ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

২০ বছর ধরে চলছে অসম্ভব মিশন

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১২ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০১৫
২০ বছর ধরে চলছে অসম্ভব মিশন

এ৪০০এম নামের একটি সামরিক উড়োজাহাজের বাইরে ঝুলে দাঁড়িয়ে আছেন টম ক্রুজ। বাহনটি তখন মাটি থেকে পাঁচ হাজার ফুট ওপরে! স্পেশাল ইফেক্টস নয় কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তিকে টম ক্রুজ সাজানো হয়নি, সত্যি সত্যি হলিউডের এই সুপারস্টার ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যটিতে কাজ করেছেন।

‘মিশন ইমপসিবল’ সিরিজের পঞ্চম কিস্তিতে নিজের ক্যারিয়ারের এমন বেশকিছু দুঃসাহসী দৃশ্য দেখা যাচ্ছে তাকে।  

‘মিশন ইমপসিবল’ মানেই টম ক্রুজ আর চোখধাঁধানো দৃশ্যের পুনর্মিলন! তার সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র অপ্রতিরোধ্য গোয়েন্দা ইথান হান্টকে পাওয়া যায় এই ব্লকবাস্টার অ্যাকশন সিরিজে। এটি তৈরি হয়েছে একই নামের টিভি সিরিজ অবলম্বনে। যুক্তরাষ্ট্রের কাল্পনিক গুপ্তচর সংস্থা আইএমএফ-এর প্রধান ইথান হান্ট ও তার প্রতিনিধিদের নানা দুঃসাহসিক কীর্তিকলাপের গল্প প্রথমবার বড় পর্দায় দেখা যায় ১৯৯৬ সালে। এরপর পেরিয়ে গেছে কুড়ি বছর। দিনে দিনে সিরিজটির মতো ইথানের জনপ্রিয়তাও তরতর করে বেড়েছে। এবার ‘মিশন ইমপসিবল-রোগ নেশন’ ছবিতে পঞ্চমবারের মতো ইথান হান্ট হয়ে রূপালি পর্দায় এলেন ৫৩ বছর বয়সী এই মার্কিন অভিনেতা।

চার নম্বর কিস্তিতে দুবাইয়ে অবস্থিত বিশ্বের সর্বোচ্চ দালান বুর্জ খলিফার বাইরে বিপজ্জনকভাবে ঝুলছিলেন টম। এবারের ছবিতে সেই ঘটনাকেও ছাড়িয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। তাই উড়োজাহাজের বাইরে ঝুললেন! তা-ও এক-দুইবার নয়, মাটি থেকে দেড় কিলোমিটার ওপরে তাকে এমন দৃশ্যে গুনে গুনে আটবার ঝুলতে হয়েছে। একবার তো প্রায় রিব ভেঙেই যাবে বলে মনে হচ্ছিলো তার। তার ওপর সাহস বোঝাতে চোখ খোলা রাখতে হয়েছে তাকে। এজন্য চক্ষু বিশেষজ্ঞকে দিয়ে বিশেষ লেন্স ডিজাইন করানো হয়। এই কাজ করতে গিয়ে জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন তিনি। কিছু স্টান্ট দৃশ্যে তো ভয়ে ক্রুজের জানে পানি ছিলো না! ‘এই ভয়ের কথা বলে বোঝানো যাবে না। পাঁচ হাজার ফুট ওপরে উড়োজাহাজের কম্পনের সঙ্গে থরথর করে কাঁপছিলাম আমিও।

অবশ্য কোনো ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্যই দমাতে পারেনি ক্রুজকে। মোটর সাইকেল চেজের দুর্দান্ত অ্যাকশন দৃশ্যেও কাজ করেছেন নিজেই। এর মাশুলও দিতে হয়েছে। দৃশ্যধারণ চলাকালে ছয়বার আহত হয়েছিলেন তিনি। তাতেও ক্ষান্ত হননি। দ্রুতগতিতে গাড়িও চালিয়েছেন। স্টান্ট সমন্বয়ককে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, তার মতো দক্ষ চালক আর নেই! আগের চারটি ছবিতেও ব্যতিক্রম ছিলেন না টম ক্রুজ। তার কারণে সিরিজের আগের ছবিগুলোর কাজ চলাকালে মোটামুটি বেকারই থাকতে হয়েছে স্টান্টম্যানদেরকে। এ নিয়ে তার কথা, ‘সারাজীবন সবকিছুর জন্যই প্রশিক্ষণ নিয়েছি। নিজের স্টান্ট আমি নিজে করলে সহশিল্পীরা সাহস পায়। এতে তাদের কাজও চমৎকার হয়। ’

