ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

জন কবিরের সঙ্গে কিছুক্ষণ

ইনদালো নতুন শ্রোতাগোষ্ঠী তৈরি করতে পেরেছে

খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৫
ইনদালো নতুন শ্রোতাগোষ্ঠী তৈরি করতে পেরেছে জন কবির/ ছবি: আফসানা/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ব্ল্যাক থেকে বেরিয়ে গান ছাড়া দীর্ঘদিন। তারপর একসময় জানা গেলো, আরও কয়েকজনকে নিয়ে নতুন ব্যান্ড শুরু করেছেন জন কবির।

নাম ইনদালো। ব্যান্ডটির প্রথম অ্যালবাম ‘কখন কীভাবে এখানে কে জানে’ প্রকাশিত হয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর ছিলো এর প্রকাশনা অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে বাংলানিউজের সঙ্গে আড্ডা দিলেন জন কবির।
 
বাংলানিউজ: সেদিন তো অ্যালবামটির প্রকাশনা অনুষ্ঠান করলেন। আমরা যেতে চেয়েছিলাম। পরে জানলাম, একেবারে ঘরোয়া আয়োজনের মতো করেছেন। সে কারণে আর যাওয়া হয়নি।
জন কবির: নাহ! চলে আসতে পারতেন। একেবারে উন্মুক্ত ছিলো সবার জন্য।
 
বাংলানিউজ: আচ্ছা। ওখানে তো আপনারা গাইলেন। এর আগে ইনদালো এভাবে জনসম্মুখে আসেনি। ওইদিনই প্রথম। কেমন ছিলো পুরো ব্যাপারটি?
জন: আমরা তো আশাও করিনি এতো মানুষ আসবে। প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ছিলো। আমরা পুরো অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে সাজিয়েছিলাম।
 
বাংলানিউজ: মঞ্চের সামনে ইনদালো লেখা... আলো জ্বলছে...
জন: ওটা আমাদের আগে থেকে পরিকল্পনা করা ছিলো। এরপর যেখানেই যাবো, ওই আলোটা আমাদের সঙ্গে যাবে।
 
বাংলানিউজ: ব্ল্যাকের সূত্রেই হোক, অথবা সাম্প্রতিক অভিনয়ের কারণে, জন কবিরের তো আলাদা পরিচিতি আছে। গানগুলো করার সময় কি ভাবনায় ছিলো এটি? মানে বলতে চাচ্ছি, কোনো চাপ ছিলো?
জন: কখনই না। আমি যখন গান করি, তখন নিজের কথা ছাড়া, আত্মসন্তুষ্টি ছাড়া, অন্য কোনো কিছু মাথায় আসে না। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, ইনদালোর চারটা মানুষই একদম ওই রকম। আমাদের অ্যালবামটা শুনলেই বুঝতে পারবেন, কেনো এটা অন্যরকম। একটাই কারণ, আমাদের মাথায় কোনো ধরনের ব্যবসায়িক তো দূরের কথা...
 
বাংলানিউজ: বাণিজ্যিকীকরণটা নেই বলতে চাইছেন?
জন: সেটা দূরের কথা। মানে, একটা হচ্ছে গান করে সেটাকে বিক্রি করা। আরেকটা হচ্ছে, বিক্রি করার জন্য গান করা। দু’টো কিন্তু আলাদা জিনিস। আমরা প্রথমটিতে বিশ্বাসী। আপনি যখন ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনা মাথায় রেখে গান করবেন, সেটা তখন আর গান থাকে না আমরা মতে। সেটা হয়ে যায় পণ্য। আর আপনি যদি নিজের জন্য বা গানের খাতিরে গান করেন; আর সেটাকে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যবসায়িক ধাপগুলো অনুসরণ করেন, সেটাকেই আমি সঠিক বলবো। একজন সংগীতশিল্পীর জন্য সেটাই সবচেয়ে বড় অর্জন। আর ওই যে পণ্য বিষয়ে যেটা বললাম, ওটার জন্য তো অনেককিছু আছে। ধরুন আমি যদি জিঙ্গেল করি, সেটা আমার পছন্দে হবে না। পণ্য যার, যিনি ক্লায়েন্ট, তার পছন্দে হবে। সেখানে হয়তো আমি নিজের কৌশলটা দেখাতে পারবো। কিন্তু সেখানে আমার সন্তুষ্টির চেয়ে বড় ব্যাপার হবে ক্লায়েন্টের চাহিদা। আর আমি যদি আমার গানের ক্ষেত্রে একই চিন্তাভাবনা করি, তাহলে তো সেটা গান হচ্ছে না।
 
বাংলানিউজ: শেষ কথা কী দাঁড়াচ্ছে তাহলে... ‘কখন কীভাবে এখানে কে জানে’ পণ্য নয়, একটা মিউজিক্যাল স্টেটমেন্ট?
জন: অবশ্যই, এটা একটা মিউজিক্যাল স্টেটমেন্ট। বাংলায় বলতে পারেন সংগীতময় বিবৃতি!
 
