ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

ভুটানে জলবিদ্যু‍ৎ উৎপাদন করবে বাংলাদেশ

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৭ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৫
ভুটানে জলবিদ্যু‍ৎ উৎপাদন করবে বাংলাদেশ

ঢাকা: ভুটানে যৌথ বিনিয়োগে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায় বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে এতে ভুটান সরকার সম্মতি দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।



সম্প্রতি ভুটান সফর শেষে দেশে ফিরে বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান তিনি।

জানা যায়, ভুটানে ২৫ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে। দেশটির ভূ-প্রকৃতি সেখানে ‍বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাড়তি সুবিধা করে দিয়েছে। গ্রীষ্মে বাংলাদেশে থাকে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা। শীতকালে চাহিদা কমে নেমে আসে অর্ধেকে।
 
অন্যদিকে ভ‍ুটানে ঠিক উল্টো চিত্র। তাদের শীতকালে চাহিদা বেড়ে যায়। এসময় নদীতে পানি কমে যাওয়ায় কমে যায় বিদ্যুতের উৎপাদন। প্রকৃতির এই বিচিত্র খেয়ালে দু’দেশেই লাভবান হতে পারবে বলে জানিয়েছে ড. কায়কাউস।
 
শীতকালে বাংলাদেশের যখন চাহিদা কমে যায়, ভুটানে থাকবে তখন সর্বোচ্চ চাহিদা। তখন উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভুটানে নেবে। আর গ্রীষ্মে যখন বাংলাদেশের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকবে তখন সবটাই বাংলাদেশ আমদানি করতে পারবে। ভুটানের সঙ্গে এমন আলোচনাই হয়েছে। জানান আহমদ কায়কাউস।
 
তিনি জানান, ভুটান যৌথ বিনিয়োগে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সম্মতি দিয়েছে। এখানে বিনিয়োগে আগ্রহী জাপানি দাতা সংস্থা জাইকা। তারা (জাইকা) বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সঞ্চালন লাইন নির্মাণে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটি ভ‍ুটানের পরিকল্পনা মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। তারাই এ দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকের আয়োজন করে।
 
ভুটানে যৌথ বিনিয়োগে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এখন প্রধান বাধা ভারত। কারণ, বিদ্যুৎ আমদানি করতে হলে ভারতের মাটি ব্যবহার করতে হবে। দেশটির সম্মতি পেলেই এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। প্রচলিত অন্য উৎস থেকে সবচেয়ে কমদামে উৎপাদন করা হয় জলবিদ্যুৎ। এতে ইউনিট প্রতি ১ টাকার কম খরচ পড়ে। অন্যদিকে, কয়লায় ৫ টাকার মতো, তেল দিয়ে ব্যয় হচ্ছে ২০ টাকার উপরে।
 
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলানিউজকে বলেন, ভুটানে যৌথ বিনিয়োগে বিদ্যুৎ উ‍ৎপাদনের বিষয়ে ভারতের আপত্তি নেই। আমরা এখন এগিয়ে যেতে চাই।
 
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রতি অন্য দেশের আস্থা বেড়েছে। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা বাড়াতে আগ্রহী। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো সম্পর্ক বিরাজ করছে।

জানা যায়, ভুটান বর্তমানে ১ হাজার ৪৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যু‍ৎ উ‍ৎপাদন করছে। যার সবটাই জল বিদ্যুৎ থেকে। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় ২৮৮ মেগাওয়াট উৎপাদন কমে যায়। বেশিরভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র ভারতীয় অনুদান ও ‌ঋণে নির্মিত সেখানে। সেখান থেকে স্বল্পমূল্যে বিদ্যুৎ আমদানি করছে ভারত।

২০২০ সালের মধ্যে আরও ১০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে ভুটান। যার সবটাই ভারত আমদানি করবে। এজন্য ভারতের সহযোগিতায় ১০টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৬ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। ২০১৯ সালের মধ্যে নতুন তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে যাবে।

ভুটানের পাশাপাশি নেপালেও যৌথ বিনিয়োগে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশ। এছাড়া ভারত থেকে বর্তমানে ৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে। ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ আমদানি আরও বাড়াতে চায় সরকার। অন্যদিকে ভারত নেপাল ও ভুটানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে লাইন নির্মাণ করে পশ্চিমবঙ্গে নিতে চায়।

এতে বাংলাদেশ-ভারত সম্মত হয়েছে। চলছে প্রাক-সমীক্ষার কাজ। প্রাথমিকভাবে একাধিক রুটও নির্ধারণ করা হয়েছে। ভারত বিদ্যুতের করিডোর পেলে সেখান থেকেও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ পাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৪ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৫
এসআই/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।