ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

হজরত রাসূলুল্লাহ সা. বিলম্বে সাহরি খেতেন

আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭
হজরত রাসূলুল্লাহ সা. বিলম্বে সাহরি খেতেন সাদাসিধে ও সরল জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

সাদাসিধে ও সরল জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। জীবনে সবকিছুতেই তিনি ছিলেন অনাড়ম্বর। সীমাহীন প্রাচুর্যের হাতছানি উপেক্ষা করে তিনি বেছে নিয়েছিলেন সাধারণ জীবন।

পছন্দ করতেন সমাজের বিত্ত-ভৈববহীন মানুষদের। খাবারের ব্যাপারেও ছিলো এ সারল্যের ছাপ।

সাধারণ খাবারেই ছিলেন সন্তুষ্ট। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত মুহাম্মদ (সা.)-এর পরিবার কখনও পরপর দু’দিন গমের রুটিতে তৃপ্ত হননি। ’ -সহিহ বোখারি: ৫৭১৬

অথচ এ ব্যাপারে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কোনো অভিযোগ ছিলো না।  

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খাবার গ্রহণের এ সারল্য ও অল্পতুষ্টি বজায় থাকতো রমজানের সেহরির সময়ও। তিনি সাধারণ খাবার দিয়ে সেহরি করতেন। ঘরে যখন যা থাকতো তাই সেহরি হিসেবে গ্রহণ করতেন।  

তবে নবী জীবনীকারদের বিবরণ অনুযায়ী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর খাদ্য তালিকায় সাধারণত গোশত, রুটি, জায়তুন (জলপাই বা তার তেল), খেজুর, দুধ ও মধু থাকত।

তৎকালীন সমাজের এ খাদ্যতালিকা থেকে যা সহজসাধ্য হতো হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাই খেতেন সেহরিতে।
 
সেহরির খাবার হিসেবে রাসূল (সা.)-এর বিশেষ কোনো পছন্দের কথা জানা যায় না। তবে হ্যাঁ, তিনি অন্য সব সময়ের মতো সেহরিতেও খেজুর পছন্দ করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘উত্তম সেহরি খেজুর এবং উত্তম তরকারি সিরকা। আল্লাহতায়ালা সেহরি গ্রহণকারীদের প্রতি দয়া করুন। ’ কানজুল উম্মাল: ২৩৯৮৩

অন্য হাদিসে হজরত রাসূল কারিম (সা.) সেহরির সঙ্গে সারিদের উল্লেখ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সেহরি বরকতময়, সারিদ (গোশতের ঝোলে ভেজানো রুটি) বরকতময়, জামাতে নামাজ আদায় করা বরকতময়। ’ -কানজুল উম্মাল: ২৩৯৭৭

সেহরির খাবার যাই হোক না কেন নবী করিম (সা.) নিয়মিত সেহরি গ্রহণ করতেন এবং সাহাবিদেরও সেহরি গ্রহণের পরামর্শ দিতেন।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা সেহরি গ্রহণ কর। কেননা সেহরিতে বরকত রয়েছে। ’ -সহিহ বোখারি: ১৯২৩

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) খাবারের মান ও পরিমাণের দিকে না তাকিয়ে সেহরি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেহরিতে উম্মতের জন্য বরকতের দোয়া করেছেন।

হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, (নবী করিম (সা.) বলেছেন) !হে আল্লাহ! আপনি আমার উম্মতের সেহরিতে বরকত দিন। (এর পর বলেন) তোমরা সেহরি গ্রহণ কর এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও, একটি খেজুর দিয়ে হলেও, আঙুরের কিছু দানা দিয়ে হলেও। নিশ্চয়ই ফেরেশতাগণ তোমাদের জন্য শান্তির দোয়া করবে। -জামে সুয়ুতি: ৫০৭০

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিলম্বে সেহরি করতে পছন্দ করতেন। তিনি আজানের আনুমানিক বিশ মিনিট পূর্ব পর্যন্ত সেহরি খেতেন।  

হজরত জায়েদ ইবনে সাবেত (রা.) বর্ণনা করেন, আমরা রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে ইফতার গ্রহণ করি। অতপর তিনি নামাজের জন্য দাঁড়ান। আমি (বর্ণনাকারী) বললাম, আজান ও সেহরির মাঝে কতটুকু সময়ের ব্যবধান ছিলো? তিনি বলেন, পঞ্চাশ আয়াত তথা পঞ্চাশ আয়াত তেলাওয়াত করতে যতটুকু সময়ের প্রয়োজন হয়। -সহিহ বোখারি: ১৯২১

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে সেহরির পর বিশেষ কোনো দোয়ার বর্ণনা পাওয়া যায় না।  

তবে পুণ্যাত্মা বুজুর্গগণ সেহরি ও আজানের মধ্যবর্তী সময়ে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতেন।  

কেননা হাদিসে এ সময়ে দোয়া কবুলের ঘোষণা এসেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা প্রতি রাতের তৃতীয়ার্ধে পৃথিবীর আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, যে আমাকে ডাকবে আমি সাড়া দেব, যে আমার কাছে চাইবে আমি তাকে তা দেব এবং যে আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করবে আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। ’ –সহিহ বোখারি: ১০৯৪

তাই আসুন! সেহরিতে খাবারে বিলাসী আয়োজন পরিহার করি, যথা সময়ে সেহরি গ্রহণ করি এবং সেহরি ও আজানের মাঝে কিছু সময় দোয়া ও প্রার্থনার জন্য নির্ধারণ করি। সম্ভব হলে শেষ তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ি।  

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৯ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৭
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।