ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

সিলেটে অসহনীয় বিদ্যুৎ বিভ্রাট

সাব্বির আহমদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১২
সিলেটে অসহনীয় বিদ্যুৎ বিভ্রাট

সিলেট: শরতের এই গরমে পুরো সিলেট জেলায় বিদ্যুৎ ভোগান্তি চরম মাত্রায় পৌঁছেছে। প্রতিদিন মাত্র দুই ঘণ্টা লোডশেডিং করা হবে-প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর পরিস্থিতি আরো খারাপ আকার ধারণ করেছে।

কোন এলাকায় দিনে ও রাতে দেখা মিলছে না বিদ্যুতের। টানা ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় বিদ্যুতহীন থাকছেন কোনো কোনো এলাকার বাসিন্দারা।

জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে অব্যাহতভাবে এমন অভিযোগ এলেও তাতে সায় দিচ্ছেন না বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিদ্যুত অভিযোগ কেন্দ্রে ফোন করেও কোন ফল মিলছে না।
 
যোগাযোগ করা হলে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যে ‘কারিগরি ক্রটির’ কারণে এমনটি ঘটছে বলে জানান। তবে গত দুই দিন থেকে জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ-এই তিন প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকায় ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিভ্রাটের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।  

এর মধ্যে জকিগঞ্জ উপজেলায় গত দুইদিন থেকে বিদুৎ নেই। আর গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের অধিকাংশ এলাকায়ও বিদুৎহীন হয়ে পড়েছে।

এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আখতারুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, গত ৫ সেপ্টেম্বর পাওয়ার ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ার কারণে বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। তবে বিকল্পভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের চেষ্টা করা হয়েছে। বিয়ানীবাজার পৌরশহর শেওলা দুবাগসহ অন্যান্য এলাকায় বিদুৎ থাকলে এ উপজেলায় এখন বিদ্যুত পাচ্ছে মাত্র ৮ থেকে ৯ হাজার গ্রাহক।   আর অন্ধকারে রয়েছে প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক।
বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে কাল-পরশুর মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বিকল্প ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, পাওয়ার ট্রান্সফরমার বিশ্বনাথে বিকল্প একটি আছে। যানবাহন ও ক্রেন সংকটের কারণে সেটি নিয়ে আসতে দেরি হচ্ছে। তবে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, সামান্য যানবাহন ব্যবস্থা করতে গড়িমসি করতে গিয়ে বিদ্যুৎ ভোগান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন সিলেটের পূর্বাঞ্চলের লাখো মানুষ।

বিদ্যুৎ বিভাগের এই কর্মকর্তা আরো জানান, বিয়ানীবাজার উপজেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৩ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ হচ্ছে ৮ মেগাওয়াট। বাকি ৫ মেগাওয়াট সামাল দিতে গিয়ে লোডশেডিং করতে হয়। এই গরমের অসহ্য সময়েও রাতে ৪ ঘণ্টা  করে লোডশেডিং চলছে বিয়ানীবাজার উপজেলায়।

দিনের পর দিন জকিগঞ্জ উপজেলার বিদ্যুৎ না থাকা প্রসঙ্গে তিনি জানান, জকিগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহের পাওয়ার গ্রিডের ব্রেকারে সমস্যা হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

তিনি জানান, কুমারগাঁও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩৩ কেভি লাইনের ব্রেকারে সমস্যা সমাধানে পিডিবিকে বলা হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব নতুন ব্রেকার লাগানো হবে।

গোলাপগঞ্জের পল্লী বিদ্যুত অফিসের ডিজিএম মো. আবু রায়হান বাংলানিউজকে জানান, এ উপজেলায় বিদ্যুতের  চাহিদা ১৬ মেগাওয়াট, কিন্তু সরবরাহ হচ্ছে ১০ থেকে ১২ মেগাওয়াট।   দিনে ও রাতে এক ঘণ্টা বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কথা তিনি জানালেও গোলাপগঞ্জের প্রত্যন্ত এলকাগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।

গোলাপগঞ্জের চন্দরপুর গ্রামের মেডিকেল ভর্তিচ্ছু ছাত্র গোলাম শরীফ শাওন বাংলানিউজকে জানান, এই এলাকায় বিদ্যুৎ একবার গেলে আর আসে না।

গত দুই দিনের বিদ্যুৎ ভোগান্তির কথা তুলে ধরে তিনি আরো জানান, গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩ টায় বিদ্যুৎ চলে যায়। এরপর আসে বিকেল ৫টায়। আবার সন্ধ্যা ৭টায় চলে যায়-আসে রাত ৯টায়। এরপর আবারো ৯টা ৪০ মিনিটে বিদ্যুৎ চলে গিয়ে ১১টার দিকে একবার আসে। কিছুক্ষণ পর চলে গিয়ে পরদিন শুক্রবার সকাল ৯টায় একবার আসে। আবার ১১টা ৪০ মিনিটে চলে গিয়ে বিকেলে বিদ্যুৎ আসে। বিকেল পর্যন্ত বিদ্যুৎ আসেনি।

বিশ্বনাথ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম মো. আলম হোসেন বাংলানিউজকে জানান,  তার এলাকায় লোডশেডিং করতে হয় এক ঘণ্টা হয়। কিন্তু স্থানীয়রা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের তথ্য এ প্রতিবেদককে জানান।

এ ব্যাপারে মো. আলম হোসেন বলেন, অনেক সময় বিদ্যুতের লাইনে সমস্যা থাকার কারণে কিছু ভোগান্তি হয়। তবে তা নিয়মিত নয়। তিনি জানান, বিশ্বনাথে বিদ্যুতের চাহিদা ৭ মেগাওয়াট কিন্তু সরবরাহ হচ্ছে ৫ মেগাওয়াট। এ উপজেলায় ২৪ হাজার গ্রাহকের মধ্যে এলাকা ভাগ করে এক ঘণ্টা লোডশেডিং করা হয় বলে জানান তিনি।

বালাগঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম মো. মাহবুব জিয়া বাংলানিউজকে জানান, বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর থানায় বিদ্যুতের চাহিদা ১৩ মেগাওয়াট। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে ১০ মেগাওয়াট। এ উপজেলার প্রায় ৩৭ হাজার গ্রাহকের মধ্যে এক ঘণ্টা লোডশেডিং করতে হয়। তবে বাস্তবে আরো বেশি সময় লোডশেডিং হয়ে বলে জানা গেছে।

গোয়াইনঘাটের ডিজিএম মো. ওমর আলী বাংলানিউজকে জানান, তার এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা পুরণে দিনে ও রাতে এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হচ্ছে। চাহিদা ১৩ মেগাওয়াট, পাচ্ছেন ১১ মেগাওয়াট। গ্রাহক ৫২ হাজার।

এদিকে শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার দিবাগত রাত ২টা পর্যন্ত দক্ষিণ সুরমার অধিকাংশ এলাকাও বিদ্যুত আসেনি। কুমারগাঁও ব্রেকারে সমস্যা হওয়া দক্ষিণ সুরমা উপজেলা শনিবার দুপুরের আগে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগের চারটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন প্রায় ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। এর বিপরীতে সিলেট বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা প্রতিদিন প্রায় ২৮০ মেগাওয়াট।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৬০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১২
এসএ/সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।