ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

গ্যাসের অর্থনৈতিক মূল্য!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৪
গ্যাসের অর্থনৈতিক মূল্য!

ঢাকা: প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসে ২৫ টাকা হারে রাজস্ব বসছে। একে বলা হচ্ছে গ্যাসের অর্থনৈতিক মুল্য।

অর্থনৈতিক মুল্যের ৫৫ শতাংশ সরাসরি রাজস্ব খাতে আর ৪৫ শতাংশ সংশ্লিষ্ট কোম্পানির তহবিলে জমা হবে।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আবেদন এমন বিধান করার প্রস্তাব করেছে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো। বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ।

সেলিম মাহমুদ জানান, এতোদিন গ্যাসের কোনো অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ করা ছিল না। শুধু উৎপাদন ও বিতরণ খরচকে বিবেচনা করে গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করা হতো।

এখন নতুন করে অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে এবং এটাই হওয়া উচিত। বিশ্বের অনেক দেশেই এটি প্রচলিত রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ড. সেলিম মাহমুদ।

২০০৯ সালে ১১ দশমিক ২২ শতাংশ দাম বাড়িয়ে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়। ওই তহবিল দিয়ে গ্যাসের অনুসন্ধান ও উন্নয়নের কাজ চলছে। এবার বসছে অর্থনৈতিক মূল্য।

গ্যাস বিতরণে সবগুলো কোম্পানিই এখন মুনাফায় রয়েছে। কোনো কোনো কোম্পানি বছরে কর্মচারীদের ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রফিট বোনাস দিচ্ছে। এ অবস্থায় আবারও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব এবং এর সঙ্গে ২৫ টাকা (হাজার ঘনফুট) অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণকে হাস্যকর দাবি করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম।

তিনি বলেছেন, জনজীবনের ব্যয় বাড়িয়ে কোম্পানির স্টাফদের পকেট ভারি করার জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনোই যৌক্তিকতা নেই।

বিইআরসি সূত্র জানিয়েছে, বিতরণ কোম্পানিগুলো চলতি মাসে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব জমা দিয়েছে। কোম্পানিগুলো বলেছে, তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না। যে কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানো প্রয়োজন।

গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো এ প্রস্তাবের স্বপক্ষে কোনো তথ্য প্রমান দেয়নি। এ কারণে বিইআরসি কোম্পানিগুলোকে আর্থিক রিপোর্ট দিতে বলেছে। এ ছাড়া বিগত বছরের আয়-ব্যয়ের হিসেব চাওয়া হয়েছে।

বিইআরসি’র এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, গ্যাস কোম্পানিগুলো ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত প্রফিট বোনাস দিয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে তথ্য চাইলে কোম্পানিগুলো দিতে গড়িমসি করছে। ২০০৯ সালে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সময়ও এ তথ্য চাওয়া হয়েছিলো। কিন্তু পেট্রোবাংলা দেয় নি।

ড. সেলিম মাহমুদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো জানুয়ারি থেকে দাম বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছে। এ লক্ষ্যে ডিসেম্বরের মধ্যে গণশুনানি শেষ করতে চান তারা। যদি গণশুনানি শেষ করতে পারেন তাহলে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে বিইআরসি।

অক্টোবরে পেট্রোবাংলা আবাসিক খাতে এক চুলার গ্যাসের দাম ৪০০ থেকে বাড়িয়ে ৮৫০ টাকা এবং দুই চুলা গ্যাসের দাম ৪৫০ থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছে। এছাড়া আবাসিকে মিটার ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে প্রতি হাজার ঘনফুট ১৪৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩৫ টাকা বা ৬০ দশমিক ৬৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা রয়েছে।

সিএনজিতে প্রতি হাজার ঘনফুটে ৮৪৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ১৩২ টাকা ৬৭ পয়সা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শিল্প গ্রাহকদের ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২২০ টাকা (বৃদ্ধির হার ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের জন্য ৭৯ টাকা ৮২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮৪ টাকা(বৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ), বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ২৬৮ টাকা শূন্য ৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা (বৃদ্ধির হার ৩০ দশমিক ৫৫ শতাংশ) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

চা বাগানে ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা (বৃদ্ধির হার ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ), ক্যাপটিভে ১১৮ টাকা ২৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৪০ টাকা (বৃদ্ধির হার ১০২ দশমিক ৯৪ শতাংশ) এবং সার কারখানায় ৭২ টাকা ৯২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা (বৃদ্ধির হার ৯ দশমিক ৭১ শতাংশ) করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।