ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

গ্রিক রূপকথার রাজপুত্রের নামে নাম

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৫
গ্রিক রূপকথার রাজপুত্রের নামে নাম ইভান / ছবি: নূর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ইভান নামটা গ্রিক ও স্প্যানিশ অঞ্চলে খুব জনপ্রিয়। গ্রিক রূপকথার রাজপুত্রের নাম ছিলো ইভান।

এই নামে একটা বিখ্যাত বন্দরও আছে। আর আছে আমাদের উপস্থাপক ইভান। রেডিওতে, টিভিতেও। ধীরে ধীরে তিনি অভিনয়েরও চেনামুখ হয়ে উঠছেন। আরজে হিসেবে তার জনপ্রিয়তা বোঝা যায় অনেক উপহার আসার ঘটনা দেখে। আসে প্রেমের প্রস্তাবও!

ইভানের শুরুটা রেডিওর মাধ্যম। রেডিও টুডে দিয়ে। এখন ঢাকা এফএম-এ সাপ্তাহিক অনুষ্ঠানে আরজে হিসেবে কাজ করেন। একই স্টেশনে আগে নিয়মিত ‘ক্যান্টিন ৯০.৪’-এ দেশের বিভিন্ন শাখার অনেক গুণীজনের সঙ্গে সরাসরি অনুষ্ঠান করেছেন। কয়েকজন বিদেশি গুণী অতিথির সাক্ষাৎকারও নিয়েছেন। এখন ‘অন্ধকারের গল্প’ নামে একটি অনুষ্ঠান করছেন, প্রচার হয় প্রতি রোববার রাত সাড়ে দশটায়। আরজে হিসেবে কাজের মজা কোথায়? ‘মানুষের সঙ্গে সরাসরি কাজ করতে পারা। দ্রুত প্রতিক্রিয়া ও ভালোবাসা পাওয়া। আমি যা তা-ই থাকতে পারি। আলাদাভাবে কিছু করতে হয় না। নিজের ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী নিজেকে তুলে ধরা যায়। আর আমার কথা লাখো লাখো মানুষ শুনে পছন্দ করছে, এটা সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে পাওয়া বিশাল উপহার। সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে রেডিওতে গান নিয়েই বেশি কাজ থাকে। আর গান শুনতে তো আমরা সবাই পছন্দ করি। ’

এই গানই ইভানের টার্নিং পয়েন্ট। ইশতিয়াক আহমেদের লেখা ও লুৎফর হাসানের সুরে ‘অন্ধকারের গান’ গেয়ে ও এর ভিডিওতে মডেল হয়ে নজর কাড়েন। এখন পর্যন্ত তার চারটি গান শ্রোতারা শুনেছেন রেডিওতে। অন্য তিনটি হলো ‘গর্জে ওঠার গান’, ‘সব আলো’ ও ‘রাধা রে’। তার কথায়, ‘গান পুরোপুরি ভালোবেসে গাই। কোনো বাণিজ্যিক উদ্দেশে গান করি না। একজন কণ্ঠশিল্পী হওয়া অনেক কঠিন, তাই সময় নিয়ে নিজের মতো করে গুছিয়ে ধীরেসুস্থে একটা হলেও একক অ্যালবাম করার ইচ্ছা আছে। এখন গানকে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে অর্থনৈতিক কিছু ব্যাপার থাকে। সব ব্যস্ততা গুছিয়ে সময় করে গান করে যাবো। ’

ইভান এখন নিয়মিত উপস্থাপনা করছেন তারকাদের বন্ধুর গল্প নিয়ে সাজানো এনটিভির ‘বন্ধু তোমারই খোঁজে’। বিভিন্ন মনোরম পরিবেশে ঘুরতে ঘুরতে, কথায় কথায় তিনি তুলে ধরছেন প্রবীণ শিল্পীদের জীবনে বন্ধুত্ব নিয়ে ভাবনা, তাদের সময়ের বন্ধুত্ব, বন্ধুদের অবদান প্রভৃতি। একই চ্যানেলের ‘জানার আছে বলার আছে’ও উপস্থাপনা করছেন। ‘এনটিভি পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞ, আমার ওপর আস্থা রাখার জন্য। এদিক দিয়ে আমি ভাগ্যবান। ’