সহশিল্পীদের জন্য ব্যক্তিগত রাধুনি ক্যাটকে দিয়ে খাবার তৈরির সুবিধা রেখেছিলেন টম ক্রুজ। লন্ডন, মরক্কো ও অস্ট্রিয়ায় দৃশ্যধারণ চলাকালে শারীরিকভাবে ফিট থাকতে বিশেষ ডায়েট মেনে চলতেন ক্রুজ-সহ সবাই। পর্দায় তারা লড়বেন সিন্ডিকেটকে থামাতে। ‘মিশন : ইমপসিবল’ টিভি সিরিজে সিন্ডিকেটের উপস্থিতি ছিলো নিয়মিত। চতুর্থ ছবি ‘মিশন ইমপসিবল-গোস্ট প্রটোকল’-এর শেষ প্রান্তে নিজের প্রতিনিধিদেরকে সিন্ডিকেট নামের রহস্যজনক ও ভয়ঙ্কর দুর্বৃত্ত দল সম্পর্কে অনুসন্ধান চালাতে বলেন ইথান। নতুন গল্প সেখান থেকেই শুরু। সংগঠনটি চাইলে যে কোনো জাতিকে বিনষ্ট করতে পারে। এদিকে আইএমএফ-এর ওপর থেকে ছায়া সরিয়ে নেবে সিআইএ। তাই মিশনটা ইথানের দলের কাছে হয়ে ওঠে অসম্ভবের।

আগেরটির মতো এবারের ছবি পরিচালনা করেননি ব্রাড বার্ড। তাকে অবশ্য দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা ছিলো। কিন্তু জর্জ ক্লুনিকে নিয়ে ‘টুমরোল্যান্ড’ বানাবেন বলে তিনি সরে যান। এরপর টম ক্রুজের অনুরোধে প্রযোজকরা ডাক দেন ক্রিস্টোফার ম্যাককুয়ারিকে। তিন বছর আগে ‘জ্যাক রিচার’-এ একসঙ্গে কাজ করেছিলেন তারা। ওই ছবির সংগীত পরিচালক জো ক্রেমারকে অসম্ভব মিশনের সিরিজেও আনা হয়েছে সুর সৃষ্টির জন্য।

পরিচালকের মতো এ ছবির নায়িকাও নতুন। তার নাম রেবেকা ফার্গুসন। ৩১ বছর বয়সী এই সুইডিশ অভিনেত্রীর কপাল অবশ্য খুলেছে কয়েকজন নায়িকা না বলার পর! প্রযোজকদের প্রথম পছন্দ ছিলেন জেসিকা চ্যাস্টেইন। কিন্তু ইলসা চরিত্রে কাজের জন্য ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নিতে হবে জেনে গায়ে জ্বর চলে আসে তার! টম ক্রুজের ‘অবলিভিয়ন’ (২০১৩) ছবির প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। এ নিয়ে দু’বার ঘটলো!

অগত্যা ‘মিশন ইমপসিবল-গোস্ট প্রটোকল’ ছবির চরিত্রে পুনরায় কাজ করার প্রস্তাব দেওয়া হয় পলা প্যাটনকে। কিন্তু তার হাতে ফাঁকা সময় নেই বলে ‘মিশন ইমপসিবল থ্রি’র অভিনেত্রী ম্যাগি কিউর দুয়ারে গিয়েছিলো প্রস্তাবটা। তারও একই অবস্থা- সময় নেই! শেষমেষ রেবেকাকে দলে ভেড়ানো হয়। বিবিসির ‘দ্য মিনি সিরিজ হোয়াইট কুইন’ (২০১৩) দেখে তাকে নির্বাচন করেন টম-ক্রিস্টোফার দু’জনই।

পরিচালক আর নায়িকা না ফিরলেও চতুর্থ কিস্তির মতোই টমের সঙ্গী হয়েছেন হলিউড অভিনেতা জেরেমি রেনার, সিমন পেগ ও ভিং র‌্যামস। টমের পাশাপাশি র‌্যামস একমাত্র অভিনেতা যিনি সিরিজের পাঁচটি ছবিতেই কাজ করেছেন। আর পেগ এ নিয়ে সিরিজের টানা তিনটি ছবিতে কাজ করলেন। নতুন পর্বে সিআইএ প্রধান হিসেবে আছেন অ্যালেক ব্যাল্ডউইন। টমের সঙ্গে তিনি ‘রক অব এজেস’ (২০১২) ছবিতে ছিলেন।

