ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

পিপীলিকার পাখা গজায় ডলারের তরে!

বৃষ্টি শেখ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৯ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৫
পিপীলিকার পাখা গজায় ডলারের তরে!

অনেকে কথায় কথায় বলেন- পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে! কথাটাকে হলিউডে নিয়ে গেলে হয়ে যাবে পিপীলিকার পাখা গজায় ডলারের তরে! বিশ্বাস হচ্ছে না? হলিউড টপচার্টের দিকে তাকালে সেই চিত্র পেয়ে যাবেন। উত্তর আমেরিকার বক্স অফিস এখন শাসন করছে পিঁপড়া-মানব! অর্থাৎ ‘অ্যান্ট-ম্যান’।

যুক্তরাজ্যের বক্স অফিসেও টাকার টাওয়ার বানিয়ে ফেলেছে ছবিটি!

মার্ভেল কমিকসের পুঁচকে সুপারহিরো অ্যান্ট-ম্যানকে নিয়ে নির্মিত প্রথম ছবিটি মুক্তি পেয়েছে গত ১৭ জুলাই। এক সপ্তাহে এর আয় হয়েছে ৫ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। এ নিয়ে মার্ভেল স্টুডিওর টানা একডজন ছবি টপচার্টের শীর্ষস্থানে উঠলো। অন্যান্য দেশ থেকে এর আয় হয়েছে আরও ৫ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্য থেকে এসেছে ৪০ লাখ পাউন্ড। এটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ১৩ কোটি ডলার।

গল্পে পিঁপড়া-মানব তার পোশাকের আড়ালে হলেন স্কট ল্যাঙ। তার পরামর্শদাতা ড. হ্যাঙ্ক পাইম। একসময় পৃথিবীকে বাঁচাতে নিজের পথপ্রদর্শকের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পরিস্থিতি তৈরি হয় তার সামনে। নিজের ভেতরের নায়ককে তখন বাইরে নিয়ে আসে স্কট। হয়ে ওঠে পিঁপড়া-মানব। গল্পের মূল বিষয়বস্তু- মশাল ছড়িয়ে দাও।

‘অ্যান্ট-ম্যান’-এর প্রথম দৃশ্যের সময় ১৯৮৯ সাল। ওই বছর হলিউডে মুক্তি পায় ‘হানি, আই শ্রাঙ্ক দ্য কিডস’। ‘অ্যান্ট-ম্যান’ নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয় তারও ৯ বছর আগে। কমিকসটির স্রষ্টা স্ট্যান লি নিউ লাইন এন্টারমেন্টের সঙ্গে আলোচনাও করেছিলেন। কিন্তু দুটি ছবির গোড়ার দিকে সাদৃশ্য থাকায় দুই দশক ঝুলে থাকে ‘অ্যান্ট-ম্যান’। ২০০৩ সালে মার্ভেলকে ছবিটি নির্মাণের প্রস্তাব দেন পরিচালক এডগার রাইট। তিনি পিঁপড়া-মানবের অন্ধভক্ত। কিন্তু মার্ভেল স্টুডিও পাঁচ বছরের জন্য কিনে নেওয়া ডিজনির সঙ্গে তার মতের অমিল দেখা দেয়। তবে চিত্রনাট্যের বেশিরভাগটা তারই লেখা।

এডগার বাদ পড়ার পর অ্যাডাম ম্যাকে, রুবেন ফ্লেইশার, রাউসন মার্শাল থারবার, নিকোলাস স্টলার, মাইকেল ডাউস ও ডেভিড ওয়াইনের কথা ভাবা হলেও শেষ পর্যন্ত পরিচালনার দায়িত্ব পান পিটন রিড। এর আগে ‘ব্রিং ইট অন’ (২০০০), ‘ডাউন উইথ লাভ’ (২০০৩), ‘দ্য ব্রেক-আপ’ (২০০৬) আর ‘ইয়েস ম্যান’ (২০০৮) ছবিগুলোর পরিচালক ছিলেন তিনি।

