ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

ব্যাংক মুনাফায় মিশ্র প্রবণতা!

সাইদ আরমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
ব্যাংক মুনাফায় মিশ্র প্রবণতা!

ঢাকা: বুধবার নতুন বছরের শুরু। বিদায় নেওয়া ২০১৩ সালে দেশের দেশের অর্থনীতি নানা সংকট ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে গেছে।

রাজনৈতিক অস্থিরতায় টালমাটাল অর্থনীতি। অর্থনীতিতে যেন চলছে রক্তক্ষরণ। ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রবাহ কমে গেছে। বাড়ছে অলস টাকার পাহাড়। তারপরও বেশিরভাগ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক আগের বছরের চেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা করতে সক্ষম হয়েছে। তবে কমেছে অনেক ব্যাংকের পরিচালনা মুনাফা।

তবে অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি ব্যাংকিং খাতের পরিচালন মুনাফায় মিশ্র প্রবণতা দেখা দিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বেশিরভাগ ব্যাংকের উচ্চ মুনাফা হলেও ২০১৩ সালে এ চিত্র কিছুটা বদলেছে। মঙ্গলবার ব্যাংকগুলো তার হিসাব চূড়ান্ত করেছে।

ব্যাংকাররা বলছেন, রাজলনৈতিক অস্থিরতায় বিনিয়োগে মন্দা অনেক দিন ধরেই। ফলে সময়মতো ঋণ আদায় করতে না পারায় বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ সৃষ্টি হয়েছে ব্যাংকগুলোতে। এ কারণে মুনাফা আয় কমেছে তাদের। বছরের প্রকৃত বা নিট আয় হিসাব করতে গিয়েও এর প্রভাব থাকবে।

যদিও সোমবার সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক পর্যালোচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক দাবি করেছে, অর্থনীতি স্থিতিশীল ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ২০১৩ সালে স্থিতিশীল ছিলো অর্থনীতি।

অর্থনীতির প্রধান কতগুলো যেমন, রিয়েল এস্টেট বা আবাসন খাতের বেচাবিক্রি কমে গেছে। বেশ কিছু ঋণগ্রহীতা ভিন্ন খাতে বিনিয়োগ ও ব্যবসার জন্য ঋণ নিয়ে এ খাতে বিনিয়োগ করেছেন বড় মুনাফার আশায়। এখন বেচাবিক্রি না হওয়ায় ব্যাংকের টাকাও ফেরত আসছে না। এসব খাত থেকেও আয় যোগ হয়নি এবার। যদিও নানা এন্টিবায়োটিক দিয়ে ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের বাঁচিয়ে রাখতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকগুলোর বিভিন্ন সূত্র বলছে, তবে এর মাঝেও কিছু ব্যাংক ভালো ব্যবসা করেছে। তবে ব্যাংকের এ মুনাফা প্রকৃত মুনাফা নয়। এ হিসাব থেকে প্রভিশন ও কর বাদ দিয়ে প্রকৃত মুনাফার হিসাব করা হয়। বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকের প্রায় সবগুলোই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত।

ব্যাংকগুলো কিছুদিন পরে তাদের ২০১২ সালের অনিরীক্ষিত আর্থিক ফলাফল বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কাছে পেশ করবে। এর পর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য এসব তথ্য স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

এসইসির নিয়ম অনুযায়ী, এর আগে ব্যাংকগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এসব তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করতে পারবে না। তবে বিভিন্ন সূত্রে এসব ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া গেছে।

হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৩ সালে পরিচালন মুনাফায় শীর্ষে রয়েছে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক। আমদানি-রফতানিতে ভালো ব্যবসা এবং উচ্চ রেমিট্যান্সসহ নানা কারণে এ ব্যাংকের কর ও প্রভিশন-পূববর্তী মুনাফা হয়েছে ১৬০০ কোটি টাকা, এর আগের বছর যা ছিল প্রায় ১৮০০ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রাইম ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৮৫০ কোটি টাকা। ২০১২ সালে ছিলো ৯৭০ কোটি টাকা।

বেসরকারি আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা কিছুটা বেড়েছে। ২০১৩ সালে দাড়িয়েছে ৪৭০ কোটি টাকা। ২০১২ সালে ছিলো ৪৫২ কোটি টাকা। আইএফআইসি ব্যাংকের মুনাফাও বেড়েছে। ২০১২ সালে ছিল ৩১৮ কোটি টাকা, যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০৩ কোটি টাকা।

জানা গেছে, রাষ্ট্রখাতের রূপালী ব্যাংকের মুনাফা কিছুটা কমেছে। ২০১২ সালে এর মুনাফা ছিলো ৩৬৫ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে দাড়িয়েছে ৩১৫ কোটি টাকা। কমেছে এক্সিম ব্যাংকের মুনাফা। ২০১২ সালের ৫৫০ কোটি থেকে কমে হয়েছে ৫২০ কোটি টাকা। এনসিসি ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৪০৫ কোটি টাকা। যা আগের বছর ছিলো ৪১০ কোটি টাকা। পূবালী ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে ৮১৫ কোটি টাকা। ২০১২ সালে ছিলো ৬৫০ কোটি টাকা।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ২০০ কোটি টাকা। যা আগের বছরে ছিল ১৯৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কর্মাস ব্যাংক লিমিটেড আগের বছরের সমপরিমাণ ৩২ কোটি টাকা মুনাফা করেছে।  

বড় অংকের মুনাফা কমেছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের। ২০১৩ সালে ব্যাংকটি মুনাফা করেছে ২৯৯ কোটি টাকা। যা এর আগের বছরে ছিল ৪০৫ কোটি টাকা। বিশেষায়িত বেসিক ব্যাংকের মুনাফা ২০১৩ সালে ২৮৫ কোটি থেকে কমে ১৭৮ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে।  

ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা থেকে প্রভিশন ও কর বাদ দিয়ে নিট মুনাফার হিসাব হয়। ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রধানি নির্বাহী টেলিফোনে বাংলানিউজকে বলেন, যতটা হতাশা দেখেছিলাম। ততটা প্রভাব ব্যাংক খাতে এখনও পড়েনি। তবে প্রভাব দৃশ্যমান হবে ২০১৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৩
সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।