ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারার ফুল

শাফিন আহমেদের সঙ্গে কিছুক্ষণ

‘দেখি আমি পারি কি-না’

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৬
‘দেখি আমি পারি কি-না’ শাফিন আহমেদ/ছবি: সোলায়মান হারুনী মৃদুল- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সংগীত আয়োজক ও সংগীতশিল্পীর রূপে দিনের বেলা অপরাধীদের তথ্য সংগ্রহ করেন, রাতে সেইসব অপরাধীর পিছু নেওয়াই যেন তার নেশা। রহস্যময় এক চরিত্র।

অপরাধ ও অপরাধীদের সঙ্গে যার বিরোধ, তার আসল পরিচয় রহস্যের বৃত্তেই থাকে। কখনও মনে হবে গোয়েন্দা কর্মকর্তা। কখনও মনে হবে সিআইডি অফিসার। আসলে কে?

এই রহস্যময় চরিত্রের মধ্য দিয়ে অভিনয়ে অভিষেক হচ্ছে সংগীতশিল্পী শাফিন আহমেদের। ‘মিডনাইট ফ্যালকন’ নামের ৫২ পর্বের ধারাবাহিক নাটকে দেখা যাবে তাকে। বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁয় অভিনয় প্রসঙ্গে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।

বাংলানিউজ : আপনি অভিনয়ে কেনো?
শাফিন : সিরিয়াসলি অভিনয় করার কোনো চিন্তা কোনো সময় করিনি। প্রস্তাব যে কোনো সময় আসেনি তা-ও না। মাঝে মধ্যে এসেছে। সবার মতো করে বলতে চাই না, গতানুগতিক ধারার গল্পে কাজ করতে রাজি হইনি। সত্যিকার অর্থে এ ব্যাপারে আমি সবসময় লাজুক ছিলাম। নিজেকে কখনও পর্দায় ওভাবে দেখিনি যে, আমি অভিনয় করছি। যে ধরনের গল্প বেশিরভাগ সময় দেখি পর্দায়, ওই ধরনের কোনো গল্পে নিজেকে দেখিনি।

এর মধ্যে পরিচালক তারিক মুহাম্মদ হাসান হঠাৎ করে আমার কাছে এলো। কি চিন্তা করে এসেছে সেটা ও-ই ভালো বলতে পারবে! ওর সাথে যে আমার লম্বা কোনো পূর্ব পরিচয় রয়েছে তা না। ও নিশ্চয়ই কিছু একটা চিন্তা-ভাবনা করেই এসেছে, কাকে দিয়ে কী করাবে, কেনো করাবে। কেনো শাফিন আহমেদ- এ প্রসঙ্গে আমার মনে হয় তার পরিষ্কার ধারণা নিশ্চয়ই ছিলো। তা না হলে দৃঢ় প্রস্তাব নিয়ে আসতো না। ও দেখা করতে চাইলো, দেখা করলাম। আমার সামনে নিয়ে এলো স্ক্রিপ্টের একটা সংক্ষিপ্ত রূপ। আমি একদিন সময় নিয়ে ওটা পড়ার জন্য বাসায় নিয়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম আগে পড়ি জিনিসটা।

কীভাবে যেন আমার চিন্তার দরজাটা খুললাম। তখনই অভিনয়ের ব্যাপারটা নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। এটা বেশিদিন আগের কথা না। এক মাস হবে হয়তো। পরদিন পরিচালকের সঙ্গে আমার কথা হয়। চিন্তা করার সময় ‍ও সুযোগ নিয়েছিলাম। হতে পারে কি-না, করবো কি-না, করলে পারবো কি-না, করা উচিত হবে কি-না- সামনে এমন নানান প্রশ্ন আসছে সেটাও জানি। তবে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া হওয়াটা খুব দরকার প্রথমে। নিজেকে সম্পৃক্ত করতে হবে গল্পে। আমি করবো কি-না তা ভেবেছি আগে। করলে কি হবে তা পরের কথা। আগে দেখতে হবে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি কি-না। ওই যে বললাম, হঠাৎ মনের জানালাটা বোধহয় খুললো।

