ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

ঝুলন্ত নয়, উড়ন্ত সেতু!

খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৫
ঝুলন্ত নয়, উড়ন্ত সেতু! একে আজাদ সেতু / ছবি: নূর /বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সেতুর কৈশোরের স্মৃতি জুড়ে ঘোরাফেরা করে একজোড়া চোখ। নির্লিপ্ত, শান্ত অথচ অনুসন্ধানী।

চোখজোড়া তার বাবার। বাবা পুলিশ কর্মকর্তা, ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ। আজকে যে তিনি একে আজাদ সেতু হয়ে উঠেছেন, দাপিয়ে মঞ্চ কাঁপাচ্ছেন, টিভি পর্দা, সিনেমাতেও; এসবে চোখজোড়ার অবদান রয়ে গেছে অনেক।

বাবা তার অপরাধের সূত্র খুঁজে গেছেন সারাটা জীবন। ওই চোখের আদল পেয়েছেন সেতু। জন্ম থেকেই তিনি দেখছেন শহর ঢাকা, কল্যাণপুর। খুঁজেছেন অলিগলি। আরেকটু বড় হয়েছেন যখন, খুঁজতে শুরু করেছেন চরিত্র। ভদ্র, ভিখিরি, বাটপার, প্রতারক, অভিজাত, মধ্যবিত্ত- আর যাই হোক, এ শহরে বিচিত্র চরিত্রের অভাব নেই!

সেতু প্রায়ই লোকাল বাসে উঠে পড়েন। ফুটপাত ধরে হাঁটেন মাঝে মধ্যে। এগুলোই সেতুর পাঠশালা। আর তিনি যা শিখছেন প্রতিদিন, তারই প্রতিফলন মঞ্চ, টিভিপর্দা, চলচ্চিত্র। মঞ্চে তিনি আছেন কতো বছর হবে? ‘এইটটিন ইয়ারস’- সেতুর ভারি কণ্ঠে অসম্ভব দৃঢ়তা।

এর আগে সেতু দিব্যি পড়ালেখা করছিলেন। বিজ্ঞানের ছাত্র তিনি। মেডিকেল সাইন্সে পড়বেন, ডাক্তার হবেন- এমন স্বপ্নও ছিলো একসময়। বাবা চেয়েছিলেন, ছেলে তার মতোই পুলিশ অফিসার হোক। ওসব কিচ্ছু হওয়া হয়নি সেতুর। হয়তো হতো, যদি অভিনয়ের ঘ্রাণটা না ঢুকতো নাকে। তিনি এখন আছেন মঞ্চ নাটকের দল সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারের সঙ্গে।

থিয়েটার পাড়ার বাইরে গেলে সেতুকে আগে কেউ চিনতো না তেমন একটা। এখন চেনে। সেতু মানে ময়লা গায়ের রঙ, লম্বা, মেদহীন, ভারী কণ্ঠ, দেখতে গম্ভীর অথচ উচ্ছল; শুধু এগুলোতেই সীমাবদ্ধ নয়। তার সম্পর্কে দর্শক এখন জানে আরও বেশিকিছু।

সেতু মানে ‘ফাটিয়ে দেন’, চরিত্রকে হাতের মুঠোয় নিয়ে ভেঙ্গেচুরে ছুঁড়ে দেন ইচ্ছেমতো আদল দিয়ে। দর্শকদের এই বিশ্বাস ‘দেশা দ্য লিডার’-এর পর থেকে। সৈকত নাসিরের এ ছবিটিতে যদিও গোয়েন্দা পুলিশ সেতুর উপস্থিতি অতোটা বেশি ছিলো না। কিন্তু যতোক্ষণ ছিলেন, মাতিয়ে রেখেছিলেন।

এটাই কিন্তু তার প্রথম ছবি নয়। এর আগেও করেছেন জুবায়ের বাবুর ‘দ্য ফ্লোটিং ম্যান’, সামিয়া জামানের ‘আকাশ কতো দূরে’; আছে সাইফ সুমনের ‘বিবেক’ ও কিশোর মাহমুদের ‘বিষ’। থামিয়ে দিলেন সেতু। বললেন, ‘বিষ-এর কাজ কিন্তু এখনও চলছে। আর ‘সুপারম্যান’-এর কথাটা একটু বললে ভালো হয়। ওটা আমার ক্যারিয়ারের একটা বড় মোড়’।

‘সুপারম্যান’ মেজবাউর রহমান সুমনের টিভি ফিকশন। সেই কবের! ২০১২ সালের। এখনও সেতু ওটাকেই টেনে আনেন বারবার। আনতেই হয়। আনতে হয় তো আরও কতোকিছু! তার বোনদের কথা- যাদেরকে কিশোর সেতু দেখেছেন বাড়িতে গান করতে, তার বাবার অভিনয়ের শখের কথা, মঞ্চে, শিল্পকলার মাঠে কাটিয়ে দেওয়া আঠারোটা বছরের প্রত্যেকটা দিনের কথা, সংগ্রাম-ছোটাছুটি-টানাপোড়েন-হতাশা-জেগে ওঠা!

কিন্তু জমিয়ে শোনার অথবা শোনানোর মতো অতখানি অবসর কই! তবে শেষ কথা একটাই, সেতুর এখন ওড়ার সময়।

বাংলাদেশ সময় : ১৩৫৭ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০১৫
কেবিএন/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