ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

ফিরে দেখা-২০১৬

স্থিতিশীলতার চ্যালেঞ্জেই ছিলো পুঁজিবাজার

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬
স্থিতিশীলতার চ্যালেঞ্জেই ছিলো পুঁজিবাজার

ঢাকা: স্থিতিশীলতার হাতছানি দিয়ে ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে লেনদেন শেষ হয়। বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা ছিলো বাজারে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতেই বাজারের সেই চিত্র পাল্টে যায়। ২০১৬ সালের প্রথম কার্যদিবস থেকে শুরু হয় দরপতন।

দরপতনের সঙ্গে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত বিনিয়োগ সমন্বয় সীমার জটিলতা এবং মার্জিন ঋণে লেনদেনহীন বিও হিসাবগুলোকে ‘পলিসি সার্পোট দেওয়া’সহ বিভিন্ন ইস্যু যোগ হয়। আর ইস্যুগুলোকে কেন্দ্র করে বছরের বেশির ভাগ সময় বাজারে নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত ছিলো।

এতে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও তারল্য সংকট দেখা দেয়। এ অবস্থায় পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনা ছিলো প্রধান চ্যালেঞ্জ।
 
বছরের প্রথম ৭-৮ মাস এ অবস্থায় কাটার পর বাংলাদেশ মাচের্ন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’র (বিএসইসি) বিশেষ উদ্যোগে অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক সাড়া দেওয়ার কারণে ২০১৬ সালের শেষ দিকে পুঁজিবাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরতে শুরু করে।
 
বাজারে বাড়তে শুরু করে লেনদেন ও সূচক। লেনদেন ৩শ’ কোটি থেকে বেড়ে হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়। সূচক ৪ হাজার পয়েন্ট থেকে বেড়ে ৫ হাজার পয়েন্টে অবস্থান করছে। এতে গড়ছে নতুন নতুন রেকর্ডও।
 
অন্যদিকে লাভের আশায় আবারো দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসছেন। পুঁজিবাজার বড় হচ্ছে, নতুন নতুন উদ্যোক্তারা পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করছেন। যা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
 
ডিএসইর সূত্র মতে, বর্তমান সরকার ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের পুঁজিবাজারবান্ধব বিভিন্ন পদক্ষেপে দেশের পুঁজিবাজার অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় গতিশীল ও টেকসই অবস্থানে রয়েছে। দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পুঁজিবাজারের এ গতিশীলতাকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছে৷
 
সূত্র জানায়, বিদায়ী বছরে শিল্প উদ্যোক্তারা বাজার থেকে ১১টি সিকিউরিটিজ প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও’র মাধ্যমে ৮ হাজার ৪৯৩ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করেছেন। আইপিও’র পাশাপাশি এসময়ে ১১টি সিকিউরিটিজ ১১ হাজার ১১৯ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়। ৩টি কোম্পানি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ৩ হাজার ৬৫৮ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করে। ২০১৬ সালে মোট তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ১২৬টি কোম্পানির ২ হাজার ৫০৮ লাখ বোনাস শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে ২৫ হাজার ৮৫ লাখ টাকা মূলধন বৃদ্ধি হয়।
 
বাজারে আস্থা বাড়ায় বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ২০১৬ সাল অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছে। বিদায়ী বছরে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের মোট লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৭,৭৩২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৫০,৫৭০ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয় ও ৩৭,১৬২ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি।
 
এ বিষয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম মাজেদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পুঁজিবাজার অত্যন্ত সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর জায়গা। এখানে যেকোনো ধরনের মন্তব্যেই বাজারকে মারাত্মক প্রভাবিত করে। এতে বেশি প্রভাবিত হয় সাধারণ বিনিয়োগকারী। সেই সঙ্গে নষ্ট হয় বিদেশীদের কাছে পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি।
 
তিনি বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার একটি অগ্রসরমান ও সম্ভাবনাময় পুঁজিবাজার। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত এই পুঁজিবাজার সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্যের কারণে বছরের ২-৩ মাস বাজারের গতি কিছুটা নিম্নমুখী থাকলেও তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। সামগ্রিকভাবে পুঁজিবাজারের সব ক্ষেত্রে গতিশীলতা বজায় রেখেই বছরটি শেষ হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

২০১০ সালে পুঁজিবাজার বিপর্যয়ের পর সরকার, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টক এক্সচেঞ্জের গতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে তা অক্ষুন্ন রাখতে এবং তথ্য প্রযুক্তির সব সুযোগ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের কাছে লেনদেনের সর্বোত্তম সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ডিএসইতে ‘ডিএসই-মোবাইল’ ভার্সন চালু করেছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন থেকে শুরু করে সব ধরনের তথ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে সহজে তুলে ধরতে ডিএসই'র ওয়েবসাইটে কোম্পানি প্রোফাইলের আপডেট ভার্সন চালু করেছে। এছাড়াও ডিএসই’র নিজস্ব বুক বিল্ডিং সিস্টেমের সফটওয়্যার এবং বিনিয়োগকারীসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিভিন্ন সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম চালু করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
এমএফআই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।