বাংলানিউজ : সংগীতশিল্পীদের অনেকে সরাসরি চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন। আপনি ছোট পর্দা দিয়ে শুরু করলেন কী ভেবে?
শাফিন : এটা ঠিক ইতিপূর্বে অনেকে সরাসরি সিনেমায় চলে গেছেন বা সিনেমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে বাংলাদেশের ছবিতে কাজ করেছেন। এ ধরনের প্রস্তাব আমার কাছেও এসেছে। কিন্তু আমি কোনোসময় কোনোভাবে নিজেকে এ অবস্থানে দেখিনি বলে সাহস করে এগোতে পারিনি। কিন্তু ছোট পর্দায় ছোট পরিসরে হয়তো একটা আগমন বার্তা দেওয়া যেতেও পারে। এটা করার কিছুটা সাহস পেয়েছি। এই চিন্তা করে টিভি ধারাবাহিক হিসেবে, টেলিভিশনে যাবে বলে আমি এর সঙ্গে একমত হয়েছি। আমার সিদ্ধান্ত দিয়েছি। এখন আমরা কাজে এগোবো।

বাংলানিউজ : অভিনয়ে এসে কি স্বাধীনতা পাচ্ছেন?
শাফিন : আমি যে ধরনের মানুষ তাতে আমি কোনো কিছুতে যুক্ত হলে কিংবা আমি কোনো কিছুতে হাত দিলে সেটা আমার মতো করে হতে হবে। আমার এটুকু বিশ্বাস আছে, কোনো কিছু যদি পছন্দ না হয় আমি নিজের মতো করে গুছিয়ে নিতে পারবো। কোনো অংশ ভালো না লাগলে আমি হয়তো বলে বলে সেসব জায়গা পরিবর্তন করতে পারবো। এটুকু আস্থা রয়েছে বলে আমি সাহস করে এগোচ্ছি।

তবে আমি খুব বিশ্বাসী, মনে হচ্ছে যে, একটা ভিন্ন ধরনের গল্প দাঁড় করাতে পারবো দর্শকদের জন্য। এখানে থাকবে নতুনত্ব আর চমক। একটা হচ্ছে- আমি প্রথমবারের মতো অভিনয় করছি। এর মধ্যেই একটা চমক রয়েছে। পাশাপাশি গল্পটাও। যে কোনো গল্প হলে আমি রাজি হতাম না। গল্পটা যেন ইন্টারেস্টিং হয়, দর্শক যেন ধরে রাখতে পারে পর্বগুলো, সে চেষ্টা থাকবে। এ ক্ষেত্রে আইডিয়া দিয়ে সেটা আমি অবশ্যই করবো দর্শকের কথা ভেবে এবং আমার নিজের ভালোর জন্য। যেহেতু জড়িয়ে পড়েছি, তাই সফলতা বিষয়টা আসতেই হবে। আমি সেভাবে দেখছি বিষয়টা। আজ থেকে আমি এর সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ হলাম। সেজন্য এটাকে কতো ভালো করা যায়, সে চেষ্টা আমার থাকবেই। ভালো করতেই হবে। আর পরিচালক আমাকে শেখাবেন কীভাবে ভালো অভিনয় করতে হয়!

বাংলানিউজ : ধারাবাহিকটির গল্প সাজাতে তাহলে আপনি ভূমিকা রেখেছেন?
শাফিন : পরিচালক প্রথমে যে স্ক্রিপ্টটা এনেছিলেন সেটাকে সরিয়ে রাখলাম। হয়তোবা আরও বড় কিছুর জন্য। তাকে বললাম, সংগীতশিল্পী কিংবা গোয়েন্দার চরিত্রে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবো। এভাবে লেখো। অনেকটা গান লেখানোর মতো। আমরা কতো গীতিকারকে দিয়ে গান লিখিয়েছি না? এটাও আমার কাছে আলাদা কিছু মনে হয়নি।

এবার দু’দিন সময় নিয়ে পরিচালক আরেকটা স্ক্রিপ্ট নিয়ে এলো। এটা পড়লাম। আমার সঙ্গে শেয়ার করে দাঁড় করানো হয়েছিলো গল্প। তাই খুব একটা সময় লাগলো না রাজি হতে। গল্পটা পড়লাম। এর মধ্যে ওর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে- কীভাবে কী ধরনের চরিত্র আমাকে মানাবে, কী ধরনের চরিত্র আমার করা উচিত; সেভাবে এ গল্পটা লেখা। এখানে চরিত্রটি খুবই রহস্যময়। আর আমার ব্যক্তিজীবনের আংশিকটা রয়েছে। অর্থাৎ আমার জন্য সাজানো চরিত্রটি সংগীতানুষ্ঠান আয়োজন করে। মাঝে মধ্যে মঞ্চে নিজেও গান গায়, বাজায়। এটা তার বাহ্যিক পরিচিতি। কিন্তু সে আসলে অপরাধীদের তদন্তকারী।