অভিনেতা হিসেবেও জায়গা করে নেওয়ার লক্ষ্যে নেমেছেন ইভান। তার অভিনীত প্রথম নাটক তারানা হালিম পরিচালিত ‘রেড কার্ড’ (চ্যানেল আই)। এতে স্বল্প উপস্থিতির একটি চরিত্রে অভিনয় করেন। তবে প্রথম অভিনীত টিভি নাটক সাইফুর রুবেলের ‘সমাপ্তি’। এ ছাড়া একক নাটকের তালিকায় খালিদ মাহমুদ মিঠুর ‘বাড়ি ২০০৯’, ‘ঋণ শোধ’ ও ‘নয়ন সম্মুখে সেই বাড়ি’, মাহবুব হাসান পল্লবের টেলিছবি ‘প্রডিউসার চাই’, ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে মাসুদ মহিউদ্দিনের ‘সুবর্ণ স্বপ্ন’, রহমতুল্লাহ তুহিনের ‘ক্ষণিকালয়’-সহ ৩০টি কাজ করেছেন। রেডিওর কারণে বিরতি পড়ে অভিনয়ে। এখন আবার নিয়মিত হচ্ছেন নাটকে। ‘সাম্প্রতি সময়ে নিজেকে একটু গুছিয়ে ধীরেসুস্থে ভালো কিছু সুযোগের মাধ্যমে আবার নাটকে শুরু করেছি। ’

এর মধ্যে ঈদে আরটিভির জন্য ইমেল হকের ‘টিউন অব লাভ’ (তিশা, নিশো), আসিফ ইকবাল জুয়েলের ‘ভিন্নরকম প্রেম’ (নাঈম, শখ), আবদুল্লাহ আল হৃদয়ের ‘নোটিফিকেশন’ নাটকে অভিনয় করেছেন। আগামী মাসে ব্যস্ত থাকবেন আদি মুকাজ্জিরের ‘স্টেটমেন্ট’ (মম), শিমুল সরকারের ‘গণক কাজীর মার্কেট’ নাটকের কাজ নিয়ে। আরেকটি ধারাবাহিক নাটকে অতিথি শিল্পী আরজে হিসেবে অভিনয় করেছেন। এর দৃশ্যায়ন হয়েছে ঢাকা এফএম-এ।

শুধু অভিনয় আর উপস্থাপনাই নয়, ছবির ডাবিংও করেছেন ইভান। ‘একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা এটা। শুরুর দিকে খানিকটা বিব্রত ছিলাম। পরে উপভোগ করতে শুরু করলাম। দারুণ আনন্দ নিয়ে কাজটা করে ফেললাম, শিখলামও অনেক কিছু। ডাবিংয়েও আনন্দ খুঁজে পেয়েছি। তবে কাজটা খুব চ্যালেঞ্জিং। ’

লেখক হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে ইভানের। গত দুইবারের অমর একুশে বইমেলায় দুটি বই বের হয়েছে তার। ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজিতে মাস্টার্স করছেন তিনি। ‘যেহেতু আমার করা কাজগুলোকেই পেশা হিসেবে নেওয়ার ইচ্ছা আছে, তাই কিচুটা হলেও জানা বা বোঝার জন্য ও নিজেকে শানিয়ে নিতে ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়ায় আরেকটি মাস্টার্স করতে চাই। খুব তাড়াতাড়ি সেটা শুরু করবো। ’

ইভানের ছোটবেলা কেটেছে পটুয়াখালি জেলার সুবিধখালি উপজেলায়। খুব দুরন্ত ছিলেন। বাবার কড়া শাসনের সঙ্গে ছিলো মায়ের আদর। সারাদিন ক্রিকেট খেলা, নদীতে জলকেলি, টাকা জমিয়ে ব্যান্ডের গানের অ্যালবাম কেনা, লুকিয়ে গান শোনায় মেতে থাকতেন। নাটকের প্রেমেও পড়েন নাটক দেখতে দেখতে। মঞ্চে নাটক করতেন প্রাইমারি স্কুল থেকে। প্রশংসাও পেয়েছেন অনেক। পড়াশোনায়ও ছিলেন ভালো। সবখানেই মনোযোগ কাড়তে পারতেন।

বাবা গুনগুন করতেন। খুব দরাজ গলা ছিলো তার। শুনে মুগ্ধ হতো ছেলে। মা ছিলেন সংস্কৃতিমান। তবে পুরোদস্তুর অভিনেতা হতে চেয়েছিলেন ইভান। তা না হলে ক্রিকেটার। কারণ কী? ‘অভিনেতাদের সবাই অনেক ভালোবাসেন। তারা মানুষের মনে বেঁচে থাকেন। তারা চাইলে সমাজে ভালো ভূমিকা রেখেও মানুষের খুব কাছাকাছি চলে আসেন। তাছাড়া ছোটবেলায় মঞ্চে নাটক করতে গিয়ে অভিনয়ের প্রেমে পড়ে যাই। ভালোবেসে ফেলি খুব। আর অন্যকিছু মাথায় আসেনি তারপর থেকে। বেড়ে ওঠার সঙ্গে ইচ্ছেটাও বড় হয়েছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৫
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