ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

আ. লীগের বিজয় সমাবেশে যা বললেন কেন্দ্রীয় নেতারা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২১
আ. লীগের বিজয় সমাবেশে যা বললেন কেন্দ্রীয় নেতারা

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নৌকার পক্ষে নির্বাচনী সমাবেশে পরিণত হয়েছিল। এতে বক্তব্য রেখেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা, সংসদস সদস্যরা ও জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা।

সবার বক্তব্যেই উঠে এসেছে নাসিক নির্বাচনে আইভীর পক্ষে ভোট চাওয়ার বিষয়টি।

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে আইভীর বাড়ির এলাকা দেওভোগের শেখ রাসেল পার্কে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে নৌকা প্রতীক মঞ্চের সামনে টানিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। সমাবেশ মঞ্চে উঠেই নৌকার পক্ষে স্লোগান দেন আইভী।

সমাবেশের প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, এ সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমি আশ্বস্ত হয়েছি, ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বিজয় কোনো ষড়যন্ত্র রুখতে পারবে না। নারায়ণগঞ্জবাসী ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাচ্ছে আইভীকে সাথে নিয়ে। আগামী ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সে নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা এ বিজয় সমাবেশ আয়োজন করেছি। এ বিজয় সমাবেশ জানান দিয়েছে নারায়ণগঞ্জবাসী আবারও আইভীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।

তিনি বলেন, নেত্রী চুলচেরা বিশ্লেষণ করে মনোনয়ন দিয়েছেন। আইভী গতবার তিরাশি হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছেন। এবার লক্ষাধিক ভোটে জয়লাভ করবেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা একঝাঁক কেন্দ্রীয় নেতা এখানে এসেছি। মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা আইভীর বিজয়ের মাধ্যমে ২০২২ সালে নির্বাচনে জয়ের শুভ সূচনা করতে চান।

তিনি আরও বলেন, আমি পরিষ্কার বলতে চাই। নেতায় নেতায় প্রতিযোগীতা থাকতে পারে। কিন্তু কর্মীরা হলো শেখ হাসিনার কর্মী। প্রতিযোগীতা না থাকলে জড়াবস্থার সৃষ্টি হয়। তবে প্রতিযোগীতা যেন প্রতিহিংসায় রুপ না নেয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। কর্মীদের স্ব স্ব জায়গা থেকে এ নির্বাচনে আপনাদের ভোট ক্যাম্পেইন করতে হবে। ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে তাদের হাতে পায়ে ধরতে হবে। এটাই আমার আহ্বান আপনাদের কাছে।

তিনি বলেন, বিএনপির একজন প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। তিনি তার লেবেল আপাতত উঠিয়ে ফেলেছেন, তিনি বলছেন তিনি নিরপেক্ষ, দলবিহীন প্রার্থী। এটি আরেকটি কৌশল। আমাদের সকলকে সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং আইভীকে জয়ী করতে হবে। প্রতি ভোটারের বাড়িতে বাড়িতে যেতে হবে এবং আইভীর বার্তা তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, কোন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে পা দেবেন না। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে আমি, আব্দুর রহমান, বাহাউদ্দীন নাসিম কেউ অপরিহার্য নই। আমাদের মধ্যে অপরিহার্য একমাত্র শেখ হাসিনা ও দল।  

আওয়ামী লীগ নেতা এমপি মৃণাল কান্তি দাস বলেছেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে এই সমাবেশে আমাদের এই সভামঞ্চে এমন একজন ব্যক্তি উপস্থিত আছে যাকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সকল মানুষ আশায় বুক বাঁধে। ২০০৩ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী করেছিলেন। তিনি তখন মাত্র তার পড়ালেখা বিদেশ থেকে শেষ করে এসেছেন। তখন আপনারা সকলে মিলে আইভীকে ভোট দিয়ে জয়ী করেছিলেন।