বাংলানিউজ : গোয়েন্দা চরিত্রের প্রতি ভালো লাগা কবে থেকে?
শাফিন : আমি ছোট থেকে অনেক গোয়েন্দাধর্মী গ্রন্থ পড়েছি। আগাথা ক্রিস্টি অসাধারণ লেখক ছিলেন, ছোট ছোট গল্প লিখতেন। আমরা সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা পড়েছি। শার্লক হোমস পড়েছি। আলফ্রেড হিচকক পড়েছি এবং লিথেছি। তাদের বই পড়েছি, ছবি দেখেছি। এ ধরনের গল্পের সঙ্গে নিজেকে আমি সম্পৃক্ত করতো পারবো বা এমন চরিত্রে অভিনয় করা সম্ভব বলে মনে করি। ‘মিডনাইট ফ্যালকন’-এর স্ক্রিপ্টটা যখন পেলাম, তখন এ চরিত্রে আমাকে মানাবে ভেবেই আমরা এগোনোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গল্পটাতে অনেক রহস্য আছে এবং থাকবে বলে পরিচালক আমাকে আশ্বস্ত করেছে। এখন আমরা এগোতে চাই।

বাংলানিউজ : একটু কি নার্ভাস লাগছে?
শাফিন : আমার কাছে এখনও যথেষ্ট সংশয় রয়েছে হবে কি-না! অনেক টেনশনে আছি। দুটি জিনিস দেখতে চাই। একটা হলো- আমি পারি কি-না। এটা একটা দেখার বিষয়। দ্বিতীয়ত, দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কি-না। এটাও দেখার আছে। এ দুটো জিনিস আমার নিজের জন্য পরীক্ষা করবো। পরিচালক তো খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগোচ্ছে। যেন হবেই! ভালো কিছু হবেই! তবে ভালো কিছু যে হবেই এমন রেকর্ড নেই। কারণ আমি আগে অভিনয় করিনি। ‍সেহেতু আমি বলবো, সে সাহসী একটা পদক্ষেপ নিয়ে এগোচ্ছে। আর আমার জন্য এটা একটা চ্যালেঞ্জ।

বাংলানিউজ : অভিনয়ে সাফল্য পাওয়ার ব্যাপারে আপনি আত্মবিশ্বাসী?
শাফিন : দেখুন, যে কোনো কাজে সাহস নিয়ে এগোতে হয়। আমার ভক্ত যারা, আমার গানের ভক্ত যারা, তাদের জন্য ভালো লাগার মতো ইন্টারেস্টিং একটি জিনিস হবে এটি। এখানে ইন্টারেস্টিংভাবে তারা শাফিন আহমেদকে পাবে। নাটকটি দেখে তারা খুশি হবে বলে আমার ধারণা। এ বিশ্বাস না থাকলে কাজটা করতাম না। এ প্রকল্পের সঙ্গেও জড়াতাম না।

বাংলানিউজ : নাটকটির নাম ‘মিডনাইট ফ্যালকন’ কেনো?
শাফিন : নাম নিয়েও পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। গল্পে রাতের অন্ধকারে অনেক ঘটনা ঘটবে। সেজন্য ‘মিডনাইট’। আর জানেন হয়তো ফ্যালকন একটা পাখি, এরা আক্রমণাত্মক এবং তীক্ষ্ণদৃষ্টি সম্পন্ন। এ পাখি খুব দ্রুতগতিতে উড়তে পারে। আমি শুনেছি, এ ধরনের পাখি কিছু ধরার জন্য ছুটলে তার গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় ২০০ মাইল। আমার জন্য যে চরিত্র দাঁড় করানো হয়েছে, এর সঙ্গে এটা মানায় বলে আমরা ফ্যালকন নামটা যুক্ত করলাম। তাই রাতের বেলা যেহেতু ঘটনাক্রমে অনেক কিছু ঘটবে, তাই গল্পের নামকরণ হলো ‘মিডনাইট ফ্যালকন’।

বাংলানিউজ : শীত মৌসুমে মাইলসের ব্যস্ততা যাচ্ছে কেমন?
শাফিন : হ্যাঁ। এই তো ক’দিন আগে চট্টগ্রামে আমাদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চারটি অনুষ্ঠান করতে হয়েছে। গান নিয়ে অনেক পথচলা বাকি। গানের জগতে এখনও কাজ করার অনেক পরিকল্পনা রয়েছে, সুযোগ রয়েছে। মাইলস টু গো...

বাংলাদেশ সময় : ০৯৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৫
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