ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

ফিরে দেখা-২০১৬

দুদকের জন্য মাইলফলক

শেখ জাহিদুজ্জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
দুদকের জন্য মাইলফলক

ঢাকা: বিদায়ী বছরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। কার্যক্রম নিয়ে মানুষের মধ্যে থাকা প্রশ্নও কাটিয়ে উঠতে পেরেছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৬ সালে দুদককে নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে।

সাধারণ মানুষের মাঝেজনমুখি করতেও নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। তাই বিদায়ী বছরকে দুদকের জন্য মাইলফলক বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।


বিদায়ী বছরে  ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকে দুর্নীতির মামলায় দুইবার কারাগারে পাঠিয়েছিলো দুদক। অগ্রণী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুদকের হাতে আটক হন মিজানুর রহমান খান।

অন্যদিকে অর্থ আত্মসাতের মামলায় সিটি ব্যাংক লিমিটেডের হেড অব কার্ড সার্ভিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এভিপি) মো. মোসাব্বির রহিমকেও আটক করে দুদক।

গত মার্চে দুদকের নতুন কমিশন গঠনের  পর শুরু হয় এ গ্রেফতার অভিযান।

দুদক সূত্র জানায়, বিদায়ী ২০১৬ সালে দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করা হয় অন্তত চারশ' আসামিকে। এর মধ্যে বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর সাড়ে নয় মাসে গ্রেফতার করে ৩৮৮ জনকে।

গ্রেফতারকৃতদের ১১৬ জনই হচ্ছেন ব্যাংক কর্মকর্তা। বাকিরা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জনপ্রতিনিধি। বিগত কমিশনগুলোর চার বছরের মেয়াদেও এতো সংখ্যক আসামি গ্রেফতারের রেকর্ড নেই দুদকের।

এ বছর মামলা করা হয় ৩৩১টি। একই সময়ে ৫১৪টি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়। বর্তমান কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর উচ্চ ও নিম্ন আদালতে দুদকের আইনজীবী প্যানেল ঢেলে সাজানো হয়। দুর্নীতি মামলায় সাজার হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে আইনজীবীদের তৎপরতাও বাড়ানো হয়। এ কারণেই বিদায়ী বছরে মামলার সাজার হার বেড়ে ৬১ শতাংশ হয়েছে। যা ২০১৫ সালে এই হার ছিল ৩৭ শতাংশ।
 
অন্যদিকে দুর্নীতি প্রতিরোধে বিদায়ী বছরে জোর দেওয়া হয় গণশুনানির ওপরে। সেবামূলক সরকারি বিভিন্ন খাতের ওপর গণশুনানিতে ভুক্তভোগীরা প্রকাশ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়ম, দুর্নীতির কথা তুলে ধরেন। জনগণের সামনে তাদের ওইসব অভিযোগের জবাব দিতে হয়। দুদক এ পর্যন্ত রাজউক, বিআরটিএ, পাসপোর্ট অফিস, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ভূমি, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৩৫টি গণশুনানি করেছে। এক্ষেত্রেও রেকর্ড হয়েছে- বলছে দুদক।

এছাড়া বিদায়ী বছরে দুদককে আরও কার্যকর করতে আটটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে গ্রহণ করা হয়েছে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। বিষয়গুলো হলো- দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি, কার্যকর অনুসন্ধান ও তদন্ত, মামলা পরিচালনা, দুর্নীতি প্রতিরোধ কৌশল, শিক্ষা কৌশল, উদ্ভাবনী গবেষণা ও উন্নয়ন, নিরপেক্ষতা-স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, আইনি কাঠামো শক্তিশালীকরণ ও প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো সুদৃঢ়করণ।

এছাড়া সরকারি কাজে স্বচ্ছতা,জবাবদিহিতা ও সহজে সেবাদান নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিশেষ সুপারিশমালা পেশ করা হয়েছে রাষ্ট্রপতির কাছে।

সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির ফাঁক-ফোকর বন্ধে একাধিক পরিচালকের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক টিম। দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনায় গঠন করা হয়েছে বিশেষ টাস্কফোর্সও।
 

দুদকের সচিব আবু মো. মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। আর এটাই হলো আমাদের সবচেয়ে বড় সফলতা। কেননা, আমরা আমাদের হারিয়ে যাওয়া সুনাম আবার উদ্ধার করতে পেরেছি। অন্যদিকে দুদককে নতুন করে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।   দুদকের মধ্যে যে গলদ ছিলো, তাও শোধরানোর চেষ্টা করছি‍’।

সব মিলিয়ে বিদায় বছরকে  সফলতার বছর হিসেবেই আখ্যায়িত করছেন তিনি।
 
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিদায়ী বছরে দুদকের কিছু সফলতা থাকলেও নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ফলে সে সফলতা বেশি একটা দৃশ্যমান নয়।   দুদককে আরো বেশি শক্তিশালী হতে হবে। কে কি বললো সেটি দেখার বিষয় নয় দুদকের। দুদক কতোটুকু শক্তিশালী ও মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারছে সেটিই কিন্তু দেখার বিষয়। তাই দুদককেআরো বেশি শক্তিশালী ও মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। আর এটিই হবে নুতন বছরে দুদকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ’।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
এসজে/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।