ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

যুদ্ধ করেছিলাম একদলীয় শাসনের জন্য নয়: ফখরুল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২১
যুদ্ধ করেছিলাম একদলীয় শাসনের জন্য নয়: ফখরুল বক্তব্য রাখছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

গাজীপুর: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম মুক্ত বাংলাদেশের জন্য, একদলীয় শাসন ব্যবস্থার জন্য নয়। আমাদের অধিকার  বিলিয়ে দেয়ার জন্য, হরণের জন্য যুদ্ধ করিনি।

মুক্তিযুদ্ধের যে অর্জন ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার, সেই সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র সুপরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে বর্তমান সরকার।

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সু-চিকিৎসার দাবিতে শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে গাজীপুর জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জ ফখরুল বলেন, আমরা যুদ্ধ করেছিলাম বহুদলীয় গণতন্ত্রের মধ্যে আমরা বাস করব সেজন্য। কিন্তু তারা (আওয়ামী লীগ) একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এখন নতুন নাটক শুরু করেছে, সেটা হলো সংলাপ। রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন দলকে দাওয়াত করে বলছে আমরা একটি নতুন ভাল নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন করি। নির্বাচন কমিশন কী করবে? তারাতো কাজই করতে পারে না যতক্ষণ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকবে। আমরা পরিষ্কার বলেছি ইসি গঠনের আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নিরপেক্ষ ইসির অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব কাজী সাইয়্যেদুল আলম বাবুল ও মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব সোহরাব উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায়  আরও বক্তব্য রাখেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাড. ফজলুর রহমান, গাজীপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সালাহ্ উদ্দিন সরকার, বিএনপির কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. আব্দুস ছালাম আজাদ, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি সালাহ্ উদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবু ও ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা ইসরাক হোসেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থা এমন হয়েছে যে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ভর্তি পরীক্ষা হয় তাতে ঘ ইউনিটে ৯৪ ভাগ শিক্ষার্থী ফেল করেছে। তাহলে পড়াশোনা কোথায় হচ্ছে? বর্তমানে লেখাপাড়ার যে খরচ, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া পড়াশোনা নেই। সব দখল করে নিয়েছে ছাত্রলীগ নেতারা।

তিনি বলেন, আবেগ দিয়ে, স্লোগান দিয়ে যুদ্ধ জয় করা যায় না। আগে আমাদের সুশঙ্খল ভাবে দল তৈরি করতে হবে। আমাদের মধ্যে যদি শৃঙ্খলা না থাকে তাহলে যুদ্ধে জয় লাভ করা যাবে না।   আমাদেরকে বড় আন্দোলনের জন্য, কঠিন আন্দোলনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার জন্য তৈরি থাকতে হবে। জনগণকে সংগঠিত করে, তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামতে হবে। আজকের সঙ্কট  শুধু দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নয়, বিএনপির নয়, তারেক রহমানের নয়, এই সঙ্কট  দেশের সবার।

মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম, স্বাধীনতার জন্য, অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, সেই অধিকার আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আমরা ভোট দিতে পারি না, আগের রাতে ভোট হয়ে যায়। আমরা কথা বলতে পারি না, চার হাজার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, শতাধিক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। আমরা যারা গণতন্ত্রের পথ ধরে আন্দোলন করি, আমাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, শ্রমিকদল কেউই বাদ পড়েনি।

তিনি বলেন, ক্রসফায়ার হয়েছে, গুম হয়েছে, সারাদেশে ৫০০ অধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। মায়ের বুক খালি হয়েছে, স্ত্রী তার স্বামীকে হারিয়েছে, বন্ধু তার বন্ধুকে হারিয়েছে। বোন তার ভাইকে হারিয়েছে। ৩৫লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা তাদের অত্যাচার-নির্যাতন চলছে।

তিনি আরও বলেন, আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, তার বিরুদ্ধে কী মামলা? এমন একটা মামলা, যার কোনো ভিত্তিই নেই। দুই কোটি টাকার একটি অ্যাকাউন্ট ছিল, সেই অ্যাকাউন্টে এখন ৮ কোটি টাকা। পত্রিকায় এসেছে কয়েক বছরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ৪২লাখ কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা শেষ, কেউ আর এখন নির্বাচনে ভোট দিতে চায় না। ভোট দিতে গিয়ে কি হবে, আগের রাতেই ভোট দেয়া হয়ে গেছে। আমরা বলেছিলাম, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব, সেটা কি আছে এখন? মা বোনেরা কি ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে? এভাবে নির্বাচনী ব্যবস্থা শেষ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার।

মানুষ কোথাও নিরাপদ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেড়াতে গিয়েও মা-বোনরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা ব্যাংক লুট করে টাকা পাচার করে দিচ্ছে। আজকে আওয়ামী লীগ মেগা প্রজেক্ট করছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেস হচ্ছে। রাস্তা ঘাটের কী অবস্থা? মানুষ তাতে চলাচল করতে পারছে না। এতে কার লাভ হচ্ছে? ওই আওয়ামী লীগের সঙ্গে যারা জড়িত আছে, এই কাজের মধ্যে বসে থেকে যারা কমিশন খাচ্ছে তাদের লাভ হচ্ছে, জনগণের কোনো লাভ হচ্ছে না।

তিনি বলেন, আজকে চালের দাম ৭০টাকা। যেখানে ১০টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর কথা ছিল। বিনা পয়সায় সার দেওয়ার কথা ছিল। এখন তিনগুণ দাম বেশি দিয়ে সার কিনতে হয়। শিল্প কারখানার শ্রমিকরা যে বেতন পায় তা দিয়ে সংসার চলে না। এই সরকারের আমলে যারা আওয়ামী লীগ করে, আওয়ামী লীগের তোষামোদি করে তারা আরও ধনী হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষ, গরিব মানুষ আরও গরিব হচ্ছে। দারিদ্রসীমা আগের চেয়ে অনেক নিচে নেমে গেছে। মানুষ স্বাস্থ্য সেবা পায় না, সরকারি হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা নেই, বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গেলে পকেট কেটে টাকা রাখা হচ্ছে।

সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের ঘণ্টা বেজে গেছে। র‌্যাবের ৭ কর্মকর্তার ভিসা আমেরিকা বাতিল করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কথায় কথায় গণতন্ত্রের কথা বলেন, দেশে এখন এক ব্যক্তি ছাড়া কেউ নেই। এক নেতার এক দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।

ভোটের অধিকার আদায় করতে, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ অধিকার আদায় করে দেয় না, আদায় করে নিতে হয়। আমাদেরকে আমাদের হিস্যা আদায় করে নিতে হবে। আওয়ামী লীগ এদেশের প্রভু বা মালিক নয়, এদেশের মালিক দেশের জনগণ।

তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। কোন ব্যক্তি বা দলের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য না। জনগণ আজকে পরিবর্তন চায়। জনগণ দেশনেত্রী খালেদা জিয়া মুক্তি চায়। জনগণ তার সুচিকিৎসা চায়। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এদেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। তিনি এদেশের গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ নয় বছর সংগ্রাম করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০, ডিসেম্বর ২৪, ২০২১।
আরএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।