ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

টাইগারদের বিশ্বকাপ ব্যর্থতা, ঘরের মাঠে সাফল্যের বছর

মোস্তফা শামীম, নিউজরুম এডিটর, স্পোর্টস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
টাইগারদের বিশ্বকাপ ব্যর্থতা, ঘরের মাঠে সাফল্যের বছর

শেষ হতে যাওয়া ২০২১ সালটা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য কঠিনই ছিল বলা যায়। অভিজ্ঞ অনেক ক্রিকেটারের অবর্তমানে পুরুষ দলকে বেশ কয়েকটি সিরিজ ও টুর্নামেন্টে হতাশায় কাটাতে হয়েছে।

দলের বাজে পারফরম্যান্সে উঠে আসে পাইপলাইনে দুর্বলতাও।

তবে অন্যদিকে মেয়েদের ক্রিকেট এনে দিয়েছে খুশির সংবাদ। যেখানে প্রথমবারের মতো টাইগ্রেসরা ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে।

দেখে নেওয়া যাক ২০২১ সালে ক্রিকেটে বাংলাদেশ কেমন পারফরম্যান্স করল।

ছেলেরা এবছর ৭টি টেস্ট, ১২টি ওয়ানডে ও ২৪টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে। ওয়ানডেতে গত কয়েক বছরের মতো এবারও সাফল্য পেয়েছে টাইগাররা। ৪টি সিরিজের মধ্যে ৩টিতেই জয়লাভ করেছে, হেরেছে একটিতে। যেখানে ৮টি ৫০ ওভারের ম্যাচে জয়ের বিপরীতে হেরেছে ৪টিতে। তবে সাদা পোশাকে সেই ব্যর্থতাই ছিল। ৩টি সিরিজ হারের বিপরীতে একমাত্র খর্বশক্তির জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এক ম্যাচের সিরিজ জিতেছে। সব মিলিয়ে টেস্টে মাত্র একটি জয় পেয়েছে, হেরেছে ৫টিতে, একটি ম্যাচ ড্র।

এবছর বাংলাদেশ নিজেদের রেকর্ড সর্বোচ্চ ২৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে। যেখানে ১১টি জয়ের বিপরীতে হেরেছে ১৩টি। তবে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় ছিল অসাধারণ কীর্তি। যদিও মিরপুর শেরে বাংলার উইকেট নিয়ে বেশ সমালোচনাও ছিল। উল্টোদিকে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জিতলেও, নিউজিল্যান্ড (৩-০) ও পাকিস্তানের (৩-০) বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ ছাড়াও আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভরাডুবি ছিল চোখে পড়ার মতো।

করোনা ভাইরাসের প্রকোপ থেকে বের হয়ে ঘরের মাঠে বছরের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ আয়োজন করে বাংলাদেশ। এই সিরিজটি ছিল বাংলাদেশের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জের। কেননা প্রথমবারের মতো ওয়ানডে দলের অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক ঘটে তামিম ইকবালের। এছাড়া এক বছরের আইসিসি নিষেধাজ্ঞা শেষে ক্রিকেটে ফেরেন সাকিব আল হাসান।

দ্বিতীয়সারির ক্যারিবীয়রা বাংলাদেশ সফরে এসে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে খেলতে নামে। এই ফরম্যাটে শক্তিশালী বাংলাদেশ সমর্থকদের হতাশ করেনি। সিরিজটি ৩-০তে সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশ করে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই ১১৩ রান ও ৬টি উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা নির্বাচিত হন সাকিব।

তবে এই আনকোরা দলের বিপক্ষে ওয়ানডের সাফল্য টেস্টে নিয়ে যেতে পারেনি স্বাগতিকরা। প্রথম টেস্টে বেশ আশা জাগালেও সিরিজে ২-০তে হোয়াইটওয়াশ হয়ে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ দল এরপর নিউজিল্যান্ড সফরে যায়। যেখানে অধরা একটি জয়ই দেশটির জন্য অনেক কিছু ভাবা হয়। কিউইদের মাটিতে কখনো কোনো ফরম্যাটে না যেতা বাংলাদেশ প্রথমে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জয়ের খুব কাছে গিয়ে হেরে যাওয়ায় সিরিজ ৩-০তে হোয়াইটওয়াশ হয়।

