ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘তারাবিতে পঠিতব্য আয়াতের তাফসির’

আজ পাঠ কোরআন থেকে দূরে থাকার ক্ষতির বিষয়ে

মুফতি মাহফুযূল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪২ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৫
আজ পাঠ কোরআন থেকে দূরে থাকার ক্ষতির বিষয়ে

আজ অনুষ্ঠিত হবে ১৬তম তারাবি। আজকের খতমে তারাবিতে ১৯তম পারা তেলাওয়াত করা হবে।

আজ সূরা ফুরকানের ২১নং আয়াত থেকে তেলাওয়াতে সূরা শুআরা সম্পূর্ণ ও সূরা নামল এর ৫৯নং আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হবে।

তারাবিতে আজকে তেলাওয়াতকৃত অংশে সূরা ফুরকানের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
২৭-৩০নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, সেদিন পাপীরা নিজের হাত কামড়াবে আর বলবে, যদি আমি রাসূলের সঙ্গে ধর্মের পথ অবলম্বন করতাম- তবে কতই-না ভালো হতো! হায়, আমার দুর্ভোগ! যদি অমুককে আমি বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম তবে কতই-না ভালো হতো! কোরআনের নির্দেশ আমার কাছে পৌঁছার পর সে আমাকে বিভ্রান্ত করেছে এবং কোরআন থেকে দূরে রেখেছে। ... আর সেদিন রাসূল বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমার সম্প্রদায় এ কোরআনকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যক্ত করে রেখেছিল।

কোরআন পরিত্যক্ত করার ব্যাখ্যা হল- কোরআন তেলাওয়াত না করা। কোরআনের অর্থ ও বক্তব্য বুঝার চেষ্টা না করা। কোরআনের বিধান অনুযায়ী ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাস্ট্র পরিচালনা না করা। কোরআনের আইন অনুযায়ী বিচার না করা।

৩৪নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, এরাই তারা যাদের মুখের ওপর ভর করে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হবে। পরকালে তাদের শেষ ঠিকানা হবে খুবই নিকৃষ্ট এবং দুনিয়াতে এদের মতাদর্শ ছিল খুবই মন্দ।

৪২-৬২নং আয়াতে গাছের ছায়া, সূর্যের কিরণ, রাতের নীরবতা, দিনের কোলাহল, সাগর, বৃষ্টি, ভূমি ইত্যাদির বিষ্ময় দ্বারা আল্লাহর একত্ববাদের প্রমাণ দেয়া হয়েছে।

৬৩-৭৬নং আয়াতে আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের পরিচয় পেশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তাদের আচার-ব্যবহার হবে বিনয়পূর্ণ। কারো কটু কথায় বা রূঢ় আচরণে তারা পাল্টা প্রতিশোধ পরায়ণ না হয়ে সংযত থাকবে এবং শন্তির কথা বলবে। তারা রাতের নির্জনতায় আল্লাহকে সিজদা করবে। আল্লাহর কাছে কাতরকণ্ঠে প্রার্থনা করবে এবং বলবে আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।

তাদের আরও কিছু গুণ হলো, ব্যয়ের ব্যপারে তারা অপচয় করে না, কার্পণ্য করে না। বরং মিতব্যয়ী থাকে। তারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে ডাকে না। তারা আল্লাহ কর্তৃক নিষিদ্ধি কাউকে হত্যা করে না। তারা বিবাহবহির্ভূত যৌনাচার করে না। তারা অহেতু কাজে নিজেকে জড়িত করে না। অহেতুক কাজের কোনো আড্ডায় পৌঁছে গেলে ভদ্রভাবে তা এড়িয়ে যায়। যখন তাদের সামনে কোরআনের কোনো বিধান পেশ করা হয় তখন তারা তা মেনে নেয়। কুসংস্কারচ্ছন অন্ধ হয়ে অমূলক প্রশ্ন উঠায় না। তারা পরিবার পরিজনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করে এই বলে, হে আল্লাহ! স্ত্রী ও সন্তান দ্বারা আমার চোখ শীতল কর। আমাদের মুত্তাকিদের নেতা বানাও।

