ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

ইফতারই যেন ঈদ কারওয়ান বাজারের ভাসমান মানুষগুলোর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২২
ইফতারই যেন ঈদ কারওয়ান বাজারের ভাসমান মানুষগুলোর

ঢাকা: ইফতারের তখনও আধা ঘণ্টা বাকি। ভ্যানে করে ফলের ব্যবসা করা বৃদ্ধ ছবির আলী ভ্যানের পাশেই বসেছেন ইফতার প্রস্তুত করতে।

বালতিতে পানি নিয়ে তৈরি করছেন শরবত। শসা কেটে রাখছেন রাস্তার উপরেই রাখা ছোট্ট প্লেটে।

সবজি ব্যবসায়ী আলী হায়দার প্রতিদিন ইফতার করেন আড়তের সবাইকে নিয়ে। মেঝেতে পাটি বিছিয়ে ৭/৮ জন বসে ইফতার করেন শরবত, ছোলা, মুড়িসহ বিভিন্ন ফলের সমারোহে।

সারাদিন ভিক্ষা করা বৃদ্ধ আজির উদ্দিন ওজু শেষ করে ঢোকেন মসজিদে। নিজের পুটলি থেকে বের করেন দুটি বেগুনি আর পেঁয়াজুর প্যাকেট। ছোট্ট বোতলটাই পানি পুরে নেন মসজিদের ফিল্টার থেকে।

এমন হাজারো গল্পে সাজানো ওঠে প্রতিদিনের কারওয়ান বাজারের ইফতারের সময়গুলো। বিশেষ করে ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষগুলো ইফতারের এ সময়টাতে যেন আরও বিনয়ী হয়ে ওঠে, আরও দরদী হয়ে ওঠে। তাইতো আশপাশে থাকা মানুষগুলোকে ডেকে নিয়ে একসঙ্গে ইফতার করতে পারলেই যেন তাদের পরিতৃপ্তি। শুক্রবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যার দিকে কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

ফলের ব্যবসা করা বৃদ্ধ ছবির আলী বলেন, ইফতার আল্লাহর দান। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখছি, সেই ইফতারের বন্দোবস্ত করে দেয়। তবে আমার সঙ্গে যারা ব্যবসা করে, তাদের সবাইকে নিয়ে ইফতার করতে পারলেই আমার ভালো লাগে।

ইফতারের ঠিক আগ মুহূর্তেই দেখা গেল দিনের সমস্ত কাজ শেষ করে ইফতার প্রস্তুত করে একটি ভ্যানের উপর বসে ৮/১০ জন মোনাজাত করছেন ইফতার সামনে নিয়ে। পুরো এলাকা যখন কর্মব্যস্ত, তখন ফুটপাতে ইফতারের আগ মুহূর্তে এ দৃশ্য হৃদয় কেড়ে নেওয়ার মতো।

কথা হলে মো. আলিম নামে একজন বলেন, আমরা এখানেই বসবাস করি। কাজও আড়ৎ ঘিরে। সারাদিন রোজা রেখে সবাই যখন ইফতারের জন্য একত্র হই তখন মনটা খুশিতে ভরে ওঠে। আর ইফতারের আগের দোয়া কবুল হয়। তাই আমরা সবাই মিলে দোয়া করি আমাদের সবার জন্য। মাঝে মধ্যে অতিথিও পাই, সেদিন আরও বেশি ভালো লাগে।

কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক, রিকশা, ভ্যানসহ ফুটপাতগুলো ইফতারের সময় আড্ডারত মিলন মেলা হয়ে যায়। আট থেকে দশজন বা দুই-তিনজন মিলে ইফতার নিয়ে বসে পড়েন রোজা সম্পন্ন করতে। তাদের এ ইফতারের আয়োজনে থাকে বিভিন্ন রকমের শরবত, আখের রস, ফলসহ পেঁয়াজু, বেগুনি, মুড়ি ইত্যাদি।

কথা হলে এ মানুষগুলো বলেন, সারাদিন যেভাবেই থাকি না কেন সন্ধ্যার আগে ইফতার কিনে দল ধরে ইফতার করতে বসি। আর এটাই যেন আমাদের প্রতিদিনের ঈদ।

এদিকে কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায় এ মানুষগুলো ছাড়াও সম্পূর্ণভাবে অসহায় ও দুস্থ মানুষের জন্য ব্যবস্থা করা হয় ইফতারের। ‘সবাই মিলে বাংলাদেশ’ সংগঠনের ব্যানারে কারওয়ান বাজারে প্রতিদিন দেওয়া হয় ইফতার। সেখানেও ভিড় জমে অসহায় ও রোজাদার ব্যক্তিদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০২২
এইচএমএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।