বাংলানিউজ: আপনি তো অভিনয় করছেন, এই জায়গাটা, মানে আপনার অভিনয়টা ইনদালোকে কি কোনোভাবে প্রভাবিত করছে? ইতিবাচক অথবা নেতিবাচকভাবে?
জন: ভালো প্রশ্ন। যেদিন আমাদের অ্যালবামের প্রকাশনা হলো, আমার একটা ভয় ছিলো। ভয়ই বলতে পারেন যে, আমি তো অভিনয় করি, তার দর্শক এক ধরনের। আমি যে গান করি, সেটার শ্রোতা আরেক ধরনের। আমার ভয় ছিলো, হয়তো দু’জায়গা থেকেই লোক চলে আসবে। কিন্তু যেটা দেখলাম, যারা শুধু আমার গানের ভক্ত, তারাই এসেছে। এটা আমার জন্য বড় একটা অর্জন যে দু’টো জিনিসকে আলাদা করতে পেরেছি। মিক্সড-আপটা হয়নি। যখন অনুষ্ঠান শেষ হলো, ঠিক একথাটাই বলছিলাম।
 
বাংলানিউজ: একটা বিষয় আপনি লক্ষ্য করেছেন কি-না, গানের জন, ইনদালোর জন, তার একটা লুকায়িত শ্রোতাগোষ্ঠী আছে। যাদের হয়তো অতোটা বোঝা যায় না...
জন: ঠিক বলেছেন, তারা অতোটা সামনে আসে না। এটা কিন্তু আমার খুবই ভালো লাগে। তারা যে ভিজ্যুয়াল না, এটাই মজা লাগে আমার।
 
বাংলানিউজ: এটা কী আপনি কনসার্ট কম করেন বলে, নাকি?
জন: কনসার্ট তো এতোদিন করিইনি। কারন ইনদালো এতোদিন আসেনি। এখন যেহেতু অ্যালবামটি বেরিয়ে গেছে, কনসার্টের প্রস্তাব আসছে। কিন্তু আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, আগে নিজেরা একটা বড়সড় কনসার্ট করবো, তারপর বাকিগুলো নিয়ে ভাববো। কনসার্ট শুরু হয়ে গেলে, আপনি যে লুকায়িত শ্রোতাগোষ্ঠীর কথা বললেন, তারা একটু সামনে আসবে বলে মনে হয়।
 
বাংলানিউজ: আপনি যে কথাটা বলতে চান, সেটা তো গান দিয়েই বলেন। যখন ব্ল্যাকে ছিলেন, আর এখন যখন ইনদালোতে; দু’টো সময়ের মধ্যে বেশ ব্যবধান। এর মধ্যে অনেককিছু বদলেছে। মানুষের সমস্যা-সংকট-পছন্দ বদলেছে। এ সময়ে এসে গানের মাধ্যমে আপনি কোন কথাগুলো বলতে চান?
জন: আমাদের অ্যালবাম যখন শুনবেন, তখন দেখবেন লিরিক্যালি...
 
বাংলানিউজ: আমি খুবই দুঃখিত যে, ‘কখন কীভাবে এখানে কে জানে’ অ্যালবামটি এখনও হাতে পাইনি।
জন: ওইটা পেলে আমাদের লিরিক দেখে, টিউন শুনে আপনার প্রশ্নের উত্তর এমনিই পেয়ে যেতেন। ডিফারেন্ট শব্দটা কিন্তু এখন আর ডিফারেন্ট নেই। সবাই ব্যবহার করে। আমি যেটা বলবো যে, গানগুলো শুনলে বুঝতে পারবেন, আমাদের জীবনে কী চলছে! ব্যক্তিগতভাবে বা ব্যান্ডের দিক দিয়ে কী চলছে, আমরা কী বলতে চাচ্ছি! আমরা সুরের প্রয়োজনে লিরিক লিখি না। আবার লিরিক আছে, ওইটাকে সুর করতে হবে, এজন্যও করিনি। পুরো জিনিসটায় একটা অরগ্যানিক প্রক্রিয়া ছিলো। আমাকে জুবায়ের বললো, আমার কাছে একটা লিরিক আছে। চল ওইটাতে সুর করি। হয়নি। বললাম, আমার কাছে একটা সুর আছে, চল একটা লিরিক লিখি। হয়নি। এটাই সবচেয়ে মজার ব্যাপার ইনদালোর। সবকিছু শুন্য থেকে, একসঙ্গে মিলে গলে তবেই করতে পেরেছি। যেটা ব্ল্যাকের সঙ্গে আমার কখনও হয়নি।
 
