ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

বন্যা-বজ্রপাতে রেহাই মেলেনি

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২
বন্যা-বজ্রপাতে রেহাই মেলেনি

ঢাকা: করোনার থাবা কাটিয়ে মানুষ যখন ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রামে তখনই নেমে আসে বানের ভয়বহতা। এতে হাজারো কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে।

অন্যদিকে বজ্রপাতে কেড়ে নিয়েছে প্রায় তিনশ জনের প্রাণ। সবমিলিয়ে চলতি বছর শৈত্যপ্রবাহ, খরা, ভূমিকম্প কিংবা ঘূর্ণিঝড়ে কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হলেও বান ও বজ্রপাতে ব্যাপক মাশুল দিতে হয়েছে।

শৈত্যপ্রবাহ:

২০২১ সালে শৈত্যপ্রবাহে দেশবাসী জবুথবু হয়ে গেলেও চলতি বছরের শীতের শুরুতে সে প্রভাব পড়েনি। গত ৩১ জানুয়ারি দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল তেঁতুলিয়ায় ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে সেই শৈত্যপ্রবাহ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।

তাপপ্রবাহ:

গত বছরের মতো এবারও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠে ছিল ১৫ এপ্রিল রাজশাহীতে, ৪১ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ছিল গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আর ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবার ১০টির মতো তাপপ্রবাহ দেশের ওপর দিয়ে বয়ে গেলেও দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয়নি। ফলে আগের মতো ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।  

ঘূর্ণিঝড়:

গত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সাগরে অন্তত ১০টির মতো লঘুচাপের সৃষ্টি হয়। এরমধ্যে কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। এর মধ্যে অশনি সাগরেই দুর্বল হয়ে ১১ মে অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলে ওঠে আসে। এর ফলে দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেড়ে যায়। তবে অধিক উচ্চতার জোয়ারের কারণে ক্ষতি হয় উপকূলীয় অঞ্চলের বাঁধগুলোর। এতে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে পানি।
 
এছাড়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং গত ২৪ অক্টোবর বরিশাল অঞ্চলের উপকূল অতিক্রম করলেও সাগরেই শক্তি ক্ষয় করে স্থলভাগে উঠে আসে। এতে বড় কোনো ক্ষতি না হলেও রেকর্ড পরিমাণ ঝড়-বৃষ্টি হয়। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যার দেখা দেয়। এতে বেড়ে যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ।

ওইদিন গত ৭৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় বরিশাল ও মাদারীপুরে। এছাড়া ঢাকায় ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়। সিত্রাংয়ের প্রভাবে বরিশালে একদিনে ৩২৪ মিলিমিটার, মাদারীপুরে ৩১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। ১৯৪৮ সালের পর এ পরিমাণ বৃষ্টিপাত ওই দুই অঞ্চলে হয়নি। এছাড়া ঢাকায় একই সময়ে ২৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। ২০০৯ সালের পর ঢাকায় এটিই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত; সে সময় ৩৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল।
 
বজ্রঝড়:

গত বছরের মতো চলতি বছরেও ছিল বজ্রপাতের দাপট। এতে প্রায় তিনশ জন মৃত্যুবরণ করেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জে এক সঙ্গেই বজ্রপাতের কবলে পড়েন আটজন। এতে ঘটনাস্থলেই পাঁচজন ও হাসপাতালে মারা যান তিনজন। জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, নেত্রকোণা, কুমিল্লা, নরসিংদীতে সবচেয়ে বেশি বজ্রঝড় হয়।

বন্যা:

চলতি বছর শত বছরের রেকর্ড ভেঙেছে বন্যা। গত মে ও জুন মাসে দুই দফায় দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় সিলেটসহ অন্যান্য অঞ্চলের বন্যা কাঁদিয়েছে পুরো দেশবাসীকে। পানি ঢুকে পড়েছিল সিলেট শহরেও। ফলে মানুষের কষ্টের কোনো সীমা ছিল না। সেই সঙ্গে ক্ষতি হয়েছিল হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল। কেবল সিলেট নয় দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের ১৮টি জেলার ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ছয়জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। মারা যান ১২ জন। আহত হন প্রায় তিন হাজার মানুষ। এতে ৮৬ হাজার ৮১১ কোটি ৬৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান।

ভূমিকম্প:

অন্যান্য বছরের মতো চলতি বছরও কয়েকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। তবে এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাত্রা ছিল ২১ জানুয়ারি। ৫ দশমিক ৪ মাত্রার ওই ভূমিকম্পের উৎপত্তি ছিল মিয়ানমার-ভারত সীমান্ত। তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২২
ইইউডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।