‘মিশন ইমপসিবল-রোগ নেশন’ শুরুতে চলতি বছরের ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিলো প্যারামাউন্ট পিকচার্সের। কিন্তু তখন কাছাকাছি সময়ে মুক্তি পাবে জেমস বন্ড সিরিজের ২৪তম ছবি ‘স্পেক্টর’ আর ‘স্টার ওয়ারস: এপিসোড সেভেন-দ্য ফোর্স অ্যাওয়েকেন্স’। এ কারণে মুক্তির তারিখ এগিয়ে আনা হয়। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার একই বছরে মুক্তি পাচ্ছে ‘মিশন ইমপসিবল’ ও বন্ড সিরিজের নতুন ছবি। ২০০৬ সালে ‘মিশন ইমপসিবল থ্রি’ আর ‘ক্যাসিনো রয়েল একসঙ্গে মুক্তি পায়। আর এ বছর আসবে বন্ড সিরিজের ২৪তম ছবি ‘স্পেক্টর’। নায়কও পাল্টায়নি। টম ক্রুজ আছেন ইথান হয়ে, আর বন্ডের পোশাক এখনও গায়ে রাখতে পেরেছেন ড্যানিয়েল ক্রেগ।

এদিকে গত ৩১ জুলাই মুক্তির পর প্রথম সপ্তাহে প্রায় ১৩ কোটি ডলার আয় করে ফেলেছে ছবিটি। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা! ২ ঘণ্টা ১১ মিনিট ব্যাপ্তির ছবিটি বানাতে খরচ হয়েছে ১ হাজার ১৬৮ কোটি ৬৬ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টাকা!

এই সিরিজের প্রচুর ভক্ত আছে বাংলাদেশেও। তাদের কথা মাথায় রেখে আগামী ৭ আগস্ট রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্স ও ব্লকবাস্টার সিনেমাসে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে ‘মিশন ইমপসিবল-রোগ নেশন’।

মিশন: ইমপসিবল সিরিজের ছবি
* মিশন: ইমপসিবল (১৯৯৬)
* মিশন: ইমপসিবল টু (২০০০)
* মিশন: ইমপসিবল থ্রি (২০০৬)
* মিশন: ইমপসিবল-গোস্ট প্রটোকল (২০১১)
* মিশন: ইমপসিবল-রোগ নেশন (২০১৫)


‘মিশন: ইমপসিবল-রোগ নেশন' ছবির টুকিটাকি
* সিরিজের প্রথম চারটি ছবির সম্মিলিত আয়ের পরিমাণ ২০০ কোটি ডলার। অর্থাৎ ১৫ হাজার ৬৬৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা!

* সিরিজের কোনো ছবিতে এবারই প্রথম ইথান হান্টকে নির্যাতনের সময় উদোম গায়ে দেখা যাবে।

* এ৪০০ উড়োজাহাজটি এ ছবির জন্যই বানানো হয় স্পেনের সেভিলে। এরপর তা নিয়ে যাওয়া হয় যুক্তরাজ্যে। মজার বিষয় হলো, উড়োজাহাজটির বৈমানিক চরিত্রে অভিনয় করেছেন যিনি, তাকে নিয়ে আসা হয় সেভিল থেকেই।

* ছবিটির শেষ দিকের একটি দৃশ্যে রূপালি রঙের অ্যাস্টন মার্টিন ডিবিফাইভ মডেলের গাড়ি দেখা যায়। বন্ড সিরিজের গাড়ির প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানই তৈরি করেছে এটি।

* ‘মিশন ইমপসিবল-রোগ নেশন’ই প্রথম ছবি যেটা মুক্তি পাচ্ছে অ্যারির নতুন ৬.৫কে অ্যালেকজা ৬৫ক্যামেরায় ধারণকৃত দৃশ্য নিয়ে। পানির নিচে অনেকক্ষণ দৃশ্যধারণের জন্য ব্যবহৃত হয় এটি। ‘দ্য রিভেন্যান্ট’, ‘স্নোডেন’ আর ‘অ্যালিস থ্রো দ্য লুকিং গ্লাস’ ছবিতেও আগে এই ক্যামেরা ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু কোনোটিই এখনও মুক্তি পায়নি।

* ‘মিশন ইমপসিবল-রোগ নেশন’ ছবির ট্রেলার :


বাংলাদেশ সময় : ১৭২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৫
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