ওয়ানডের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও। এবার বাংলাদেশ নূন্যতম লড়াইটাও না করতে পেরে ৩-০তে ধবলধোলাই হয়।

এপ্রিলে বাংলাদেশ দল শ্রীলঙ্কায় ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে যায়। যেখানে পাল্লেকেলেতে প্রথম ম্যাচ ড্র করে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেয়, তবে দ্বিতীয় টেস্টে ২০৯ রানের বড় ব্যবধানে হেরে সিরিজ ১-০তে খোয়ায়।

পরের মাসে সেই শ্রীলঙ্কা ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসে। সেবার এক ম্যাচ হাতে রেখেই স্বাগতিকরা সিরিজ ঘরে তোলে। তবে শেষ ম্যাচ হেরে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিতে পারেনি। দারুণ ব্যাটিং করে সিরিজ সেরা নির্বাচিত হন মুশফিকুর রহিম।

বছরের দ্বিতীয় ভাগ তথা জুলাইতে জিম্বাবুয়ে সফরে একটি টেস্ট, ৩ ম্যাচের ওয়ানডে ও ৩টি টি-টোয়েন্টি খেলতে যায় বাংলাদেশ। যেখানে টেস্টে ২২০ রানের দারুণ জয় পায়, ওয়ানডেতে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় ও টি-টোয়েন্টিতে ২-১ ব্যবধানে জয়। এই সিরিজে বাংলাদেশের সব গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটাররাই জ্বলে ওঠেন।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে আগস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে আসে অস্ট্রেলিয়া। যেখানে অজিদের ৪-১ ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে টাইগাররা। এটি ছিল দলটির বিপক্ষে যেকোনো ফরম্যাটে বাংলাদেশের প্রথম সিরিজ জয়। যদিও মিরপুরের স্লো পিচ নিয়ে বেশ সমালোচনা ছিল। অলরাউন্ড পারফর্ম করে সিরিজ সেরা হন সাকিব।

বিশ্বকাপ ঘনিয়ে আসার কিছুদিন আগেই তাসমান পাড়ের আরেক দেশ নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশে ৫ ম্যাচে টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে আসে। সেপ্টেম্বরের সেই লড়াইয়ে কিউইরা কিছুটা লড়াই করতে পারলেও বাংলাদেশ ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করে। স্পিনার নাসুম আহমেদ অসাধারণ বল করে সিরিজ সেরা নির্বাচিত হন।

ঘরের মাঠে দুটি সাফল্যে ঘেরা সিরিজের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানের মাটিতে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সপ্তম আসরে খেলতে যায় বাংলাদেশ। তবে এই আসরে লাল-সবুজরা সবচেয়ে বেশি হতাশা উপহার দেয়। তারা শুধুমাত্র প্রথম রাউন্ডের দুটি ম্যাচই জিততে পারে। যেখানে সুপার টুয়েলভে উঠতে পারলেও সেখানে ৫ ম্যাচের সবকটিতেই পরাজয় বরণ করে।

বিশ্বকাপ শেষেই আসরের অন্যতম শক্তিশালী দল পাকিস্তান বাংলাদেশ সফরে আসে। যা শুরু হয় ৩ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ দিয়ে। এই সিরিজে স্বাগতিক দলে অনেক নতুন মুখ নেওয়া হলেও সিরিজটিতে হোয়াইটওয়াশ হতে। এরপর দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও বাংলাদেশ ২-০তে হোয়াইটওয়াশ হয়। যদিও দ্বিতীয় টেস্টে ড্র করার খুব ভালো সম্ভাবনা ছিল।

২০২১ সালে সব ফরম্যাট মিলিয়ে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটার লিটন দাস। ডানহাতি এই ব্যাটার ৩৯ ইনিংসে ২৭.১২ গড়ে ২টি সেঞ্চুরিসহ ১০৫৮ রান করেছেন। আর বোলিংয়ে সেরা ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি ৩২ ইনিংসে ২০.৬৬ গড়ে ৪৮ উইকেট নিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।