ঢাকা, বুধবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

আজ তারাবিতে পাঠ শক্তির মহড়া ও প্রতিশোধ নয়, ক্ষমা মহত্বের লক্ষণ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৩ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৬
আজ তারাবিতে পাঠ শক্তির মহড়া ও প্রতিশোধ নয়, ক্ষমা মহত্বের লক্ষণ

চলতি রমজানের দ্বিতীয় দশক শুরু হয়ে। আজ অনুষ্ঠিত এগারোতম খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনে কারিমের তেলাওয়াতকৃত অংশের বিশেষ উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হচ্ছে প্রতিশোধ ও ধৈর্যধারণ।

এ বিষয়ে সূরায়ে নাহলের ১২৬-১২৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ কর, তবে ঠিক ততখানি করবে যতখানি অন্যায় তোমাদের প্রতি করা হয়েছে। আর যদি তোমরা ধৈর্যধারণ কর তবে তা-ই ধৈর্যশীলদের জন্য উত্তম। ধৈর্যধারণ কর। তোমার ধৈর্যধারণ তো হবে আল্লাহর সাহায্যে। তাদের (মন্দ ব্যবহারে) জন্য দুঃখ করো না। তাদের ষড়যন্ত্রের জন্য মনোক্ষুন্ন হবে না। ’

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আরও অনেক স্থানেই আলোচনা করা হয়েছে। যেমন- ‘মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দ। যে ক্ষমা করে ও আপোস করে তার পুরষ্কার আল্লাহর নিকট আছে। আল্লাহ অত্যাচারীকে পছন্দ করেন না। -সূরা শুরা: ৪০

‘অবশ্য যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে এবং ক্ষমা করে অবশ্যই তার কাজটি দৃঢ় সংকল্পেরই কাজ। ’ –সূরা শুরা: ৪৩

‘তাদের জন্য বিধান দিয়েছিলাম, আঘাতের বদলায় অনুরূপ আঘাত। কিন্তু যে ব্যক্তি (আঘাত) ক্ষমা করবে তার পাপ মোচন হবে। ’ –সূরা মায়েদা: ৪৫

‘তোমরা ধাবমান হও স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও জমিনের ন্যায়। যা প্রস্তুত করা হয়েছে ওই সব মুত্তাকিদের জন্য; যারা স্বচ্ছল-অস্বচ্ছল অবস্থায় দান করে, যারা ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে। আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন। ’ –সূরা আল ইমরান: ১৩৩-১৩৪

‘প্রতিদানস্বরূপ তাদের দেওয়া হবে জান্নাত, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। ’ –সূরা ফোরকান: ৭৫

এ প্রসঙ্গে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘দান করলে সম্পদ হ্রাস পায় না। ক্ষমা করলে আল্লাহ সম্মান বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহকে খুশি করার জন্য যে ব্যক্তি নত হবে আল্লাহ তাকে উঁচু করবেন। ’ –সূরা মুসলিম: ৬৭৫৭

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ অনুমতি দিয়েছেন কেউ যদি অন্যায়ভাবে কারও দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবে সে ইচ্ছা করলে, ক্ষতির সমপরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারবে। তবে প্রতিশোধ গ্রহণ করা সর্বোত্তম পন্থা নয়। বরং ধৈর্যধারণ করে অন্যায়কারীকে ক্ষমা করে দেওয়া সর্বোত্তম আমল। প্রতিশোধের সুযোগ লাভের পরেও যে ব্যক্তি প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে, অন্যায়কারীকে ক্ষমা করে দিবে, আপোস করবে আল্লাহর কাছে তার জন্য বিশেষ পুরষ্কার সংরক্ষিত থাকবে।

উহুদ যুদ্ধে সাময়িক বিপর্যস্থ হয়ে, হজরত হামজা রাযিয়াল্লাহু আনহুর ছিন্ন-ভিন্ন মৃত দেহ দেখে সাহাবাদের অনেকেই সংকল্প ব্যক্ত করেছিলেন যে, আগামীতে কখনো যদি আল্লাহ তাদের ওপর আমাদের বিজয়ী করেন তবে আমরাও হজরত হামজার মতো তাদের অনেকের লাশ কেটে টুকরো টুকরো করব। তখন হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম সূরায়ে নাহলের শেষের তিনটি আয়াত নিয়ে আসেন। এ আয়াত অবতীর্ণ করে মহান আল্লাহতায়ালা সাহাবাদের সংশোধন করেন। সুযোগ পেলেই বদলা নিতে হয় না। প্রতিশোধ নিয়ে শক্তির মহড়া দেখানো, মনের ঝাল মিটানো মানুষের বৈশিষ্ট্য নয়। বরং ক্ষমাই মহত্বের লক্ষণ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৬
এনএ/এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।