ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

সালতামামি-২০২১

ইসির অর্জন নির্বাচনী সহিংসতায় মলিন

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
ইসির অর্জন নির্বাচনী সহিংসতায় মলিন

ঢাকা: কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিদায় নেবে ২০২২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। আর শেষ বছরে বেশ কিছু ইতিবাচক উদ্যোগ নিলেও সব তার ম্লান হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের সহিংসতায়।

পেছন ফিরে তাকালে দেখা যায়, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের পৃথক আইন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বাংলায় রুপান্তর, মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ এনআইডি সরবরাহ, প্রবীণ ও অক্ষমদের ঘরে বসে ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির মতো ইতিবাচক কার্যক্রম হাতে নেয় ইসি।

এছাড়া এখনো পুরোনো ভোটারদের স্মার্টকার্ড দিতে না পারা, এনআইডি অনুবিভাগ নিজেদের কাছে রাখতে জোরালো ভূমিকার অভাব, ইভিএম সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা করতে না পারা এবং ইউপি ভোটের সহিংসতায় ব্যাপক প্রাণনাশের ঘটনা রুখতে না পারায় সমালোচনার মুখে পড়ে কমিশন।

অন্যদিকে আগের মতোই নানা মন্তব্যের মাধ্যমে আলোচনার জন্ম দেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

দল নিবন্ধনের পৃথক আইন
রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য এখনো কোনো আইন নেই। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) একটি অনুচ্ছেদের অধীনে কাজটি করা হয় ২০০৮ সাল থেকে। তার আগে এটাও ছিল না। কে এম নূরুল হুদার বর্তমান কমিশন এই উদ্যোগ নেয়। তবে সেটি এখনো আইন মন্ত্রণালয় থেকে মতামত নিয়ে চূড়ান্ত করতে পারেনি।

আরপিও বাংলা
বঙ্গবন্ধুর আমলে সংসদ নির্বাচনের জন্য আরপিও প্রণয়ন করা হয় ১৯৭২ সালে। কিন্তু সেটা বেশ কয়েকবার সংশোধন করা হলেও নতুন আইন করা হয়নি। বর্তমান কমিশন সেটি করার উদ্যোগ নিলে আইন মন্ত্রণালয়ের সায় পায়নি। তাই পরবর্তীতে এটিকে বাংলায় রূপান্তরের উদ্যোগ নেয় ইসি। আর সেটি রূপান্তর করতে সক্ষম হন তারা। বিষয়টির জন্য বিভিন্ন মহল থেকে সাধুবাদও পায় কমিশন।

মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ এনআইডি
বর্তমান কমিশনের একেবারে বিদায় বেলায় যে উদ্যোগ, সেটি হলো মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ এনআইডি সরবরাহ। বিষয়টি এখনো আলোচনাধীন হলেও এটির বাস্তবায়ন শিগগিরই করা হবে।

এছাড়া ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত এবং প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার যে সুযোগ, তা আরও বিস্তৃত করতে চায় কমিশন। এক্ষেত্রে প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদেরও কার্যক্রমটির আওতায় আনার কথা ভাবছে ইসি। পাশাপাশি অনলাইনে বা ই-ভোটের প্রচলন করার পরিরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে সংস্থাটি।

ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার জানিয়েছেন, কমিশনের সিদ্ধান্ত হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর ইতিবাচক মতামত পেলে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে পোস্টাল ব্যালটে প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টিতে আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

স্মার্টকার্ডের নতুন প্রকল্প
বিশ্বব্যাংক স্মার্টকার্ড প্রকল্প থেকে সরে গেছে তিন বছর হলো। প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই তারা ২০১৮ সালে জানিয়ে দিয়েছিল আর টাকা দেবে না। ফলে স্মার্টকার্ডের জন্য সরকারি তহবিল থেকে এ বছরই নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে ইসি। যার আওতায় প্রায় পাঁচ কোটি নাগরিককে স্মার্টকার্ড সরবরাহের কথা রয়েছে। ফলে যারা এখনো স্মার্টকার্ড পাননি, তারা অচিরেই পেয়ে যাবেন।

এইসব ইতিবাচক উদ্যোগের মধ্যেই এখনো ফরাসি কোম্পানি অবার্থার টেকনোলজিজের কাছ থেকে দেড় কোটি ব্ল্যাংক স্মার্টকার্ড আদায় করতে পারেনি। ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রম।

এনআইডি থাকা-না থাকার দোলাচল
চলতি বছর যে বিষয়টি ইসির অস্তিত্ব ধরে টান দেয়, সেটি হলো এনআইডি অনুবিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে স্থানান্তর প্রক্রিয়া। অনেকটা নির্বাচন কমিশনকে পাশ কাটিয়ে কোনো আলোচনা ছাড়াই এনআইডি বিভাগ ও লোকবল হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। যুক্তি দেখায় ইসির প্রশাসনিক ক্ষমতা না থাকায় সেবা ঠিকমত দিতে পারছে না।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা এ নিয়ে বলেছেন, চাইলেই নেওয়া যাবে না। এজন্য আলোচনা করতে হবে। কিন্তু আলোচনার জন্য কোনো উদ্যোগ কোনো পক্ষই নেয়নি।

সুশীল সমাজ থেকে সাধারণ নাগরিক, এমনকি সাবেক নির্বাচন কমিশনাররাও ইসির হাতেই এনআইডি রাখার পক্ষে বিভিন্ন প্ল্যাটফরমে আওয়াজ তুললেও নূরুল কমিশন বলতে গেলে জোরালো কিছু বলছে না। এ নিয়ে নানা মহলের সমালোচনাও কম হয়নি।

ভোটে সহিংসতা
সবকিছুর পরে যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনার মুখে পড়ে ইসি, সেটি হলো ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক হারে প্রাণহানি।

তিন ধাপের ইউপি ভোটে ৫০ জনের মতো নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন শতাধিক। কমিশন কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেনি। সহিংস ঘটনা হ্রাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জড়িতদের প্রার্থিতা বাতিলের সুপারিশ করলেও কমিশন সেটিও আমলে নেয়নি।

ক্ষমতাসীন দল ও স্বতন্ত্র বা বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যেই এ সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় এমন হয় বলে সিইসি নিজেই জানিয়েছেন।

চিহ্নিত বিষয় কেন ঠেকানো গেল না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, এটা সম্ভব না। এজন্য রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও তাদের অনুসারীদের সংযত হতে হবে।

ভোটের সহিংসতায় সমালোচনার আগুনে যখন জ্বলছে ইসি, তখন সে আগুনে যেন ঘি ঢেলে দেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, নির্বাচন আইসিইউতে, গণতন্ত্র লাইফ সাপোর্টে। তবে তার বক্তব্যকে অবশ্য উড়িয়ে দেন সিইসি। বলেন, তিনি (মাহবুব তালুকদার) শালীনতা বহির্ভূত কথা বলেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।