ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তারার ফুল

সাবা যেন ভোরের স্নিগ্ধ হাওয়া

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৫
সাবা যেন ভোরের স্নিগ্ধ হাওয়া সোহানা সাবা/ছবি: নূর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সোহানা সাবা নামের অর্থ কী? উত্তরটা জানতে হলে নামটা দু’ভাগ করতে হবে। সোহানা অর্থ সুন্দর।

আর সাবা অর্থ ভোরের স্নিগ্ধ হাওয়া। সেই সৌন্দর্য এই বাংলা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ওপারেও। তিনি এখন দুই বাংলার অভিনেত্রী। কলকাতায় ‘ষড়রিপু’ নামের একটি ছবিতে দেখা যাবে তাকে। নতুন ইনিংস শুরুর আগে এবং নতুন দর্শকের জন্য কাজ করে ফিরে এসে বাংলানিউজের সঙ্গে মনখুলে আড্ডা দিলেন তিনি।

২০১৫ সালটা সাবার জন্য স্পেশাল হয়ে উঠছে একে একে। ওপার বাংলায় কাজ করার মধ্য দিয়ে তার অনেকদিনের ইচ্ছা পূর্ণ হলো। ‘এ ছবিতে আমার চরিত্রটা খুব ইন্টারেস্টিং৷ এমন একটা ছবিই চাইছিলাম ওপারে কাজ শুরু করার জন্য। সুযোগটা পাওয়ায় হাতছাড়া করিনি। এটা আমার কাছে স্বপ্নপূরণের মতো। আঙ্গিক বুঝে বলতে পারি, ছবিটা ভালো হয়েছে। ’

‘ষড়রিপু’ ছবিতে রাকা চৌধুরী চরিত্রে অভিনয় করছেন সাবা। আকর্ষণীয় মেয়েটার বয়স ২৫ বছর। শুধু সুন্দরী আর আবেদনময়ীই নন, পাশাপাশি বুদ্ধিমতীও তিনি। নিজের যৌন আবেদনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন রাকা। হীরা সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে তার। পরিচালক অয়ন চক্রবর্তীর দেওয়া রাকার বৈশিষ্ট্যগুলো এমন। সম্প্রতি ‘ষড়রিপু’র কাজ শেষ করে এসেছেন সাবা। তিনি বললেন, ‘ওখানে আমাদের মতোই কাজ হয়। তফাতটা ১৯-২০। মূল তফাৎটা হলো ওরা একটু বেশি পেশাদার। নির্মাতা থেকে শুরু করে প্রোডাকশন বয় কিংবা স্পট বয় সবাই নিজের কাজ শতভাগ গুরুত্ব দিয়ে করে। ’

কলকাতা সাবার খুবই প্রিয় শহর। বছরে দু’বার করে গিয়ে ওখানে খালার বাসায় থাকেন তিনি। কলকাতায় গেলেই ব্যাগভর্তি কেনাকাটা করে ফেরেন। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। তবে আলাদা ব্যাপার ছিলো, টালিউডে অভিষেকের অধ্যায়টা।

বড় পর্দার জন্য এবারই প্রথম ঝলমলে মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করলেন সাবা। খেয়াল করে দেখুন তার আগের পাঁচটি ছবিতেই প্রতিকূলতার মধ্যে থাকা মেয়ের চরিত্রে দেখা গেছে তাকে। কবরীর ‘আয়না’, মোরশেদুল ইসলামের ‘খেলাঘর’ এবং ‘প্রিয়তমেষু’, মুরাদ পারভেজের ‘চন্দ্রগ্রহণ’ এবং ‘বৃহন্নলা’ দেখে থাকলে বোঝা যায়, পর্দায় তিনি যে ধরনের চরিত্রে বেশি কাজ করেছেন বাস্তবের সঙ্গে সেগুলোর বৈপরিত্য চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে পোশাকে। কথা শুনে হাসলেন সাবা, ‘আমিও ব্যাপারটা খেয়াল করেছি। ’ এসব চরিত্রের জন্য নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছেন তিনি? ‘প্রস্তুতির ব্যাপারটা নিয়ে শুধু এটুকু বলবো, ছবিতে কাজ করার সময় শুধু সিনেমাই করি। আর কিছু ভাবি না বা করি না। ’

