ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

জুরাসিক ওয়ার্ল্ডে স্বাগতম

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১১ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৫
জুরাসিক ওয়ার্ল্ডে স্বাগতম ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ ছবির দৃশ্যে ক্রিস প্রাট ও ব্রাইস ডালাস হাওয়ার্ড

ডাইনোসরদের নিয়ে সাজানো জুরাসিক ওয়ার্ল্ডে ঘুরতে যাওয়ার আগ্রহ কার না হবে! সমুদ্র পাড়ি দিয়ে শাটল ট্রেনে করে জুরাসিক ওয়ার্ল্ডে প্রবেশ করে দুই কিশোর। জুরাসিক পার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা জন হ্যামন্ডের পরিকল্পনামতো নাবলার দ্বীপ এখন ডাইনোসরদের অভয়ারণ্য।

সেখানেই জুরাসিক ওয়ার্ল্ডের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, এক দশকের গবেষণা শেষে তারা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন হাইব্রিড ডাইনোসর। ৪০ ফুটেরও বেশি উচ্চতার এই ডাইনোসরকে নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন পার্কের অন্য ডাইনোসরদের নিয়ে গবেষণা করতে আসা প্রাণিবিদ ওয়েন। তার আশঙ্কাই শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়। ভয়ঙ্কর এই দানবের হাত থেকে শেষ পর্যন্ত পার্কে আসা পর্যটকদের উদ্ধার করতে পারবেন তো ওয়েন?

এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আগামী ১২ জুন বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত ছবি ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’। অবশ্য একদিন আগেই আজ বৃহস্পতিবার (১১ জুন) ঢাকায় বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে এর প্রাক-প্রদর্শনী হবে। সাধারণ দর্শকরা নির্ধারিত টিকেট মূল্য দিয়ে এদিন থেকেই ছবিটি উপভোগ করতে পারবে। এবারই প্রথম স্টার সিনেপ্লেক্সে প্রাক-প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে, হলিউডে এটাকে বলা হয় স্নিক প্রিভিউ।

বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ডাইনোসর নিয়ে ১৯৯৩ সালে স্টিভেন স্পিলবার্গ নির্মাণ করেন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি-নির্ভর ছবি ‘জুরাসিক পার্ক’। ১৯৯৩ সালে এ সিরিজের প্রথম ছবি মুক্তি পায়। ক্লোন পদ্ধতিতে তৈরি করা ডাইনোসরের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা আইলা নুবলার দ্বীপে একটি বিনোদন পার্ক গড়ে তোলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের আগে জন হ্যামন্ড কয়েকজন বিজ্ঞানীকে পার্ক পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানান। তারা দ্বীপে গিয়ে ডাইনোসর দেখে বিস্মিত হন। কিন্তু ষড়যন্ত্রের কারণে কিছু ডাইনোসর বিদ্যুৎবেষ্টিত খাঁচা ভেদ করে বাইরে চলে আসে। বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের হাত থেকে বাঁচার জন্য দ্বীপ থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। এ রকম গল্প নিয়েই জুরাসিক পার্কের কাহিনি গড়ে উঠেছে। অস্কারের ৬৬তম আসরে চারটি শাখায় পুরস্কার পায় এটি।

১৯৯৩ সালে স্টিভেন স্পিলবার্গ পরিচালিত ‘জুরাসিক পার্ক’ মুক্তির পর হইচই পড়ে যায় চারদিকে। এতে বিশাল আকৃতির সব ডাইনোসরের ধুন্ধুমার কীর্তিকলাপ দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান দর্শক। এর অভিনয়শিল্পীরা হলেন স্যাম নেইল, লরা ডার্ন ও জেফ গোল্ডব্লাম। এটি মোট আয় করেছে ৯২ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি। সে সময় পর্যন্ত সর্বকালের সবচেয়ে বেশি উপার্জনকারী ছবি ছিল এটাই। বর্তমানে আয়ের দিক দিয়ে এর স্থান দশম। আর ‘জুরাসিক পার্ক’ সিরিজের তিনটি ছবির মোট আয় ১.৯ বিলিয়ন ডলার। ছবিটির ব্যাপক সাফল্যের রেশ ধরে এর দুটি সিক্যুয়েল ‘দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড: জুরাসিক পার্ক’ এবং ‘জুরাসিক পার্ক থ্রি’ মুক্তি পায় যথাক্রমে ১৯৯৭ ও ২০০১ সালে। মাইকেল ক্রিচটনের উপন্যাস থেকে স্টিভেন স্পিলবার্গ ‘জুরাসিক পার্ক’-এর ভাবনা পেয়েছিলেন। প্রথম দুটির পরিচালক স্পিলবার্গ হলেও ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জুরাসিক পার্ক থ্রি’ পরিচালনা করেন জো জনস্টন। তবে নেপথ্যে ছিলেন স্টিভেন স্পিলবার্গ।

‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’ও ইউনিভার্সাল পিকচার্সের সঙ্গে যৌথভাবে প্রযোজনা করেছেন স্পিলবার্গ। চার বছর আগে সান ডিয়েগো কমিক-কনে প্রথমবার ছবিটি নির্মাণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে মুখ খোলেন তিনি। এর মূল চিত্রনাট্য তৈরিতে সময় লেগেছে মাত্র তিন সপ্তাহ। ২০১৩ সালের জুনেই এর দৃশ্যধারণ শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সবাই। কিন্তু স্পিলবার্গ আরও ভালো নিয়ে ভাবছিলেন। তাই ওই বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি পান্ডুলিপি অনুমোদন করেন।

২০১৪ সালের এপ্রিলে শুরু হয় চিত্রায়ন। এবারই প্রথম সিরিজের কোনো ছবির দৃশ্যায়ন হয়নি লসঅ্যাঞ্জেলেসে। ছবিটির নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সাজানো হয়েছে অরল্যান্ডো ফ্লোরিডায় ইউনিভার্সাল স্টুডিওস থিম পার্কের গবেষণার পর। কিন্তু অল্প কয়েকজনকে নিয়ে ও পুরনো কিছু মনিটর নিয়ে গড়া ইউনিভার্সাল স্টুডিওসের অবয়ব দেখে খুব একটা খুশি ছিলেন না পরিচালক। এ কারণে শিল্প নির্দেশকরা কিছু অংশ সাজান নাসা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ অবলম্বনে। ছবিটির বেশিরভাগ দৃশ্যায়ন হয়েছে ৩৫ মিমি ক্যামেরায়।

ছবিটিতে প্রধান প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন ক্রিস প্র্যাট, ব্রাইস ডালাস হাওয়ার্ড, জেইক জনসন, জুডি ব্রিয়ারসহ আরও অনেকে। বলিউড অভিনেতা ইরফান খানও আছেন একটি চরিত্রে। ২২ বছর আগে ‘জুরাসিক পার্ক’ ছবির প্রথম প্রদর্শনী দেখেছিলেন ক্রিস প্রাট। এটা তার প্রিয় ছবির মধ্যে অন্যতম। এতে জন হ্যামন্ড চরিত্রের মূর্তি দেখা যাবে। ‘জুরাসিক পার্ক’ (১৯৯৩) ও ‘দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড : জুরাসিক পার্ক’ (১৯৯৭) ছবিতে এ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন স্যার রিচার্ড অ্যাটেনবোরো। নতুন ছবিতে তাকে একরকম শ্রদ্ধাই জানিয়েছেন পরিচালক কলিন।

এবারই প্রথম ‘জুরাসিক পার্ক’ সিরিজের ছবিতে নেই স্যাম নেইল, লরা ডার্ন ও জেফ গোল্ডব্লামের কেউই। এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি পরিচালক কলিন ট্রেভরোর। তিনি যোগ দেওয়ার আগে স্পিলবার্গ ছবিটির নাম রাখেন ‘ইব টাইড’। পরবর্তীতে এর নাম রাখা হয়েছিলো ‘জুরাসিক পার্ক: এক্সটিংশন’। ছবিটির গল্প ভেবেছেন স্টিভেন স্পিলবার্গ ও মার্ক প্রোটোসেভিচ। ডাইনোসরের পাশাপাশি হাঙর দেখানোর পরিকল্পনাও কলিনের। স্পিলবার্গের ‘জজ’ (১৯৭৫) ছবিতে অনুপ্রাণিত হয়ে এটা ভেবেছেন তিনি।

আগের ছবিগুলোর ডাইনোসরদের তৈরি করেছিলেন স্ট্যান উইনস্টন। ২০০৮ সালে প্রয়াত হয়েছেন তিনি। নতুন ছবির ডাইনোসরদের বানিয়েছে লিগ্যাসি ইফেক্টস নামের একটি স্টুডিও। এটি গড়ে তুলেছেন উইনস্টনের ওয়ার্কশপের প্রাক্তন কর্মচারীরা। সিরিজের কোনো ছবিতে এবারই প্রথম ডাইনোসর থিম পার্ক পুরোপুরি উন্মুক্ত করা হলো। প্রথম ছবিতে এটা ছিলো নির্মাণাধীন। আর ‘দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড : জুরাসিক পার্ক’ (১৯৯৭) ছবিতে পার্কটির কাজ পুরোপুরি শেষ দেখানো হয়নি।

‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’কে বলা হচ্ছে, প্রথম ছবির দ্বিতীয় কিস্তি। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জুরাসিক পার্ক’ ছবির সরাসরি সিক্যুয়েল ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড’। এ প্রসঙ্গে ছবির প্রযোজক ফ্র্যাঙ্ক মার্শাল বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রথম ছবিতে যা করেছিলাম সেখানে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে থেকেই ছবিটির সরাসরি সিক্যুয়েল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ’

বাংলাদেশ সময় : ০৯০৬ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৫
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