ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সালতামামি

সালতামামি-২০২১

এটিএম শামসুজ্জামান-কবরীদের হারানোর বছর

বিনোদন ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২১
এটিএম শামসুজ্জামান-কবরীদের হারানোর বছর তারকাদের মধ্যে ২০২১ সালে যারা প্রয়াত হয়েছেন

ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে বিদায় নিতে চলছে ২০২১ সাল। ২০২০ সালের মতোই চলতি বছরটিও কেটেছে করোনার আবহে।

এ বছরটিতেও দেশীয় শোবিজের বেশ কয়েকজন গুণী তারকা প্রয়াত হয়েছেন। এদের কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে, আবার কেউ বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছেন।  

চলুন, দেখে নেওয়া যাক প্রিয় তারকাদের মধ্যে ২০২১ সালে যারা প্রয়াত হয়েছেন-

আশা চৌধুরী
চলতি বছরের শুরুতেই ৪ জানুয়ারি মধ্যরাতে মিরপুরের দারুস সালাম এলাকায় ট্রাক চাপায় মারা যান ছোটপর্দার অভিনেত্রী আশা চৌধুরী। বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিশুশিল্পী ছিলেন আশা চৌধুরী। একক নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতেন তিনি। টেলিফিল্ম ও ধারাবাহিক নাটকেও অভিনয় করতে দেখা গেছে তাকে।  

এটিএম শামসুজ্জামান
চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি সূত্রাপুরের নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বরেণ্য অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান। ১৯৬৫ সালে অভিনেতা হিসেবে এটিএম শামসুজ্জামানের সিনেমায় অভিষেক ঘটে। ১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ সিনেমায় খলনায়ক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে তার। সিনেমার পাশাপাশি অসংখ্য খণ্ড নাটক ও ধারাবাহিকে অভিনয় করেছেন তিনি। পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং একুশে পদক পেয়েছেন এটিএম শামসুজ্জামান।

জানে আলম
‘একটি গন্ধমেরও লাগিয়া’ গানের শিল্পী জানে আলম ২ মার্চ মারা গেছেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এর মাস খানেক আগে জানে আলম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। করোনামুক্ত হলেও তার নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। এরপর থেকে তার অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই গায়ক।  

শাহিন আলম
এক সময়ের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা শাহিন আলম ৮ মার্চ মারা গেছেন। রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে, কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন শাহীন আলম।  

নমিতা ঘোষ 
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক কণ্ঠশিল্পী নমিতা ঘোষ ঢাকার পপুলার হাসপাতালে ২৬ মার্চ মারা যান। এর আগে দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সার ও চোখের জটিল অসুখে ভুগছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রথম নারী শিল্পী হিসেবে নিয়মিত সংগীত পরিবেশন করেছের নমিতা ঘোষ।  

ইন্দ্রমোহন রাজবংশী
একুশে পদকপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক ইন্দ্রমোহন রাজবংশী ৭ এপ্রিল মারা যান।  সবঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এর আগে ১ এপ্রিল বুকে ব্যথা অনুভব হলে তাকে মহাখালী মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে করোনা পরীক্ষা করানো হলে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এছাড়া তার ফুসফুসে ইনফেকশন ধরা পড়ে। এরপর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

মিতা হক
বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হক চলতি বছরের ১১ এপ্রিল সকালে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে ৩১ মার্চ  মিতা হক করোনা আক্রান্ত হন। তার রিপোর্ট নেগেটিভ হলে হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে আসেন। তবে তিনি কিডনি রোগে আক্রান্ত ছিলেন।  

ফরিদ আহমেদ
করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীত পরিচালক ফরিদ আহমেদ। এর আগে ২০ মার্চ ফরিদ আহমেদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ২১ ও ২৩ মার্চ টেস্ট করালে তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। কিন্তু শারীরিক অবস্থার উন্নতি না ঘটলে তিনি পুনরায় ২৫ মার্চ টেস্ট করান এবং তখন তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ১১ এপ্রিল ফরিদ আহমেদকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকদের চেষ্টাকে ব্যর্থ করে তিনি না ফেরার দেশে চলে পাড়ি জমান। ।

