ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

আজ তারাবিতে পাঠ হবে নারীদের অধিকারের কথা

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৮ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১৬
আজ তারাবিতে পাঠ হবে নারীদের অধিকারের কথা

আজকের তৃতীয় খতমে তারাবিতে পবিত্র কোরআনে কারিমের তেলাওয়াতকৃত অংশের উল্লেখযোগ্য বিষয়বস্তু হচ্ছে নারীদের অধিকারের কথা। তন্মধ্যে একটি বিশেষ অধিকার হচ্ছে স্ত্রীর মহর পরিশোধ করা।

সূরায়ে নিসার ৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা খুশি মনে স্ত্রীদের মহর পরিশোধ করো। ’

বিয়ে উপলক্ষে বাধ্যতামূলকভাবে স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে প্রদত্ত সম্পদকে মহর বলে। নারীদের বিশেষ অধিকারসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি অধিকার হলো এই মহর। এটা নারীদের জন্য আল্লাহ নির্দেশিত বিশেষ তহবিল। যা দাম্পত্য জীবনের শুরুতে তাদের হস্তগত করার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মহর সম্পর্কে আমাদের সমাজে বিভ্রান্তি, অজ্ঞতা ও অসচেতনতার কোনো অভাব নেই। সমাজের পরুষরা জানেই না যে, স্ত্রীকে মহর দেওয়া ফরজ। বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো- মহর। তাই বিয়ে করতে ইচ্ছুক পুরুষের প্রথম কাজ হলো আগে মহরের টাকা জোগাড় করা। অন্যদিকে আমাদের সমাজের অনেক নারী জানেই না, মহর পাওয়া তাদের অধিকার। এটা স্বামীর কোনো করুণা নয়। কেননা, স্বয়ং আল্লাহতায়ালা তাদের জন্য এ অধিকার নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমাদের সমাজের নারীরা আরও জানে না যে, স্বামীর কাছে নিঃসঙ্কোচে মহর দাবি করা যায়। মহর দাবি করাতে লজ্জার কিছু নেই। অজ্ঞতা, অসচেতনতা ও বিভ্রান্তির কারণে তারা মনে করে, স্বামী তার খোরপোষ দিচ্ছে এমবতাবস্থায় তার কাছে মহর দাবি করবে কিভাবে। আসলে খোরপোষ যেভাবে স্ত্রীর একটি অধিকার, অনুরূপভাবে মহরও স্ত্রীর আরেকটি অধিকার। পৃথক দু’টি অধিকার। একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো সম্পর্ক নেই। স্বামী যদি খোরপোষ দিতে গড়িমসি করে, তবে যেভাবে তার কাছে খোরপোষ দাবি করা যায় ঠিক সেভাবেই স্বামী যদি মহর পরিশোধ করতে গড়িমসি করে তবে তার কাছে মহরও দাবি করা যায়।

অনেকেই মনে করে, মহর হলো বিয়ের গ্যারান্টি। যদি কোনো দিন স্বামী তালাক  দেয়; তখনই কেবল মহর পরিশোধ করতে হবে। নচেৎ তা পরিশোধ করতে হবে না। এ ধারণাটি চরম ভুল ও অজ্ঞতার পরিচায়ক। কেননা, মহর বিয়ের কোনো গ্যারান্টি নয়। মহর হলো বিয়ে শুদ্ধ হওয়ার শর্ত। অন্যান্য ঋণের মতো এটাও একটা ঋণ। তালাক হোক বা না হোক সর্বাবস্থায়ই তা পরিশোধ করতে হবে, স্ত্রীকে দিতে হবে। এমনকি কোনো স্বামী যদি মহর পরিশোধ না করে মারা যায় তবে তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে আগে স্ত্রীর মহর পরিশোধ করতে হবে, পরে ওয়ারিশদের মধ্যে সম্পদ ভাগ করতে হবে।

উক্ত আয়াত ছাড়াও আরও বহু আয়াতে মহান আল্লাহ মহর পরিশোধের আদেশ করেছেন। যেমন- ‘স্ত্রীদের মধ্যে যাদের সম্ভোগ করেছ, তাদের নির্ধারিত মহর পরিশোধ কর। ’ –সূরা নিসা: ২৪

‘এবং ন্যায় সঙ্গতভাবে তাদের মহর পরিশোধ কর। ’ –সূরা নিসা: ২৫

‘যদি পবিত্র বৈবাহিক জীবনযাপনের জন্য মহর পরিশোধ কর, তবে সতী-সাধবী মুমিন নারী ও সতী-সাধবী আহলে কিতাব নারী তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। নিছক লালসা চরিতার্থ করার জন্য বা প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্য হালাল করা হয়নি। ’ –সূরা মায়িদা: ৫

