ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

অনিশ্চতায় মডার্ন ডাইং-রহিমা ফুডে বিনিয়োগের ২৩৪ কোটি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৮
অনিশ্চতায় মডার্ন ডাইং-রহিমা ফুডে বিনিয়োগের ২৩৪ কোটি

ঢাকা: তালিকাচ্যুত করায় অনিশ্চিয়তার মুখে মডার্ন ডাইং ও রহিমা ফুডের বিনিয়োগকারীদের ২৩৪ কোটি টাকা। আর বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও বাজারে কারসাজি ঠেকাতে এ উদ্যোগ বলে দাবি করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ।

 
উৎপাদন বন্ধ থাকায় কোম্পানি দু’টিকে বুধবার (১৮ জুলাই) তালিকাচ্যুত করে ডিএসই। ডিএসইতে লেনদেন বন্ধের কারণে একই দিন দেশের অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) লেনদেন বন্ধ করে কর্তৃপক্ষ।

কেন তালিকাচ্যুত করা হবে না জানতে চেয়ে চিঠি দেয় সিএসই কর্তৃপক্ষ। ফলে কোটি টাকার সম্পদ এখন ‘মূল্যহীন’ কাগজ।
 
ডিএসই ও সিএসইর সচেতনতামূলক সংবাদ পরিবেশনের পরও অতিলোভে পড়ে ভুল কোম্পানিতে ১ কোটি ৩৪ লাখ ১৩ হাজার ৫১টি শেয়ারে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করেছেন। যা টাকার অংকে ২৩৪ কোটি ৪১ লাখ ৪২ হাজার ১৫১ টাকা। ফলে ভুল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে  অর্থ ফেরত পাওয়ার অনিশ্চিতার মুখে পড়েছেন এসব বিনিয়োগকারী।
 
নাম না প্রকাশ শর্তে রহিমা ফুড শেয়ারধারী ডিএসইর এক সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, আমি এক সময় এই কোম্পানির অনেক শেয়ার কিনেছিলাম। এখনও ৫০০ শেয়ার রয়েছে। এতোদিন বাজারে লিস্টেড ছিলো তাই কেনাবেচা করতে পেরেছি। কিন্তু এখন তো কেনাবেচা করতে পারবো না।
 
তিনি বলেন, কোম্পানির যে ঠিকানা দেওয়া আছে সেই ঠিকানায় যোগাযোগের চেষ্টা করেও কারো সন্ধান পাইনি। এখন আমরা কোথায় যাবো। কার কাছে বিচার দেবো।
 
ডিএসই বলেছে, কোম্পানি দু’টি চাইলে ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) মার্কেটে তাদের শেয়ার লেনদেন করতে পারবে। এজন্য কোম্পানি দু'টিকে ওটিসি মার্কেটে লেনদেনের জন্য আবেদন করতে হবে। সেই সঙ্গে কিছু শর্তও পূরণ করতে হবে।
 
কোম্পানি আইন অনুসারে, এখন সিএসই যদি রহিমা ফুডকে তালিকাচ্যুত না করে তবে, ডিএসই ও সিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউজের মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করতে পারবেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু যদি সিএসই ডিএসইর পথ অনুসরণ করে রহিমা ফুডকে তালিকাচ্যুত করে তবে বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির কাছে যেতে হবে।
 
কোম্পানি কর্তৃপক্ষ যদি সুরাহ করতে রাজি না হয় তবে আদালতে যেতো হবে। আর যদি রাজি হয়, তবে সম্পদ বিক্রি করে প্রথম দফায় কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করবে। এরপর কোম্পানির কোনো ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করবে। তারপর যদি টাকা থাকে তবে শেয়ারহোল্ডাররা ভাগ পাবেন।
 
তালিকাচ্যুতির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদনে নেই কোম্পানি দু’টি। তারপরও শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। যা পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের জন্য ক্ষতিকর।
 
তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও পুঁজিবাজারের কারসাজি রোধে কোম্পানি দু’টিকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছে।
 
সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুল রহমান মজুমদার বাংলানিউজেক বলেন, দীর্ঘদিন ধরে উৎপাদন বা ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সিকিউরটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস (১৯৬৯ এর সেকশন ৯এর সাব রুলস ৭ এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিস্টিংরেগুলেশন ২০১৫ এর ৫০(১)) অনুসারে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কোম্পানি দু’টির লেনদেন বন্ধ রাখা হয়েছে।
 
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ডিএসই যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটি আরো আগে নেওয়া উচিৎ ছিলো। তাহলে বিনিয়োগকারীদের কাছে এই বার্তাটি পৌঁছাতো।
 
তিনি বলেন, যে কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ কিংবা অদূর ভবিষ্যতে উৎপাদন চালু হবে না, সেই সব কোম্পানিকে দ্রুত ডিলিস্টেড করা উচিৎ। এক্ষেত্রে যারা ভুল সিদ্ধান্তে বিনিয়োগ করেছেন তারা ধরা খাবেন। এটাই স্বাভাবিক। তাদের জন্য ডিএসই ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু করার নেই।  

ডিএসই জানিয়েছে, ১৯৯৭ সালে তালিকাভুক্ত রহিমা ফুডের ২ কোটি ২০০টি শেয়ার রয়েছে। এই কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ বুধবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৭৪ দশমিক ৭০ টাকায়। সেই হিসেবে কোম্পানির এই শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৩৪৮ কোটি ৪০ হাজার ৩৪ লাখ ৯৪০ টাকা।
 
এর মধ্যে কোম্পানির (ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ৩৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের ২০ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ার) ১ কোটি ২৫ লাখ ২৪ হাজার ১২৫টি শেয়ারধারী বিনিয়োগকারীদের ২১৮ কোটি ৭৯ লাখ ৬৪ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
 
অন্যদিকে মডার্ন ডাইং কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৮ হাজার। যা টাকার অংকে দাঁড়ায় ৪৪ কোটি ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার ৪০০ টাকা। এই টাকার মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ৫ দশমিক ০১ শতাংশ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ৩০ দশমিক ০১ শতাংশ শেয়ার। ৪ লাখ ১০ হাজার ৫৩৬টি শেয়ারের বাজার মূল্য ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৭৭ হাজার ৪৭২ টাকা।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৮
এমএফআই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।