ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত কে এবং কোন কোন জিনিসের ওপর জাকাত আসে

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৬
জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত কে এবং কোন কোন জিনিসের ওপর জাকাত আসে

প্রশ্ন: জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত কে? আত্মীয়দেরকে কি জাকাত দেওয়া যাবে?

উত্তর: যে ব্যাক্তির নিকট প্রয়োজনীয় সামান্য অর্থ সম্পদ আছে অথবা কিছুই নেই তাকে জাকাত দেওয়া যাবে। তদ্রুপ যার কাছে ৫২.৫ তোলা রূপার মূল্য সমপরিমাণ প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ নেই তাকেও জাকাত দেওয়া যাবে।

অনুরূপভাবে যার কাছে এ পরিমাণ সম্পদ আছে কিন্তু সে এমন ঋণগ্রস্থ যে, ঋণ পরিশোধ করে দিলে তার কাছে এ পরিমাণ সম্পদ থাকে না; তাকেও জাকাত দেওয়া যাবে।

তবে শিল্পঋণের হুকুম এ থেকে ভিন্ন। অর্থাৎ কারো যদি ব্যক্তি মালিকানায় নেসাব পরিমাণ জাকাতযোগ্য সম্পদ থাকে এবং শিল্পঋণও থাকে তাহলে সে ব্যক্তিগত জাকাতযোগ্য সম্পদের জাকাত আদায় করবে। ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে শিল্পঋণ বাদ দিবে না।

আর ভাই-বোন, ভাতিজা, ভাগনে, চাচা, মামা, ফুফু, খালা, শ্বশুড়-শাশুড়ি প্রমুখ আত্মীয়-স্বজন গরীব অসহায় হলে তাদেরকে জাকাত দেওয়া যাবে। তবে নিজের পিতা-মাতা,দাদা-দাদী, নানা-নানী, প্রমুখ ঊর্ধ্বতন আত্মীয়-স্বজন এবং ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি প্রমুখ অধস্তন আত্মীয়-স্বজন গরীব হলেও তাদেরকে জাকাত দেওয়া জাযেয হবে না। আর স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে জাকাত দিতে পারবে না।

প্রকাশ থাকে যে, জাকাত গ্রহণ করতে পারে এমন আত্মীয়-স্বজনকে জাকাত দিলে জাকাত দেওয়ার সওয়াবের পাশাপাশি আত্মীয়তার সম্পর্কের হক আদায়ের সওয়াবও হবে।

প্রশ্ন: কোন কোনো জিনিসের ওপর জাকাত আসে? সবিস্তারে জানানোর অনুরোধ রইলো।

উত্তর: তিন ধরনের সম্পদ জাকাতযোগ্য সম্পদ।
১. দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও টাকা-পয়সা। তা নিজের কাছে জমা থাক কিংবা ব্যাংকের কোনো একাউন্টে বা বন্ড, সঞ্চয় পত্র ইত্যাদিতে থাকুক অথবা ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে জমা থাক সবই জাকাতযোগ্য সম্পদ।

এ ছাড়া ব্যবসার মূলধন, পণ্যের বকেয়া মূল্য এবং কাউকে দেওয়া ঋণও এই প্রকারের অন্তর্ভুক্ত।

২. সোনা-রূপা। অলঙ্কার হোক বা অন্যান্য সামগ্রী, ব্যবহৃত হোক বা অব্যবহৃত সর্বাবস্থায় তা জাকাতযোগ্য সম্পদ। (সোনা-রূপা ছাড়া অন্য কোনো ধাতুর অলঙ্কার বা মূল্যবান পাথর ইত্যাদি ব্যবসার পণ্য না হলে তা জাকাতযোগ্য সম্পদ নয়। )

৩. ব্যবসার সম্পদ। ব্যবসার মালামাল ও পণ্য। ব্যবহারের নিয়ত ছাড়া কেবল বিক্রির নিয়তে কোনো কিছু ক্রয় করলে তা ব্যবসার পণ্য হিসেবে গণ্য হবে, চাই তা স্থাবর সম্পত্তি হোক বা অস্থাবর কোন পণ্য এবং তা জাকাতযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। যেমন, কেউ একটি জমি বিক্রির উদ্দেশ্যে ক্রয় করলো। তা ব্যবসা পণ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে। এমনিভাবে দোকান বা কারখানার বিক্রির মালামাল এবং মজুদকৃত কাঁচামাল সবই জাকাতযোগ্য সম্পদ। অবশ্য ব্যবসার উপকরণ সামগ্রী জাকাতযোগ্য সম্পদ নয়। যেমন, অফিস,কারখানা, মেশিনারিজ, অফিস ও কারখানার কাজে ব্যবহৃত গাড়ী ও আসবাব পত্র। এছাড়া ভাড়ার জন্য বাড়ী, গাড়ী ও এ প্রকারের অন্তর্ভুক্ত।

প্রশ্ন: যদি কোনো ব্যক্তির বৈধ সম্পদ এ পরিমাণ না থাকে, যার ওপর জাকাত ওয়াজিব হয়। কিন্তু তার কাছে হারাম সম্পত্তিও রয়েছে যেগুলো যোগ করলে জাকাত ওয়াজিব হয়। এমন ব্যক্তির উপর জাকাত ওয়াজিব হবে কি না?

উত্তর: হারাম মালের উপর জাকাত আসে না। তাই প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির যদি সত্যিই হালাল সম্পদ নেসাব পরিমাণ না থাকে তাহলে তার ওপর জাকাত ওয়াজিব হবে না।

প্রকাশ থাকে যে, হারাম মাল পুরোটাই মালিকের নিকট ফিরিয়ে দেওয়া আবশ্যক। মালিক জানা না থাকলে গরীব-মিসকিনকে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দেওয়া জরুরি। তা কোনো অবস্থায়ই নিজে ভোগ করা জায়েয হবে না। হারাম কিয়ামতের দিন কঠিন আজাবের কারণ হবে। তাই হারাম মাল থেকে সবার বেঁচে থাকা কর্তব্য।

রমজানের রোজাসহ ইসলামের অন্যান্য বিষয়ে জানতে আপনিও প্রশ্ন পাঠাতে পারেন। প্রশ্ন পাঠাতে মেইল করুন- [email protected]

উত্তর প্রদান: মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘন্টা, জুন ২১, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।