ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

রাজধানীতে গ্যাস সংকট তীব্র

তাবারুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৬
রাজধানীতে গ্যাস সংকট তীব্র ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

ঢাকা: রাজধানীর রামপুরার বাসিন্দা টুম্পা খাতুন, বেশ কিছু দিন ধরে সময়মত রান্না করতে পারছেন না তিনি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তার রান্নাঘরে চুলা জ্বলছে টিমটিম করে।

কারণ গ্যাসের চাপ নেই।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করে অল্প-স্বল্প রান্না-বান্না সেরে নিতে হচ্ছে তাকে। তা না হলে গভীর রাতে গ্যাসের চাপ বাড়ার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে তাকে।
 
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এই অবস্থা চললেও গত তিন/চার দিন ধরে এই সংকট যেন আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ করেন টুম্পা।
 
গ্যাস সঙ্কটের ব্যাপারে টুম্পা খাতুন বলেন, সকালে ছেলে-মেয়েদের রান্না করে খাওয়ানো যাচ্ছে না। দোকানের শুকনো খাবার খাইয়ে শিশুদের স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে। বাড়িতে মেহমান আসলে আরও বিপদ ! তখন প্রতিকারের কোন উপায় থাকে না। তিতাস গ্যাস কোম্পানির নম্বরে কয়েকবার ফোন দিয়ে অভিযোগ করা হয়েছে।
 
পূর্ব রামপুরা হাইস্কুল গলির দোকানদার শফিকুল ইসলাম জানান, ইদানীং দোকানে পাউরুটি, বিস্কুট ও কলা বেশি করে রাখি, এসব দ্রুত বিক্রি হয়ে যায়। কোন কোন দিন সন্ধ্যার আগেই সব শেষ হয়ে যায়। কারণ গ্যাসের অভাবে অধিকাংশ বাসায় রান্না হচ্ছে না, এই কারণে অনেককেই রাতে পাউরুটি, বিস্কুট, কলা খেয়ে থাকতে হচ্ছে বলে জানালেন তিনি।
 
একই এলাকার বাসিন্দা মাহবুব জানান, দুই দিন আগে পূর্ব রামপুরা থেকে বাসা বদল করে পশ্চিম রামপুরায় আসলাম। আগের বাসায় গ্যাসের যেমন সংকট ছিল, নতুন বাসাতেও তাই।
 
রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকার বাসিন্দা আফসানা ইসলাম বলেন, লাইনে গ্যাসের চাপ নেই, টিমটিম করে চুলা জ্বলে, তা দিয়ে দিনের বেলায় রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। গভীর রাতে গ্যাসের চাপ বাড়লে তখন রান্নার সুযোগ হয়।
 
খবর নিয়ে জানা গেছে, কেবল রামপুরা বা সিদ্ধেশ্বরীতেই নয়, বনশ্রী, বাড্ডা, তেজগাঁও, তেজকুনিপাড়া, মগবাজার, নাখালপাড়া, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, মালিবাগ, খিলগাঁও, কমলাপুর, গোলাপবাগ, গোপীবাগ, মানিকনগর, ওয়ারি, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকাসহ রাজধানীর বহু জায়গায় গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।
 
ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে আবাসিকসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে গ্যাস সরবরাহ করে থাকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ।

মতিঝিল, মিরপুর ও গুলশান এই তিন অঞ্চলে কোম্পানির রয়েছে জরুরি তিনটি গ্যাস নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র।
 
নাম প্রকাশ না করে বাংলানিউজকে এসব কেন্দ্রের টেকনিশিয়ানরা ফোনে জানান, তাদের কাছে আবাসিক গ্যাস সংকটের বিষয়ে প্রতিদিন অসংখ্য অভিযোগ আসছে। প্রতিবার শীতকালে গ্যাসের সমস্যা থাকলেও এবার সংকট বেশি বলে তারা জানিয়েছেন।
 
গ্যাসের এই সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে তিতাস গ্যাস কোম্পানি উপ-মহাব্যবস্থাপক ফায়জার রহমান বাংলানিউজকে জানান, ঢাকায় গ্যাস সরবরাহের জন্য বাখরাবাদ-সিদ্ধিরগঞ্জে ৩০ ইঞ্চির একটি লাইনের মেরামত কাজ চললে। হবিগঞ্জের মুছাই গ্যাস কম্প্রেসার স্টেশনে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়া শীতকালে আবাসিক ক্ষেত্রে ২০/৩০ শতাংশ গ্যাসের ব্যবহার বেড়ে যায়। এসব কারণে ঢাকায় গ্যাসের চাপ কমে গেছে বলে জানান তিনি।
 
তিনি বলেন, কোম্পানির নেটওয়ার্কের মধ্যে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে পেট্রোবাংলা থেকে ১৭’শ মিলিয়ন ঘটফুটের মতো গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। আরও ৩’শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। তবে এতদিন তেমন সমস্যা অনুভূত না হলেও প্রধানত শীতকালের জন্য এমনটা দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন ফায়জার রহমান।
 
সমস্যা সমাধানে চেষ্টা চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড কাজ করছে। অল্প সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৬
টিএইচ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।