিদ পরিদর্শনের সময় আশপাশের দর্শনীয় স্থান, যেমন বানারীপাড়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা সন্ধ্যা নদী, বরিশালের কীর্তনখোলা নদী, ত্রিশ গোডাউন এলাকা, ভোলার মেঘনা-শাহবাজপুর পর্যটন কেন্দ্র  তুলাতলি) ঘুরে দেখা যেতে পারে। তবে ভোলার চরফ্যাশনে অবস্থিত জ্যাকব টাওয়ার, তাড়ুয়া সমুদ্রসৈকত ও ম্যানগ্রোভ বন, ঢালচর, বেতুয়া প্রশান্তি পার্ক, বোরহানউদ্দিন উপজেলার তেঁতুলিয়া রিভার ইকোপার্ক, মেঘনা রিভার ইকোপার্কও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম।

ভোলার এ দর্শনীয় স্থানে যেতে হলে ঢাকা থেকে সরাসরি নৌ ও সড়কপথে অথবা বরিশাল থেকে নৌ-পথে যাওয়াটা শ্রেয়। যদিও ভোলা জেলার মূল আকর্ষণ চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণে মেঘনা নদীর অববাহিকায় বঙ্গোপসাগরের মাঝে অবস্থিত সৌন্দর্যের দ্বীপ চর কুকরি-মুকরি এবং মনপুরা উপজেলার চর মনপুরার মতো দর্শনীয় স্থানে যেতে হলে বিপজ্জনক জলসীমা পাড়ি দিতে হবে। সেক্ষেত্রে সি-সার্ভেবিহীন নৌযানে এ সময়ে চলাচল এড়িয়ে চলা উত্তম।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৩
এমএসএএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।