ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

ফিরে দেখা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঘিরেই সারা বছরের কূটনীতি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঘিরেই সারা বছরের কূটনীতি

ঢাকা: চলতি বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের কূটনীতির অঙ্গন ঘিরে ছিল রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। দেশের ভেতরে ও বাইরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে প্রাধান্য দিয়েই বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতা চলেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা আদায়েও কার্যক্রম চালিয়ে গেছে সরকার।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে চলতি বছরের শুরুতে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান কূটনীতিক ড. এ  কে আব্দুল মোমেন।

দায়িত্ব নেওয়ার পর শুরু থেকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে তৎপর রয়েছেণ তিনি। একই সঙ্গে পাবলিক ও ইকনোমিক ডিপ্লোম্যাসিতেও জোর দেন ড. মোমেন।

চলতি বছরের শুরু থেকেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বি-পক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যায় সরকার। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় চীনকেও যুক্ত করা হয়। নানা আলোচনার পর চলতি বছর ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়।  

তবে শেষ পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে না চাওয়ায় ভেস্তে যায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। এরপর নতুন করে আবারো প্রত্যাবাসন  প্রক্রিয়া শুরু হয়। মিয়ানমারের তালবাহানায় এখনও পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

এদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে চীনকে যুক্ত করা হয় চলতি বছর। বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীন একত্রে ত্রিপক্ষীয় যৌথ কমিটি গঠিত হয়।  

এই কমিটি রোহিঙ্গাদের ফেরাতে কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। মিয়ানমারের ওপর চীনের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে বলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হয় চীনকে।

আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর চলতি বছর ৩ অক্টোবর দিল্লি সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের সম্মেলনে যোগদান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সফরে দুই দেশের মধ্যে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।

ওই সময় তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া শেখ হাসিনা  রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়েও ভারতের সহায়তা কামনা করেন।

চলতি বছরের শেষ দিকে ভারতের জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন তালিকা (এনআরসি) নিয়ে দেশটিতে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই বিক্ষোভ-প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হয়।  

এর মধ্যে নতুন নাগরিকত্ব আইন (সিএ) ও এনআরসি নিয়ে ভারতজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি-বিক্ষোভ চলছে। এ পরিস্থিতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ।  

তবে বাংলাদেশ মনে করে, এ তালিকা ভারতের একান্তই অভ্যন্তরীণ ইস্যু। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর চলতি বছর ১৯ আগস্ট ঢাকা সফরে এলে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে এনআরসির বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে।  

ওই সময় জয়শঙ্কর এনআরসি একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ ইস্যু বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনকে আশ্বস্ত করেন।

চলতি বছরের শেষে রোহিঙ্গা গণহত্যা বিচারে নেদারল্যান্ডসের হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার করা মামলায় বিচারের কাঠগড়ায় উঠেন নোবেলজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি।  

এ মামলার ফলে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে পড়ে। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এই মামলা পর্যবেক্ষণ করে। একই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারের সামরিক শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফলে মিয়ানমারের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি হয়।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছর ১ জুলাই চীন সফর করেন। চীন সফরকালে দুই দেশের মধ্যে ৯টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। একই সঙ্গে দেশটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জোর দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

চলতি বছরের ২৮ মে বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধুপ্রতীম দেশ জাপান সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সঙ্কট তুলে ধরে শেখ হাসিনা তাদের সহায়তা প্রত্যাশা করেন।

২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিনল্যান্ড, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেন। এসব দেশ সফরে রোহিঙ্গা সঙ্কট ছাড়াও দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

এ বছরের ২৭ নভেম্বর বহুল আলোচিত হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ হামলা মামলার রায়ে সাত জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ  মামলার রায়কে বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।  

মামলার রায় দ্রুত সময়ে হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে জাপান। এই রায়ের ফলে বিদেশি কূটনীতিকদের মধ্যেও আস্থা সৃষ্টি ও বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে বলে মনে করছে সরকার।  

আগামী বছর ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী ঘিরে বছরব্যাপী কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশে-বিদেশে এই কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।  

এদিকে  চলতি বছর জাতিসংঘের জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা-ইউনেস্কোর নির্বাহী পরিষদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশ চলতি বছর জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) সদস্য পদে নির্বাচনে বিপুল  ভোটে বিজয়ী হয়। এসব ছিল বাংলাদেশের কূটনীতির  অন্যতম বড় অর্জন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯ 
টিআর/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।