ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

১১ মাস পর দেশে ফিরছে ইমরানের মরদেহ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৯ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৯
১১ মাস পর দেশে ফিরছে ইমরানের মরদেহ

ইতালি থেকে: একটু ভালো থাকার আশায়, জীবনকে আরেকটু উন্নত করতে কিংবা পরিবারের মানুষগুলোকে ভালো রাখতে অনেকেই ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় পাড়ি জমানোর চেষ্টা করে বিদেশে। 

তেমনি বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেছিলেন ইমরান খান। কিন্তু ২০১৮ সালের আগস্টে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান।

তবে তার মরদেহটি এখনও রয়েছে ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশ মাল্টার মর্গে!

দীর্ঘদিন পর আগামী শুক্রবার (২৮ জুন) স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় মাল্টার পাওলা জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে ইমরানের প্রথম জানাজা। পরে এদিন বিকেল ৩টায় লাশবাহী প্লেনে ইমরানের মরদেহ তার পরিবারের কাছে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশি প্রবাসী ও মাল্টা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাউসার ফজলু।

শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর গ্রামের আবদুল মান্নান খানের ছেলে ইমরান খান ওরফে সুজন। চোখে-মুখে স্বপ্ন ছিলো ইউরোপে গিয়ে ভালো আয়-রোজগার করে পরিবারের হাল ধরে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করবেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।  

দালালের প্রলোভনে তাকে লাশ হয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে। ইতালি থেকে নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার সময় অনেকের সঙ্গে ইমরানেরও করুণ মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ১১ মাস আগের। সেই ইমরানের মরদেহ আগামী শনিবার (২৯ জুন) দেশে আসছে। মাল্টার একটি সরকারি মর্গ থেকে মরদেহটি আনা হচ্ছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন ইমরানের স্বজনরা।

ইতালি থেকে ইমরান নৌকায় ওঠার পর পরিবার ধরেই নিয়েছিল, তিনি ইউরোপে পৌঁছেছেন। যে ছেলেকে জীবিত পাঠিয়েছিলেন, শনিবার তারই মরদেহ গ্রহণ করবেন তারা। ইমরানের মৃত্যুর তিন মাস পর পরিবার তার মৃত্যুর খবর পায়। এর আগে তারা ভেবেছিল ইমরান হয়তো বেঁচে আছে।  

ইমরানের পরিবার ও ইতালি প্রবাসীরা বাংলানিউজকে জানান, ২০১৮ সালের শুরুর দিকে দালালের মাধ্যমে ইউরোপের উদ্দেশে প্রথমে লিবিয়ায় যান ইমরান খান। সেখানে আট মাস থেকে ১৬ আগস্ট ছোট একটি নৌকায় করে ইউরোপের উদ্দেশে রওনা দেন ইমরানসহ আরও ৮৪ জন।  

কিন্তু পথিমধ্যে পাঁচদিন পর তাদের ইঞ্জিনচালিত নৌকার তেল, সঙ্গে থাকা পানি ও খাবার ফুরিয়ে যায়। দু’দিন পর অন্যদের সঙ্গে ইমরানও তৃষ্ণায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এক সময় নৌকাতেই মারা যান। পরবর্তীতে তাদের বহনকারী নৌকাটি মাল্টায় পৌঁছালে জীবিত থাকা শ্রমিকদের উদ্ধার করেন দেশটির কোস্ট গার্ডের সদস্যরা।  

এরপর ইমরানের মরদেহ উদ্ধার করে একটি সরকারি মর্গে রাখা হয়। সেই সময় তার মরদেহ দেখে সেখানকার প্রবাসীরা তাকে শনাক্ত করে তার স্বজনদের খুঁজে বের করেন।  

ইমরানের বোনও ইতালি প্রবাসী। তবে তার বোনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরবর্তীতে ইমরানের মরদেহ দেশে আনা ব্যয়বহুল জেনে স্বজনরা এতে অনীহা প্রকাশ করেন। শেষে প্রবাসীদের সহায়তায় তার মরদেহ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।  

মাল্টা প্রবাসী বাংলাদেশিরা বাংলানিউজকে জানান, ইমরানের মরদেহ দ্রুতই দেশে আনা সম্ভব হতো। কিন্তু দেশটিতে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস না থাকায় সেখান থেকে কারও লাশ পাঠানো অনেক ঝামেলা ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কারণ বাংলাদেশি কর্মকর্তারা মাল্টার সব কার্যক্রম গ্রিস থেকে পরিচালনা করেন।

ইমরানের বাবা আবুল মান্নান বাংলানিউজকে জানান, দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে ইমরান ছিলেন সবার বড়। তাকে নিয়ে পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সেই স্বপ্নগুলো এখন মাটি হয়ে গেল।  

যারা ইমরানকে প্রলোভন দেখিয়ে ইউরোপ পাঠানোর নাম করে নৌকায় তুলেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।  

শুধু ইমরান খানই নয়, তার মতো হাজারো বেকার যুবক পাড়ি দিচ্ছে এ ভয়ঙ্কর পথ। কিন্তু এ পথ যে মোটেও সহজ নয়, তা না জেনেই অনেকেই এ পথে পাড়ি জমাচ্ছেন। আবার অনেকে হয়তো বা জেনেই পাড়ি দিচ্ছেন এ পথ।  

ইউরোস্টারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে প্রতিবছর ইউরোপে ঢুকছে প্রায় লক্ষাধিক বাংলাদেশি। যাদের বড় একটি অংশই মাঝ সাগরে নৌকা ডুবিতে প্রাণ হারান। পরে তাদের মরদেহ নিয়ে বিভিন্ন দেশে তৈরি হয় জটিলতা। অনেকের সন্ধান জানা গেলেও খরচের কারণে মরদেহ দেশে নিতে অস্বীকৃতি জানায় তাদের পরিবার।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৮ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৯
এসএ/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।