ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

কুইক রেন্টালের বিদ্যুৎ কিনছে না পিডিবি, জ্বালানি ব্যবহার কমেছে ২২%

বিশেষ সংবাদদাতা | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১২
কুইক রেন্টালের বিদ্যুৎ কিনছে না পিডিবি, জ্বালানি ব্যবহার কমেছে ২২%

ঢাকা: কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কেনা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। জ্বালানি তেলের ওপর চাপ কমাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এতে জ্বালানি তেলের চাহিদা কমলেও বিপাকে পড়েছে নবনির্মিত ডজন খানেক কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র।

সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত এক মাসে দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা ২২ শতাংশ কমে গেছে। সূত্র জানায়, আগস্টের ২ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি তেলের চাহিদা কমে সেপ্টেম্বরে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেল চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, বিশ্ববাজারে তেলের দাম অব্যাহতভাবে বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছে।

বিদ্যুৎ উৎপদনের উপর গুরুত্ব দিয়ে সরকার কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে বেসরকারিভাবে জ্বালানি তেল চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে চাপ পড়ে জ্বালানি তেলের ওপর। সেই চাপ মোকাবেলায় এখন জ্বালানি তেল চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা সরকারের এই পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্তকে চরম সমন্বয়হীনতা বলে উল্লেখ করেছেন।
 
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড বা পিডিবি গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে বেশ কয়েকটি জ্বালানি তেল চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা বন্ধ করে দেয়। এগুলোর বেশিরভাগই বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র।

খরচ কমানোর পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সরকার গত মার্চে প্রথম জ্বালানি তেল চালিত বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনা বন্ধ করে। এর ফলে তখনই এ ধরনের কয়েকটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়।

বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর উৎপাদিত বিদ্যুতের একমাত্র ক্রেতা পিডিবি। এছাড়া এটি দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎবিতরণ প্রতিষ্ঠানও বটে।

রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানটি একই সঙ্গে দেশে অপরিশোধিত এবং পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করে। পরবর্তীতে অবশ্য তা ভর্তুকি দিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়। এর ফলে সরকার সম্প্রতি প্রচুর লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানা গেছে।  

তবে গত জুন মাসে বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রণালয় জ্বালানি তেল নির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কিনতে অতিরিক্ত ৫শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। গরমকাল এবং বিশেষ করে রমজান মাসে গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলো।

বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৪টি জ্বালানি তেল চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র আছে। এগুলোর মধ্যে ২৩টির উৎপাদন  ক্ষমতা ১ দশমিক ৯৫৬ গিগাওয়াট। উচ্চ ক্ষমতার সালফার ফুয়েল ওয়েল ব্যবহার করে পরিচালিত হয় এগুলো। বাকি ১১ টিতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় গ্যাস অয়েল জ্বালানি।

বর্তমানে জ্বালানি তেল দ্বারা উৎপাদিত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ প্রতি কিলোওয়াট আওয়ারে ১৬ থেকে ২০ টাকা। এছাড়া গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ ২ থেকে ৩ টাকা প্রতি কিলো ওয়াট আওয়ার। তুলনাম‍ূলক সস্তা কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন খরচ পড়ে ৫ টাকা প্রতি কিলোওয়াট আওয়ার। এছাড়া জল বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় মাত্র ১ টাকা প্রতি কিলো ওয়াট আওয়ার।

বাংলাদেশ জ্বালানির অধিকাংশ চাহিদাই মেটায় আমদানির মাধ্যমে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন আগামী ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরের জন্য ৫৮ লাখ মেট্রিকটন পেট্রোলিয়াম জাতীয় পণ্য আমদানির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১২
সম্পাদনা: রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।