ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

সিলেট জুড়ে গ্যাসের দাবিতে আন্দোলন

সাব্বির আহমদ, স্টাফ করসেপন্ডন্টে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৩
সিলেট জুড়ে গ্যাসের দাবিতে আন্দোলন

সিলেট: জৈন্তাপুরের হরিপুরের গ্যাসে চাকা ঘুরছে দেশের কল-কারখানা, আগুন জ্বলছে চুলোয়। সেই জৈন্তাপুরের চুলোয় নেই গ্যাস।

যেন প্রদীপের নিচে অন্ধকার। স্থানীয় ভাবে অগ্রাধিকার থাকলেও গত ৫০ বৎসর থেকে জৈন্তিয়াবাসী গ্যাস সরবরাহ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। এবার একই দাবিতে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনে একাত্ম হয়েছে সিলেটের পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি উপজেলা।

এ দাবিতে বৃহত্তর জৈন্তায় (জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট) উপজেলায় আগামী বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহবান করেছে জৈন্তা জনদাবি পরিষদ।

জানা গেছে, ১৯৫৫ সালে জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর এলাকায় বাংলাদেশের প্রথম প্রাকৃতিক গ্যাস অবিস্কার হয় এবং ১৯৮৬ সালের ২৪ ডিসেম্বর দেশের একমাত্র তেল খনি আবিস্কৃত হয়। অর্ধশতাব্দী অতিবাহিত হলেও জৈন্তিয়া এলাকার জনসাধারণ মানুষ গ্যাস সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

শুধু জৈন্তাপুর নয় জৈন্তাপুর,হরিপুর গ্যাস ক্ষেত্র থেকে দেড় কিলোমিটার দূরত্বের জনপদ কানাইঘাটেও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়নি। গ্যাস নেই পাশ্ববর্তী উপজেলা জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, ও কোম্পানীগঞ্জে।

এসব উপজেলার সাধারণ মানুষ ফুঁসে উঠছেন গ্যাসের দাবিতে। বঞ্চনার ক্ষোভ থেকে দানা বেধেঁছে আন্দোলন।

অনেক এলাকায় বিক্ষুব্ধ মানুষ আন্দোলনে নেমেছেন। আরো কয়েক উপজেলার মানুষ আন্দোলনের পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে।

বিগত ৯০ দশকের সময় থেকে জৈন্তা জনদাবি পরিষদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৯৪ সালের ১৯ নভেম্বর অর্ধ দিবস, ১৯৯৫ সালের ৯ মার্চ পূর্ণদিবস হরতাল পালন করা হয়। ১৯৯৫ সালের ৭ ডিসেম্বর সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লি.- ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হলে তৎকালীন বিএনপি সরকার জনস্বার্থে জৈন্তাপুরে গ্যাসলাইন সংযোগের নিদের্শ দেওয়া হলে হরিপুর পর্যন্ত আংশিক কিছু এলাকায় গ্যাস লাইন স্থাপন করা হয়। কিন্তু কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার জনসাধারণ এ সুবিধা পায়নি।

এরপর ওই সংগঠনের ডাকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মত হরতাল পালন করেন জৈন্তাপুরবাসী।

জাতীয় নির্বাচন এলেই এসব এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীর গ্যাস লাইন দেওয়ার আশ্বাস-প্রতিশ্রতির ফুলঝুড়ি ছড়িয়ে ভোট পক্ষে নেন। কিন্তু মানুষের দাবি দাবিতেই বন্দি থাকে বছরের পর বছর।

জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, এ এলাকার শত শত একর ভূমি স্থানীয় জনসাধারণ দেশ জাতির বৃহত্তর স্বার্থে প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ তেল উত্তোলনের জন্য দিয়ে ছিলেন। অথচ জৈন্তার মানুষের ভাগ্যে এখন পর্যন্ত গ্যাস ব্যবহারের সুবিধা হয়নি। তিনি জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় গ্যাস লাইন স্থাপনের দাবি জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কানাইঘাট স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এহসানুল হক জসিম বাংলানিউজকে বলেন, হরিপুরে গ্যাসে কত এলাকার কত চুলায় যে আগুন জ্বলে কিন্তু বাতির নিচে অন্ধকার। জৈন্তাপুরসহ সিলেটের অন্য কোনো উপজেলায় এ পর্যন্ত গ্যাস সংযোগ নেই। অথচ হরিপুর থেকে অন্যান্য এলাকার দূরত্ব খুব বেশি নয়।

আমরা বাইরের এলাকার গ্যাস সংযোগের বিরোধী নই। তবে আমাদেরকে বঞ্চিত রেখে কেন গ্যাস অন্যত্র দেওয়া হবে।

তিনি গ্যাস সংযোগের দাবিতে হরতালসহ তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান।

এ দাবিতে হরতাল আহ্বানকারী সংগঠনের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন জানান, এলাকায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া না পর্যন্ত লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি চলবে।

কানাইঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ সিরাজুল হক বলেন, দীর্ঘ দিন থেকে আন্দোলন চলছে। এবার সোচ্চার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। এই দাবির সঙ্গে সকলেই একমত পোষণ করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৩০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১,২০১৩
এসএ/বিএসডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।