২০০৬ থেকে ২০১৫- এই নয় বছরে সংখ্যায় কম হলেও নিজের অভিনীত সব ছবিতে সাবার কাজ প্রশংসিত হয়েছে। সামনে মুরাদ পারভেজের আরেকটি ছবিতে অভিনয় করবেন তিনি। শুরুতে অন্য নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করলেও তিনি এখন মুরাদের পরিচালনাতেই কাজ করেছেন বেশি। শেষ দুটি ছবিতে পাওয়া গেছে এই দম্পতিকে। অন্য নির্মাতারা কি তাকে প্রস্তাব দেন না? নাকি নিজেই করেন না? প্রশ্ন দুটির উত্তর সাবা একসঙ্গে দিয়ে বললেন, ‘আমার ছবির সংখ্যা অনেক কম। কাকতালীয়ভাবে মুরাদ আমার পছন্দের একজন পরিচালক, আবার আমার স্বামী। ওর সঙ্গে ছবিতে কাজ করা মানে পছন্দের পরিচালকের সঙ্গে কাজ করা। মোরশেদ চাচার সঙ্গেও দুটি কাজ করা হয়েছে। তিনি ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ ছবিতেও আমাকে নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তেমন বড় চরিত্র ছিলো না ওটা। আর তার আরেকটা ছবিতে ছিলো মূল নায়কের বড় বোনের চরিত্র। সেজন্যই নিতে চাননি তিনি। এমন অনেক ব্যাপার থাকে। আবার কোনো ছবির চিত্রনাট্য এলে আমার ক্যারিয়ারের ধারাবাহিকতার কথা মাথায় রাখতে হয়। প্রতিনিয়তই প্রস্তাব পাই, কিন্তু দুইয়ে দুইয়ে চার হয় না। ‘ষড়রিপু’র ক্ষেত্রে এটা হয়েছে বলা যায়। সত্যি বলতে, স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করলে কোনও ছবিতে কাজ করতে চাই না। ’

এসব শুনলে মনে হতে পারে সাবা একটু বেশি খুঁতখুঁতে। আসলে কি তাই? সাবার মজার উত্তর, ‘আসলে আমি শতভাগ আউলা! সেই সঙ্গে আমি শতভাগ খুঁতখুঁতে। আমার এই খুঁতখুঁত স্বভাব আশেপাশের সবাইকে বিরক্ত আমি জানি। ’

সাবার আগে ওপারের ছবিতে জয়া আহসান আর মাহিয়া মাহি কাজ করেছেন। জয়া নিয়মিত কাজ করছেন। সাবাও কি ‘ষড়রিপু’র জন্য ভালো সাড়া পেলে ওপার বাংলার অন্যরকম কিংবা মূলধারার বাণিজ্যিক ছবিতে আবার কাজ করবেন কি-না জানতে চাইলে বললেন, ‘সময়ই সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেবে। ’ তারপর বললেন, ‘আসলে অভিনয় নিয়ে যেখানে নিরীক্ষা করার জায়গা আছে সেখানেই আমি কাজ করতে রাজি। বাণিজ্যিক ছবিতেও যে নিরীক্ষার জায়গা নেই তা কিন্তু নয়। ছবির ধরণ ভিন্ন হলে অভিনয়ের প্যাটার্নে পরিবর্তন আসে। ’

অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের কস্টিউম ডিজাইনের করেছেন। নাচেও সাবা কম যান না। পাঁচ বছর বয়স থেকেই ক্ল্যাসিক্যাল নাচ শিখেছেন। ছোটবেলায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চিত্রাঙ্গদা’ গীতিনৃত্যনাট্যে অংশ নিয়েছিলেন। তখন তিনি মূল শিল্পীদের পেছনে দলের সঙ্গে নাচতেন। কয়েক বছর আগে বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর হয়ে চিত্রাঙ্গদার চরিত্রে মঞ্চে অভিনয় করেছেন। তবে আপাতত নৃত্যচর্চা হচ্ছে না। নৃত্য পরিচালনা করবেন? ‘না, না। দুইটা একেবারে দুই বিষয়। কস্টিউম ডিজাইনটা কিন্তু নাটকের সময়ে আমাদের সব শিল্পীকেই করতে হয়। চলচ্চিত্রে সবারটা আমি একাই করি। সহশিল্পী আর পরিচালক এ ক্ষেত্রে পূর্ণ সহযোগিতা করেছেন আমাকে। ’

সাবা এখন ঈদের নাটকের কাজ শুরু করেছেন। পাশাপাশি সংসার আর সন্তানকে সামলাতে হয় তাকে। ঘরে থাকলে স্বরবর্ণকে নিয়েই তার দিন কাটে। অন্যসব মায়েদের মতোই সন্তানের যত্নআত্তি নিজ হাতে করেন তিনি। নির্মাতা হিসেবেও কাজ করেছেন সাবা। ‘মেঘ রোদ্দুর ও ‘রমলা’ নামে একটি ফিকশন বানিয়েছেন। চলচ্চিত্র পরিচালনা করবেন? শেষ প্রশ্নের উত্তরে আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে শোনালেন, ‘ইনশাল্লাহ সিনেমা বানাবো। ’

বাংলাদেশ সময় : ১৬৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৫
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