সারাহ বেগম কবরী
ঢাকাই চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী ও রাজনীতিবিদ সারাহ বেগম কবরী ১৭ এপ্রিল চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনিও করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। চলতি বছরের ৫ এপ্রিল কবরীর নমুনা পরীক্ষায় করোনা ভাইরাসের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর ওইদিন রাতেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করা হয়। ৮ এপ্রিল দুপুরে তাকে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। ১৫ এপ্রিল নেওয়া হয় লাইফ সাপোর্টে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমান নন্দিত এই অভিনেত্রী।

চিত্রনায়ক ওয়াসিম
বর্ষীয়ান অভিনেতা ওয়াসিম ১৮ এপ্রিল দিন গত রাতে রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বার্ধক্যজনিত রোগে মৃত্যু হয় ৭৪ বছর বয়সী এই অভিনেতা। বেশ কিছুদিন বাসায় শয্যাশয়ীও ছিলেন তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অভিনয় করেছেন ১৩৩টি সিনেমায়।

এস এম মহসীন
করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত মঞ্চ ও টেলিভিশন অভিনেতা এস এম মহসীন। ১৮ এপ্রিল সকালে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এই অভিনেতা। এর আগে পাবনায় ওয়াজেদ আলী সুমন পরিচালিত ও শাকিব খান অভিনীত ‘অন্তরাত্মা’ সিনেমার শুটিং সম্পন্ন করে ২ এপ্রিল ঢাকায় ফেরেন এস এম মহসীন। এরপর থেকে তার করোনার উপসর্গ দেখা দিলে তাকে প্রথমে একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে পরবর্তীতে ইমপালস হাসপাতালে নেওয়া। অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তবে শেষ চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন তিনি।
 
ফকির আলমগীর 
কিংবদন্তি গণসংগীত শিল্পী ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক ফকির আলমগীর ২৩ জুলাই রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এর আগে ১৪ জুলাই ফকির আলমগীরের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়। এর একদিন পর ১৫ জুলাই তার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ১৮ জুলাই থেকে তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন। ২৩ জুলাই রাতে তার স্ট্রোক হয়। এর কিছুক্ষণ পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ড. ইনামুল হক
চলতি বছরের ১১ অক্টোবর বিকেলে নিজ বাসায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন একুশে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক ও শিক্ষক ড. ইনামুল হক। বাধ্যক্যজনিত কারণে মারা যান ৭৮ বছর বয়সী এ অভিনেতা।  

কায়েস চৌধুরী
নির্মাতা, অভিনেতা ও নাট্যকার কায়েস চৌধুরী ২১ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন। দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি রোগে ভুগছিলেন তিনি। কায়েস চৌধুরী দীর্ঘদিন নির্মাতা ও অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন। নাট্যকার হিসেবেও অনেক দর্শকপ্রিয় নাটক উপহার দিয়েছেন তিনি।

শামীম ভিস্তি
মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অভিনেতা শামীম ভিস্তি ২২ অক্টোবর মারা যান। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। টেলিভিশন নাটকের অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘের সদস্য ছিলেন শামীম ভিস্তি। তিনি নিয়মিত নাটকে অভিনয় করতেন। এর বাইরে ‘পরবাসিনী’সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন।

মাহমুদ সাজ্জাদ
চলতি বছরের ২৪ অক্টোবর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অভিনেতা মাহমুদ সাজ্জাদ। মৃত্যুকালে এ অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।  এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার করোনা পজিটিভ ছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। তারপর কোভিড নেগেটিভ আসে। কিন্তু করোনা পরবর্তী জটিলতার কারণে আবারও তাকে আইসিইউতে নেওয়া হলে মারা যান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২১
এনএটি/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।