‘অ্যান্ট-ম্যান’ ছবিতে নাম ভূমিকায় আছেন পল রাড। পিঁপড়া নিয়ে রীতিমতো পড়াশোনা করেছেন তিনি। পিপীলিকারা কীভাবে একসঙ্গে কাজ করে তা দেখতে বিশাল এক পিঁপড়ার খামারও কেনেন ৪৬ বছর বয়সী এই অভিনেতা। ওই একতা তাকে এতোই অনুপ্রাণিত করেছে যে, ছবির কাজ শেষ হওয়ার পরও খামারটি রেখে দিয়েছেন পল। তার পেশীর কারণে পিঁপড়া-মানবের পোশাক পাল্টাতে হয়েছিলো। সুপারহিরো চরিত্রে মানিয়ে নেওয়ার জন্য কঠোর প্রশিক্ষণ নিয়ে পেশীর আকার বাড়ান তিনি। এবারই প্রথম মার্ভেল সুপারহিরোর ভূমিকায় দেখা গেলো তাকে। যদিও এ চরিত্রে আরও অনেকের কথা ভাবা হয়েছিলো। দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন জোসেফ গর্ডন-লেভিট ও ইউয়ান ম্যাকগ্রেগর। এ ছাড়া আড্রিয়ান ব্রডি নিজে থেকেই পিঁপড়া-মানব হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।

পিঁপড়া-মানবের পরামর্শদাতা ড. হ্যাঙ্ক পাইম চরিত্রেও কয়েকজনের কথা ভাবা হয়েছিলো। এর মধ্যে স্টিভ বুশেমিকে খুব করে চেয়েছিলো মার্ভেল। কিন্তু সময় ফাঁকা না থাকায় শন বিন, পিয়ার্স ব্রসনান আর গ্যারি ওল্ডম্যানের কথা মাথায় এসেছিলো সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু মার্ভেলের দ্বিতীয় পছন্দ মাইকেল ডগলাসকে নেওয়া হয় শেষমেষ। মার্ভেল ছবিতে বাবাকে সন্তানরা দেখতে চায় বলেই কাজ করতে সম্মতি জানান ৭০ বছর বয়সী এই মার্কিন অভিনেতা। ছবিটির শুরুতে তাকে দেখে চমকে গেছেন অনেকে। কারণ প্রযুক্তির সহায়তায় তার বয়স কমিয়ে ফেলা হয়েছে ৩০ বছর! এজন্য রসিকতার সুরে তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে আমার শুরুর দিককার কোনো ছবির প্রিক্যুয়েলে আছি। ’

আগামীতে পাইমের স্ত্রী জ্যানেট ভ্যান ডাইন অর্থাৎ ওয়াস্প চরিত্রে স্ত্রী ক্যাথেরিন জেটা-জোন্স অভিনয় করলে ডগলাসের ভালো লাগবে বলেও জানান। এ ছবিতে চরিত্রটিতে হেইলি লোভিটকে স্বল্প সময় দেখা গেলেও মুখে ছিলো না সংলাপ। চিত্রনাট্যে চরিত্রটির গুরুত্ব থাকা অবস্থায় এমা স্টোন আর রাশিদা জোন্সকে নেওয়ার পরিকল্পনা ছিলো। পরে ম্যারি এলিজাবেথ উইনস্টিড কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।

‘অ্যান্ট-ম্যান’ ছবিতে পাইম-জ্যানেট দম্পতির মেয়ে হোপ ভ্যান ডাইনের ভূমিকায় আছেন ইভাঞ্জেলিন লিলি। তবে নির্মাতাদের প্রথম পছন্দ ছিলেন জেসিকা চ্যাস্টেইন। কিন্তু সময় ফাঁকা না থাকায় তাকে সরে যেতে হয়েছে। মজার বিষয় হলো, ক্যাব ড্রাইভার চরিত্রে অভিনয় করা গ্যারেট মরিস ১৯৭৫ সালে ‘স্যাটারডে নাইট লাইভ’ সিরিজে পিঁপড়া-মানব হিসেবে হাজির হয়েছিলেন।  

বাস্তবের চেয়ে একটু কম বিপজ্জনক ও বন্ধুভাবাপন্ন পিঁপড়া ডিজাইন করা হয়েছে এ ছবিতে। তাদের পা তুলনামূলকভাবে বেশি লম্বা। সামনের পা-গুলো তারা ব্যবহার করে হাতিয়ার হিসেবে। ‘অ্যান্ট-ম্যান’ই নতুন গড়ে ওঠা পাইনউড আটলান্টা স্টুডিওতে শব্দসজ্জার কাজ করা প্রথম ছবি। এর ব্যাপ্তি এক ঘণ্টা ৫৭ মিনিট। মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের ছবি হিসেবে এটাই সবচেয়ে ছোট দৈর্ঘ্য। সময় কম হলেও আয়ের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাই এর দ্বিতীয় কিস্তি তৈরি হবে এটা নিশ্চিত। তার আগে আগামী বছর ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা : সিভিল ওয়ার’ ছবিতে দেখা মিলবে পিঁপড়া-মানবের।

বাংলাদেশ সময় : ২০০৮ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৫
বিএসকে/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