ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘রমজান ঐতিহ্য’

ফুটবলের দেশ ব্রাজিলেও রমজানে হয় খতমে তারাবি

আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০১ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৫
ফুটবলের দেশ ব্রাজিলেও রমজানে হয় খতমে তারাবি

ব্রাজিলের নাম জানেন না এমন মানুষের সংখ্যা খুব কমই আছে। তবে ফুটবলের ব্রাজিল আর পেলের ব্রাজিল যেমন বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত, ঠিক এর উল্টো ইসলামি সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিষয়ে।

ব্রাজিলে জনসংখ্যার দিক দিয়ে মাত্র ২.৫% মুসলমান। তার পরও ব্রাজিলের মুসলিম জনগণ অত্যন্ত সচেতনভাবে ইসলামি বিশ্বাস, চেতনা ও সংস্কৃতির লালন করে আসছে।

মুসলমানরা ব্রাজিলিয়ান সমাজে স্বকীয়তা রক্ষা করেই চলছে এবং ইসলামি রাষ্ট্রের দাওয়াতি সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজ দেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। রমজান মাসে তাদের প্রচেষ্টা আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। রমজান তাদের কাছে ধর্মীয় অনুপ্রেরণার উৎস।

ব্রাজিলে ইসলামের আগমন হয়েছে আরব, আফ্রিকা ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে আগত মুসলিম অভিবাসীদের মাধ্যমে। ব্রাজিলিয়ান মুসলিমদের বড় একটি অংশ সিরিয়া থেকে থেকে আগত। উনিশ শতকের শেষভাগে এবং বিশ শতকের শুরুতে সিরিয়াসহ আরব দেশগুলো থেকে বিপুল সংখ্যক মুসলিম অভিবাসী ব্রাজিলে পাড়ি জমায়। ব্রাজিলে ইসলাম অস্তিত্ব উনিশ শতকের বহু পূর্বে থাকলেও এ সময়কালকে ব্রাজিলে মুসলিম সমাজের গঠন ও বিকাশের স্বর্ণ যুগ বলা হয়। বর্তমানে ব্রাজিলে স্থানীয় ও অভিবাসী মিলিয়ে প্রায় ২৫ লাখ মুসলিম বসবাস করে। ১৫০টির মতো মসজিদ রয়েছে এবং ৮০জন আলেম ইসলাম প্রচারের কাজে নিয়োজিত আছেন।

সংখ্যায় স্বল্প হলেও ব্রাজিলিয়ান মুসলিমদের ঐক্যের কারণে তারা রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সুফল ভোগ করে। যে কোনো সমস্যা তারা সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করার চেষ্টা করে। ব্রাজিলের বৃহৎ দুটি মসজিদ হলো ফোজ ডো এগাসিও শহরে অবস্থিত মসজিদে ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) এবং সিও বার্নার ডো কাম্পিও শহরে অবস্থিত মসজিদে আবু বকর (রা.)। সিও বার্নার ডো কাম্পিও শহরকে ব্রাজিলের মুসলিম রাজধানী বলা হয়। কেননা অধিকাংশ মুসলিম প্রতিষ্ঠান এই শহরেই অবস্থিত।

ব্রাজিলের মুসলিম সংগঠনগুলো স্থানীয় অধিবাসীদের নিকট ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরতে বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। তাদের বেশ কিছু সমাজবেসামূলক কার্যক্রমও রয়েছে। ব্রাজিলে অবস্থানকারী মুসলিমগণ তাদের একদিনের আয় একটি ফাণ্ডে জমা করে এবং মাস শেষে কোনো দারিদ্র্য এলাকার সাধারণ মানুষের বিতরণ করে। রমজানে মাসে তারা আরো অধিক পরিমাণ দান করেন এবং প্রতি সপ্তাহে রিলিফ বিতরণ করে। এছাড়াও তারা ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, রক্তদান কর্মসূচি পালন করে।

আরব শায়খদের সহযোগিতায় সেখানে কিছু শিক্ষিত মুসলিম তরুণ পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছে। ব্রাজিয়ান সমাজে তার ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্রাজিলে মুসলিম রীতি-নীতি পালনের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যাও রয়েছে। যেমন আজানে সাউন্ডসিস্টেম ব্যবহার করা যায় না। ভাষার ভিন্নতা ব্রাজিলে ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে একটি বড় বাঁধা।
 
ব্রাজিলের মুসলিমগণ অন্যান্য অমুসলিম দেশের মুসলিমদের ন্যায় রমজানকে ধর্মীয় অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবেই গ্রহণ করে। ব্রাজিলের সবগুলো গণমাধ্যমে রমজানের চাঁদ ওঠার সংবাদ প্রচারিত হয়। রমজানে তারা পরস্পরের মাঝে যোগাযোগ বৃদ্ধি করে এবং সামগ্রিকভাবে রমজান উদযাপনের ব্যবস্থা করে। ইসলামিক সেন্টার অব ব্রাজিল রমজানের ইফতার, তারাবিসহ সামগ্রিক বিষয়ের আয়োজন করে থাকে। ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, শায়খ আবদুর রহমান বাগদাদির ইমামতিতে ব্রাজিলের সালভাদির শহরে সর্বপ্রথম তারাবির জামাত অনুষ্ঠিত।

রমজানে ব্রাজিলিয়ান মুসলিমদের আচার-আচরণেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন, অন্য সময় হেজাব না পরলেও রমজানে মুসলিম নারীগণ হেজাব পরিধান করে। কেউ কেউ আবার তা কয়েক মাস পর্যন্ত অব্যাহত রাখে। ইফতারের সময় তারা মসজিদ বা নামাজের স্থানের আশে-পাশের মুসলিম মিষ্টির দোকানে উপস্থিত হয় এবং ইফতারে অধিক পরিমাণ মিষ্টান্ন গ্রহণ করে। ব্রাজিলিয়ান মুসলিমদের বড় অংশ সিরিয়া ও লেবাননের অভিবাসী হওয়ায় কৃষ্টি-কালচার ও খাবারের ক্ষেত্রে এ দুই দেশের প্রাধান্য দেখা যায়। তারা সাধারণত সামাজিকভাবে ইফতারের আয়োজন করে। সেখানে সব শ্রেণীর মুসলিম সপরিবারে অংশগ্রহণ করে। ব্রাজিলের মুসলিমগণ গুরুত্বের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করে এবং কিছু কিছু মসজিদে তারাবির নামাজে কোরআন খতম করা হয়।

কয়েক বছর যাবত মিসরের ধর্ম ও ওয়াকফ মন্ত্রণালয় রমজানে সেখানে নামাজ ও ইসলামি বিষয়ে পাঠদানের জন্য হাফেজ, কারী ও আলেমদের প্রেরণ করছে। তারাবির নামাজ শেষে দীর্ঘ মোনাজাত হয়। মোনাজাতে সারা বিশ্বের মুসলমানের জন্য দোয়া করা হয়।

ব্রাজিলিয়ান মুসলিমরা রমজান মাসে কোরআন তেলাওয়াত ও সন্তানদের তা শিক্ষাদানের ওপর অত্যাধিক গুরুত্ব দেন। এছাড়াও রমজানে সন্তানদের ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো শেখানোর ব্যবস্থা করেন, যেনো ইসলামি বিশ্বাস ও চেতনার ওপর টিকে থাকে। ইসলামিক সেন্টার অব ব্রাজিল রমজানে হিফজুল কোরআন, কোরআন তেলাওয়াত, ইসলামিক পাঠ ও সাহিত্যবিষয়ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০০১ ঘন্টা, জুন ২৯, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।