বাংলানিউজ: ইনদালো তো একটা চ্যালেঞ্জ ছিলো আপনার, আপনাদের কাছে। বিশেষ করে এই সময়ে এসে নতুন করে আবার একটা ব্যান্ড গড়ে তোলা...
জন: এটাই মজার ব্যাপার যে, জিনিসটাকে আমি একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিইনি কখনও। এই চাপ যদি নিতাম, তাহলে বাংলাদেশের অন্য অনেক শিল্পীর মতো একটা প্রতিষ্ঠিত ব্যান্ড থেকে বের হয়ে, প্রথমে যে কাজটি করতাম, একটি একক অ্যালবাম বের করতাম। যেটা আমি করিনি। মিউজিকটা আমি করি কারণ, মিউজিকের মাধ্যমে আমি বাঁচি।
 
বাংলানিউজ: মানে আপনার ভেতরটা বাঁচে!
জন: ঠিক তাই।
 
বাংলানিউজ: যেভাবে গান করে আপনার ভেতরটা বাঁচে, অভিনয়ে এসে এখানেও অভিনয়ের মাধ্যমে ভেতরটা বাঁচার মতো অবস্থা অনুভব করেন?
জন: এখনও আমার ভেতরে ওইরকম, মানে প্যাশন যেটা অভিনয়ের জন্য, ওইটা আসেনি। তবে আগে আমি জিনিসটাকে খুবই অপছন্দ করতাম। এখন সেটা করি না।
 
বাংলানিউজ: আবার অ্যালবামের প্রসঙ্গে আসি। এখনও তো বাজারে আসেনি?
জন: অ্যালবাম রিলিজ হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও মার্কেটে ছাড়িনি। আমরা নিজেরাই বিক্রি করবো। ১১ সেপ্টেম্বর উত্তরায় স্টেজ মিউজিক ক্যাফেতে কনসার্ট হবে। ওখানে আমরা গাইবো, পাশাপাশি অ্যালবাম বিক্রি করবো।
 
বাংলানিউজ: এটা কি শুধু ওখানেই করবেন?
জন: বনানীতে একটা করবো ১৩ সেপ্টেম্বর। তারপর ১৮ সেপ্টেম্বর রক-নেশনে। কনসার্ট আছে। আর চট্টগ্রামে কনসার্ট করবো আগামী ২ অক্টোবর। এভাবে আমরা গিয়ে গিয়ে বিক্রি করবো। আর অনলাইন সেল চালু করবো। কেউ ইচ্ছা করলে বাড়ি বসে সিডিটা পেয়ে যাবে।
 
বাংলানিউজ: রকের একটি প্রস্তুত শ্রোতাগোষ্ঠী তো শুরু থেকেই ছিলো। নতুন করে আরও অনেকে রকের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। রক তাদের ভেতরটাকে প্রচন্ডভাবে নাড়া দিচ্ছে...
জন: জানেনই তো, আমার আগের ব্যান্ড ছিলো ব্ল্যাক। সুতরাং আমার একটা শ্রোতা কিন্তু আছে। কিন্তু ইনদালোর অ্যালবাম প্রকাশনায় নতুন শ্রোতা পেয়েছি। আমি অনেক বছর কনসার্ট করেছি তো, কিছু মুখ চেনা হয়েই যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ইনদালো আগের যে শ্রোতা, তাদের থেকে বের হয়ে, একটা নতুন শ্রোতাগোষ্ঠী তৈরি করতে পেরেছে। আমি বলবো না যে এরা ইনদালোর শ্রোতা, বলতে চাই এরা ভালো গানের শ্রোতা।
 
বাংলানিউজ: তার মানে এই অভিযোগটা কি ভুল? ভালো গানের শ্রোতা নেই, মানুষ গান শুনছে না, সিডি বিক্রি হচ্ছে না...
জন: একেবারেই ভুল। আগে ভালো গান বানাতে হবে তো, তারপরেই না দেখতে হবে শ্রোতা আছে কি-না! আমাদের সিডির দাম সাড়ে পাঁচশ’ টাকা। যেখানে সারা ইন্ডাস্ট্রি বলছে যে, সিডি বিক্রি নেই। তাদের সিডির দাম হচ্ছে ষাট টাকা। আমাদেরটার এতো দাম হওয়া সত্ত্বেও প্রথম দিন এক হাজার কপি বিক্রি হয়েছে! ভালো জিনিস দিতে হবে তো! আমি বলছি না, ইনদালোই কেবল সেরাটা দিয়েছে। অন্তত একটা কিছু শুরু করেছি বলা যায়। একটা কিছু পরিবর্তন দরকার।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৫
কেবিএন/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