সূরা শো’আরা
সূরা শো’আরা পবিত্র কোরআনে কারিমের ২৬তম সূরা। এ সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ২২৭টি।

আজকের তেলাওয়াতকৃত অংশের উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো-
১০-৬৮নং আয়াতে হজরত মূসা (আ.) এবং ফেরাউনের ঘটনা বিস্তারিতভাবে স্থান পেয়েছে। এ নিখিল জগতের প্রতিপালক কে- এ বিষয়ের ওপর হজরত মূসা (আ.)-এর সঙ্গে ফেরাউনের বিতর্ক অনুষ্ঠানের কথা এখানে স্থান পেয়েছে। জাদু বনাম মুজেযার প্রতিযোগিতায় মুজেযার বিজয়ের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকারকারী রাস্ট্রব্যবস্থার নায়ক ফেরাউন তার পরামর্শ সভার সদস্য ও সেনাবাহিনীসহ কিভাবে নদীতে ডুবে পৃথিবীর পাতা থেকে মুছে যায় সে ইতিহাস এখানে আলোচনা করা হয়েছে।

হজরত ইবরাহিম (আ.) নিজের মূর্তিপূজক পিতা ও সমাজের মানুষকে কিভাবে ও কি ভাষায় মূর্তির অক্ষমতা ও মূর্তি পূজার অসারতা বুঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিভাবে তিনি একত্ববাদের সত্যকে জোরালো ভাষায় তাদের সামনে পেশ করেছিলেন সে আলোচনা আছে ৬৯-১০৪নং আয়াতে।

১০৫-১২২নং আয়াতে হজরত নুহ (আ.) ও তার সম্প্রদায়ের ঘটনা, ১২৩-১৪০নং আয়াতে হজরত হুদ (আ.) এবং তার সম্প্রদায় আদ জাতির ঘটনা, ১৪১-৫৯নং আয়াতে হজরত সালেহ (আ.) এবং তার সম্প্রদায় সামূদ জাতির ঘটনা ১৬০-১৭৫নং আয়াতে হজরত লূত (আ.) এবং তার সম্প্রদায়ের ঘটনা, ১৭৬-১৯১নং আয়াতে আসহাবে আইকার ঘটনা আলোচনা করা হয়েছে।

সূরা নামল
সূরা নামল পবিত্র কোরআনে কারিমের ২৭তম সূরা। এটা মক্কি সূরা। এ সূরার মোট আয়াত ৯৩টি। আজকের তারাবিতে তেলাওয়াত করা হবে শুরু থেকে ৫৯নং আয়াত পর্যন্ত।

আজকের তেলাওয়াতকৃত অংশের উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-
৭-১৪নং আয়াতে হজরত মূসা (আ.)-এর নবুওয়ত ও মুজেযা লাভের ঘটনা স্থান পেয়েছে।

১৫-৪৪নং আয়াতে হজরত দাউদ (আ.)-এর আলোচনা অতি সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনার পর বিস্তারিতভাবে তার পরবর্তী উত্তরসূরি তার অনুজ হজরত সোলায়মান (আ.)-এর ঘটনা আলোচনা করা হয়েছে। এখানে আছে পিঁপড়ার কথা বলার ঘটনা, হুদহুদ পাখির ঘটনা, রাণী বিলকিসের ঘটনা, তার সিংসাহসন নিয়ে আসার ঘটনাসহ প্রাসঙ্গিক কিছু আলোচনা।

৪৫-৫৩নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে সামূদ জাতির নয় শীর্ষ নেতা কিভাবে তাদের নবী হজরত সালিহ (আ.)কে হত্যা করার জঘন্য ষড়যন্ত্র করেছিল এবং কিভাবে তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে আল্লাহতায়ালা তাকে ও তার অনুসারীদের রক্ষা করেন?

হজরত লুত (আ.) যখন তার সম্প্রদায়কে সমকামীতার মতো নিকৃষ্ট অশ্লীল কাজ বর্জনের নসিহত করলেন- তখন তারা তাকে এলাকা থেকে তাড়ানোর যড়যন্ত্র করে। সে আলোচনা করা হয়েছে ৫৪-৫৮নং আয়াতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘন্টা, জুলাই ০৩, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।