‘হে নবী! আপনার জন্য আপনার ওই স্ত্রীদের হালাল করেছি, যাদের মহর আপনি পরিশোধ করেছেন। ’ –সূরা আল আহজাব: ৫০

‘প্রাপ্য মহর দিয়ে (বিয়ে বৈধ) নারীদের বিয়ে করলে তোমাদের কোনো অপরাধ হবে না। ’ –সূরা মুমতাহিনা: ১০

‘বিয়ের (স্ত্রীকে মহর পরিশোধ করার, স্ত্রীর খোর-পোষ নির্বাহ করার) সামর্থ্য যাদের নেই তারা যেন সংযম অবলম্বন করে। ’ –সূরা নুর: ৩৩

মহর পরিশোধের গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি মহর পরিশোধ না করার ইচ্ছা মনে মনে রেখে কম-বেশি মহর ধার্য্য করে কোনো মেয়েকে বিয়ে করে অতঃপর স্ত্রীকে প্রতারিত করে, মহর পরিশোধ না করেই মারা যায় কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার সঙ্গে এমনভাবে সাক্ষাত করবেন, যেন সে একজন ব্যাভিচারী। ’ –আল মুজামুল আওসাত: ২/২৩৫

‘এবং বিয়ের (স্ত্রীকে মহর পরিশোধ করার ও স্ত্রীর খোর-পোষ নির্বাহ করার) সামর্থ্য যার নেই, সে অনবরত রোজা রাখবে। কেননা, রোজা তার নৈতিক চরিত্রের ঢাল হবে। ’ –সহিহ বোখারি: ১৯০৫

মহরের পরিমাণ
মহর পরিশোধ করা যেহেতু স্বামীর ওপর ফরজ তাই মহর নির্ধারণ করতে হবে এমন পরিমাণ যা পরিশোধ করার সামর্থ্য তার আছে। মহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ ৩০.৬১৮ গ্রাম রূপা বা তার বাজার মূল্য। মহরের সর্বোচ্চ পরিমাণ ইসলাম নির্ধারণ করে দেয়নি। স্বামীর সামার্থ্য আর স্ত্রীর চাহিদার সুন্দর সমন্বয়ের মাধ্যমে যে কোনো উচ্চ পরিমাণ নির্ধারণের অবকাশ ইসলাম স্বামী-স্ত্রীকে দিয়েছে।

অনেকেই মনে করে মহরে ফাতেমি সুন্নত। এটাও ভুল কথা। মহরে ফাতেমি সুন্নত নয় বরং স্বামীর সামর্থের সর্বোচ্চ পরিমাণ হলো সুন্নত। কেননা, হজরত সাহাবায়ে কিরাম তাদের বিয়ে, তাদের সন্তানদের বিয়ে মহরে ফাতেমিকে অনুসরণীয় মহর মনে করতেন না। তারা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী মহর ধার্য্য করতেন।

স্ত্রীর সম্পদের কর্তৃত্ব
আমদের সমাজে মনে করা হয়, স্ত্রীর সব সহায় সম্পদের ওপর স্বামীর অধিকার ও কর্তৃত্ব আছে। স্বামী তার স্ত্রীর সম্পদের ওপর যে কোনো হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখেন। এ ধারণা অজ্ঞতা ও অসচেতনতাপ্রসূত। ইসলাম নারীর স্বতন্ত্র মালিকানা ও স্বত্ত্বাধিকার স্বীকার করে। যেভাবে অন্যের সম্পদে হস্তক্ষেপ করা নাজায়েজ। সেভাবে নিজের স্ত্রীর সম্পদেও হস্তক্ষেপ করা নাজায়েজ। স্ত্রী ওয়ারিশ সূত্রে, উপহার সূত্রে, উপার্জন সূত্রে, মহর সূত্রে যে সম্পদের মালিক হবে তার কর্তৃত্ব একমাত্র তারই।

স্বামী বা স্বামীর পরিবারের কেউ তার এ সম্পদের ওপর তার সানন্দনুমতি ব্যতীত হস্তক্ষেপ করতে পারে না। সে নিজের ইচ্ছামতো যে কোনো বৈধ কাজে এ সম্পদকে ব্যবহার করার অধিকার রাখে। নিজ সম্পদের ব্যবহার সম্পর্কে স্বামীর কাছে কোনো ধরণের জবাবদিহিতা করতেও স্ত্রী বাধ্য নয়। স্ত্রী তার সম্পদ স্বাধীনভাবে নিজ ইচ্ছামতো ব্যয় করবে। এর পরেও স্বামী নিজের সামর্থ্য অনুপাতে স্ত্রীর খোরপোষ বহন করতে বাধ্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।