ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য কয়লা উত্তেলনের বিকল্প নেই

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৭ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১২
জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য কয়লা উত্তেলনের বিকল্প নেই

ঢাকা: জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য কয়লা উত্তেলনের কোনো বিকল্প নেই বলে অভিমত দিয়েছেন জ্বলানি বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার দুপুরে সিরডাপ মিলনায়তনে এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার পত্রিকার দশম বর্ষে পদার্পন উপলক্ষে কয়লা উত্তোলনে চ্যালেঞ্জ শীর্ষক এক সেমিনারে তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।



সেমিনারে বক্তারা বলেন, কয়লা উত্তোলনের পদ্ধতিগত সমস্যার চাইতে রাজনৈতিক সমস্যাই বেশি।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, “১৫ বছর ধরে একই বক্তব্য চলছে। কিন্তু কয়লা উত্তোলনে এক ধাপও এগোতে পারিনি আমরা। আমরা অনেকেই মুখস্থ বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছি। টেকনিক্যালের চেয়ে বড় সমস্যা প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল। ফুলবাড়ি কয়লা খনিকে রাজনৈতিক দল দুটি রাজনৈতিক ফুটবল বানিয়েছে। যখন এরা বিরোধী দলে যায়, তখন এ ফুটবল নিয়ে খেলতে চায়। ”

তিনি আরও বলেন, “এখানে বড় বক্তব্য দিয়ে কোনো লাভ হবে না, বাস্তবতা বুঝতে হবে। আপনারা কোদাল নিয়ে সেখানে কয়লা তুলতে যাবেন কিন্তু সেখানকার মানুষ গুলির সামনেও বুক পেতে দিতে প্রস্তুত আছে। সে বিষয়টিও দেখতে হবে। এজন্য সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক দলের কমিটমেন্ট। ”

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী।

বিশেষ অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুবিদ আলী ভুঁইয়া। উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি একে আজাদ, সাবেক সভাপতি আনিসুল হক, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. মুশফিকুর রহমান, পেট্রাবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন, সাবেক পরিচালক মকবুল ই ইলাহী চৌধুরী প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, “আমদানিনির্ভর কয়লা নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে নিজেদের কয়লা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া হবে। ”

তিনি বলেন, “সরকার রাজনৈতিক অর্থনৈতিক, পরিবেশ ও প্রযুক্তিগত দিক বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে চায়। পানি ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাঠামো অনুযায়ী নির্ধারিত হবে উত্তোলন পদ্ধতি। কয়লানীতি প্রণয়ন কমিটি সেভাবেই বিষয়টি দেখছে। ” আগের করা খসড়া কয়লানীতিতে এ বিষয়ে ছিল না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, “বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। ”

এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদ বলেন, “কুইক রেন্টাল কতটুকু সফল, দেশকে বিপদে ফেলেছে  না ভালো করেছে, এ নিয়ে অনেক কথা রয়েছে। আমি এ বিষয়ে বলব না। আমি চাই বিদ্যুৎ। ”

পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মকবুল-ই-ইলাহী বলেন, “সরকার রূপকল্প বাস্তবায়নের কথা বলছেন, কিন্তু বিদ্যুতের হিসেবে ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫। যে ভুলটি বিএনপি সরকারও করেছিলো। ”

আগে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হওয়া জরুরি উল্লেখ করে বলেন, “টার্গেড যদি সঠিক না হয়, তাহলে ফলাফল ভালো আশা করা বৃথা। ”

তিনি বলেন, “এশিয়া এনাজি যে রিপোর্ট দিয়েছে, ওই রিপোর্টটি একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কমিটি দিয়ে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। মূল্যায়ন ছাড়া যে সমালোচনা চলছে তা অনুমান নির্ভর। ”

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামান বলেন, “এখন বিতর্ক চলছে উন্মুক্ত হবে না কূপ পদ্ধতি (আন্ডার গ্রাউন্ড) হবে। কিন্তু আসলে এটি কোন আলোচনার বিষয় হতে পারে না। আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত পানি ব্যবস্থাপনা ও রিসেটেলমেন্ট নিয়ে। ”

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঝূঁকিপুর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এখানেও অনেক সমস্যা রয়েছে। কিন্তু আমরা সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছি। ”

তিনি বলেন, “ভূমি অবকাঠামো নিশ্চিত করবে কয়লা উত্তোলন প্রক্রিয়া। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উত্তরাংশে উন্মুক্ত খনি ছাড়া কয়লা উত্তোলন সম্ভব নয়। ”

ভূতত্ত্ব অধিদপ্তরের পরিচালক নেহাল উদ্দিন বলেন, “এশিয়া এনার্জি যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। ৬০ মিটার কয়লা কেটে নেওয়া হবে কিন্তু গ্যাপ পূরণ করার বিষয়ে কোনো প্রস্তাবনা নেই। পানি রিইনজেক করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পানি রিইজেক করতে হলে শোধন করতে হবে। তার জন্য রির্জাভার রাখার প্রস্তাব করা হয়নি। ”

উত্তোলিত পানি পুকুরে মাছ চাষের বিষয়টি একটি কাল্পনিক চিন্তা বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আফগান সরকারের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা খন্দকার সালেক সুফি বলেন, “এখন নতুন নতুন অনেক পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে। উন্মুক্ত বা আন্ডার গ্রাউন্ডের মধ্যে আলোচনায় সীমাবদ্ধ না থেকে কোল বেড মিথেন ও আন্ডরগ্রাউন্ড গ্যাসিফিকেশন প্রক্রিয়ার দিকেও যাওয়া যেতে পারে। ”

গ্যাসিফিকেশন (তরলায়িত করে) করে বিশ্বে অনেক দেশে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, “ফুলবাড়ি কয়লা খনির রিপোর্টটি মূল্যায়ন না করে মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফুলবাড়ির জন্য অন্য তিনটি খনি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ”

কয়লা উত্তোলন না হলে ভবিষ্যতে বড় ধরণের সমস্যা সৃষ্টি হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আলোচনায় আরো অংশ নেন, কয়লা নীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য একেএম সামছুদ্দিন, মনোয়ার হোসেন, বেনু গোপাল দে। সেমিনার পরিচালনা করেন, এনর্জি অ্যান্ড পাওয়ারের সম্পাদক মোল্লা আমজাদ হোসেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১২
এসআইএস/সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।