ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

রোজার বিনিময় দেবেন আল্লাহ নিজে 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৯ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৮
রোজার বিনিময় দেবেন আল্লাহ নিজে  অপার মহিমার রমজান

রোজার প্রতিদান দেবেন স্বয়ং আল্লাহ। আসসাওমু লি ও আনা আজজি বিহি। রোজা আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান দেবো। (হাদিসে কুদসি) এটা দয়াময়ের পক্ষ থেকে জগতের সমস্ত রোজাদারের জন্য ভূ-মণ্ডল এবং নভোমণ্ডলের একচ্ছত্র অধিপতি আহকামুল হাকিমিন আল্লাহর ঘোষণা। 

তেলাওয়াত করলে বান্দা কতটুকু সওয়াব পাবে? জাকাত দিলে কী পাবে? হজ করলে কী হবে? তার কিছুটা ইঙ্গিত রয়েছে কোরআন ও হাদিসে। প্রতিটি কর্মেরই পরিমিত নির্দিষ্ট পুরস্কার আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত রয়েছে।

কিন্তু আল্লাহতায়ালা রোজার প্রতিদানে কী দেবেন তার ধরা বাঁধা কোনো পরিমাণ উল্লেখ করেননি।

তিনি তা রেখেছেন অস্পষ্ট ও মানুষের কল্পনাতীত। আবার রোজাদারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আমিই তার প্রতিদান দেবো। জগতের কোনো রাজা-বাদশাহও যদি কাউকে বলেন, আমার এই কাজটি করে দিন প্রতিদান আমি দেবো। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা ধরে নিই যে বাদশাহ আমাদের অসাধারণ এমন কোনো বিনিময় দেবেন যা সচরাচর কেউ দেয় না।  

আর বিশ্বনিয়ন্তা যিনি অসীম ভাণ্ডারের মালিক তার প্রতিশ্রুতি কত ব্যাপক ও বিস্তৃত আমাদের পক্ষে কী তা বুঝা সম্ভব? রোজার সীমাহীন এবং অফুরন্ত প্রতিদানের বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ-ই অবহিত রয়েছেন। এদিক দিয়ে রোজা ইসলামের অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির চেয়ে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে মহিমান্বিত।  

আল্লাহ রমজানে বান্দাকে ক্ষমা করবেন, জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন, তার দিকে রহমতের দৃষ্টি দেবেন এসব রমজানের বিশেষ তোহফা। এসব শুধু তুলনা করা যায় গেরস্ত বাড়ির মালিকের আপ্যায়নের সঙ্গে। গেরস্ত বাড়িতে কাজ করলে ঠিক দুপুরে তো খাবার খাওয়াবেই, কখনও কখনও নানা রকমের পিঠা খাওয়াবে, চিড়া-মুড়ি খাওয়াবে কিন্তু এসব কিছুই কাজের বিনিময় নয় বরং বিকেলে যাওয়ার সময় যে দু-চারশ’ টাকা দেয়, সেটাই বিনিময় বা পারিশ্রমিক।  

এ রকম আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত, নাজাত এসব বিনিময় নয় বরং আল্লাহর স্পেশাল আপ্যায়ন। আর আল্লাহর বিনিময় হবে এমন বিনিময়, যা কোনো কান শোনেনি, কোনো চোখ দেখেনি এবং কোনো অন্তর কল্পনাও করতে পারেনি। মাবুদের পক্ষ থেকে এই কল্পনাতীত প্রতিদান পেতে হলে আমাদের তাকওয়া সহকারে রোজা রাখতে হবে।

আমি তাকওয়া সহকারে রোজা পালন করছি তা তখনই বুঝা যাবে যদি প্রচণ্ড ক্ষুৎপিপাসায় কাতর হয়ে, প্রচণ্ড যৌন ক্ষুধায় তাড়িত হয়ে সব রকম সুযোগ আর সাধ্য থাকা সত্ত্বেও আমি শুধু আল্লাহর ভয়ে সিয়াম পালন করি।  

সিয়াম পালনও আজ আমাদের একটি সামাজিক প্রথায় পরিণত হয়েছে। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আমাদের সমাজের ছোট্ট কিশোর-কিশোরীরাও উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে রোজা রাখে। কে কটা রোজা রাখে তারা তারও হিসাব রাখে। এটা একটি ভালো দিক। তবে এতে তাদের ধর্মীয় চেতনা যতটা না সক্রিয় হয়, তার চেয়ে বেশি সক্রিয় হয় সামাজিক প্রথা।  

হে সিয়ামের সাধক! হে তাকওয়ার প্রশিক্ষণার্থী!  আপনার উপবাস ও সিয়ামের প্রবণতাও কি তাই? যদি তাই হয় তাহলে তো আপনার রোজায় তাকওয়া নেই। রোজা থেকে আপনি তাকওয়া অর্জন করতে পারলেন না। আপনি আল্লাহর মহাপুরস্কার তো দূরের কথা; স্বাভাবিক আদর-আপ্যায়ন পাওয়ার উপযুক্ত হতে পারলেন কিনা সন্দেহ! 

আজই সেই প্রশ্নের উত্তর নিজেকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিন এবং সঠিক নিয়মে রোজা ব্রত পালন করার তৌফিক চেয়ে নিন মাবুদের দরবারে।

লেখক: মুফাসসিরে কুরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৮
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।