তিনি বলেন, সেদিন আপনারা সকলকে দেখিয়েছিলেন এ নারায়ণগঞ্জ বঙ্গবন্ধু, সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নারায়ণগঞ্জ। সেই ২০০৩ থেকে আপনারা আইভীকে পরাজয়ের স্বাদ নিতে দেননি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবারও আইভীকে আপনাদের মাঝে পাঠিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের অস্তিত্বের ঠিকানা আপনারা তা আবারও প্রমাণ করবেন নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, আপনারা কাকে ভোট দেবেন। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে না পঁচাত্তরের ঘাতকদের ভোট দেবেন। আমি জানি আপনারা আইভীকে ভোট দিবেন। আমি সেই প্রত্যাশা রাখছি।

আমি একটি কথা বলতে চাই। আমি এমন একসময় এই বিজয় সমাবেশ করছি যখন কিছুদিন পরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন হতে যাচ্ছে। যখনই নির্বাচন হয় তখন আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কারা করে, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে তারা আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে যারা হত্যা করেছে সে বিএনপি আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। ২১শে আগষ্টের গ্রেনেড হামলাকারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেছেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল নারায়ণগঞ্জের মানুষ। আজ বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। শেখ হাসিনা উন্নয়নের রোল মডেল। শেখ হাসিনা নারায়ণগঞ্জকে উন্নয়নের মডেল করার জন্য আইভীকে প্রেরণ করেছেন।

তিনি বলেন, আমি আশা রাখি আিভীকে ভোট দিয়ে একাত্তরের পরাজিত শক্তির হাত থেকে শহরকে আপনারা সুরক্ষিত রাখবেন। উন্নয়নের গতিধারাকে আপনারা অব্যাহত রাখবেন এটাই আমার আশা।

আওয়ামী লীগের সংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দীন নাসিম বলেছেন, পদ্মার স্রোতের আর সাগরের মোহনার নাম আইভী। দিনে সূর্য চারিদিক আলোকিত করে রাতে চাঁদ আলোকিত করে। আইভী নারায়ণগঞ্জের সূর্য ও চাঁদ।

তিনি বলেন, ১৬ জানুয়ারি বিজয় হবে। আইভী মানে প্রধানমন্ত্রীর বিজয় নৌকার বিজয়।  বিএনপি নির্বাচনে আসবে না। তারা এবার বোরকা পরে নির্বাচনে এসেছে। ভোটে হারলে তারা রাতের ভোটের গল্প করবে।

তিনি আরও বলেন, রাতের গল্প করে বিএনপি, রাতে ক্ষমতায় এসেছিল জিয়াউর রহমান। আমরা রাতে ক্ষমতায় আসিনি। আমরা দিনের আলোতে এসেছি আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

বাহাউদ্দীন নাসিম বলেছেন, আমি বলতে চাই আওয়ামী লীগ এক ও অভিন্ন। সময়মত আওয়ামী লীগ এক হয়ে যায় যার উদাহরণ আজকের এই মঞ্চ। এই মঞ্চে কারা উপস্থিত আছেন, সবাই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। গত বিশ বছরে নারায়ণগঞ্জে মহানগর ও জেলার ঐক্যবদ্ধ কোন জনসভা হয়েছে, হয়নি। আজকে আপনাদেট আকাঙ্খা ইচ্ছা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আমরা এক ও ঐক্যবদ্ধ।

১৬ জানুয়ারি আপনারা আরেকটি বিজয় সমাবেশ করবেন। সেই মিছিলের অপেক্ষায় আমরা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয় মিছিল করতে চাই। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শেখ হাসিনা ও নৌকার পাশে আছি। আমরা নির্বাচনী আচরণবিধি মেনেই এ জনসভা করেছি।

নারায়ণগঞ্জ ২ আসনের (আড়াইহাজার) সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষের একমাত্র ঠিকানা। তিনি বার বার আমাদের প্রিয় নেতা আলী আহমদ চুনকা সাহেবের মেয়ে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমাদের তাকে জয়ী করতে হবে।

এসময় বাবু বলেন, বিজয় দিবসের আলোচনাকে সফল স্বার্থক করতে হবে। বার বার নৌকায় ভোট দিয়ে নারায়ণগঞ্জকে উন্নয়নের শহরে রুপ দিতে হবে। আপনাদের প্রতি আমার আহ্বান বার বার নৌকায় ভোট দিয়ে আপনারা শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করুন। বাংলাদেশের মেহনতী মানুষের জন্য তাকেই দরকার।

এসময় আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা, জেলা ও মহানগরের নেতা, অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।