ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রাজনীতি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান রেজাউলের পরিবার

ডিস্ট্রিক্ট, করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২১
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান রেজাউলের পরিবার রেজাউলের পরিবার। ছবি: বাংলানিউজ

মেহেরপুর: তখন ক্ষমতায় বিএনপি। চারদিকে বিএনপি আর জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।

আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিধন চিত্র নিত্য নৈমিত্তিক। সে সময় মেহেরপুর জেলাজুড়ে ছাত্রলীগ, বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে গড়ে তোলে প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ। এতে শিবির আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

শিবিরের সেই তাণ্ডবে প্রাণ হারান তৎকালীন মেহেরপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক রেজাউল হক। সেদিনও ছিল শোকার্ত আগস্ট মাস।

১৯৯২ সালের ১৯ আগস্ট। মেহেরপুর শহরের সরকারি কলেজ মোড় এলাকায় ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে শুরু হয় তুমুল সংঘর্ষ। এতে উভয়পক্ষের অনেকে আহত হন। ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল হকও গুরুতর আহত হন। আহতাবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ও পরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন চিকিৎসক। অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (তৎকালীন পিজি) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিসাধীন অবস্থায় রেজাউল হকের সঙ্গে দেখা করেন এবং তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন সেই সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর ১৯৯৩ সালের ০৭ নভেম্বর মারা যান রেজাউল।

এ ঘটনায় রেজাউলের বাবা আতর আলী বাদী হয়ে ৩৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন জেলা জামায়াতের আমীর হাজী ছমির উদ্দিন। উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন শিবিরের মেহেরপুর জেলার সভাপতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাসানুজ্জামান, গাংনীর চৌগাছা গ্রামের আব্দুল ওহাব, একটি বেসরকারি কলেজের  মুকুল হোসেন, গাংনী উপজেলার ধানখোলা গ্রামের রেজাউল হোসেন।
মামলার বাদী আতর আলী ২০০৭ সালে মারা যান। পরে মামলাটি দেখাশোনা করেন রেজাউলের বোন রিজিয়া খাতুন।  

রিজিয়া খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, আমার ভাই দলের জন্য রক্ত দিয়েছেন। অথচ কয়েকজন স্থানীয় নেতা সেই রক্তের সঙ্গে বেঈমানী করেছেন। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাদের পরিবারকে ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলেন। সেটাও তৎকালীন একজন জনপ্রতিনিধি ও একজন ছাত্রনেতা আত্মসাৎ করেছিলেন। আমার বাবার বুকে অস্ত্র ধরে সেই চেকে সই করে নিয়েছিলেন তারা। বাবাকে মাত্র ২০ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে ঢাকা থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবারও অভিযোগ দেওয়ার পর ঢাকায় ওই দুই নেতাকে ডাকেন। তারা ওই সময় শেখ হাসিনার কাছে মাফ চান। পরে মাত্র ৭০ হাজার টাকা দেন।  

তিনি বলেন, তৎকালীন সময় এক নেতা ১০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সে টাকা আজও আমাদের পরিবারকে দেননি। এখন মামলার কার্যক্রমও আমরা জানি না। মামলার আসামিরা এখনও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।  

রিজিয়া খাতুন আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমরা দেখা করতে চাই। আমাদের অসহায় পরিবারের সব সদস্যই এখন প্রতিবন্ধী। এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা আমাদের জন্য আসেনি। বর্তমান গাংনী পৌরসভার মেয়র আশরাফুল ইসলাম প্রতিবন্ধী ভাই আনসার আলীকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিয়েছেন। এছাড়া প্রায়ই পৌরসভা থেকে চাল দেন।  

রেজাউল হকের ভাগ্নে রোকনুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের পরিবারের কোনো খোঁজ-খবর রাখেন না কেউ। রেজাউল হকের বড় ভাই আজিজুল হক পাঁচ বছর আগে স্ট্রোক করে এখন মানসিক প্রতিবন্ধী। তার স্ত্রী রাশেদা খাতুনও প্রতিবন্ধী। অন্য ভাই আনসার আলী ও তার স্ত্রী সুবারন নেছাও দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ। টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেন না। কোনো রকম অন্যের বাড়িতে কাজ করেন এবং অন্যের দয়ায় কোনো রকম বেঁচে আছেন।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গাংনী উপজেলা শহরের বিশ্বাসপাড়া এলাকায় রেজাউল হকের বাড়ির সামনে একটি সাইনবোর্ড দেওয়া আছে। সেটিও অযত্ন আর অবহেলায় ভেঙে গেছে। ইট আর টিনের ছাউনি দিয়ে ছোট ছোট ঘর বানিয়ে সেখানে বসবাস করছেন শহীদ রেজাউল হকের দুই ভাইয়ের পরিবারের অসহায় প্রতিবন্ধী ভাই ও ভাবি।

রেজাউল হকের ভাবি রাশেদা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, আমার স্বামী ও আমি দু’জনেই এখন প্রতিবন্ধী হয়ে গেছি। আমাদের পরিবারের কোনো আয় নেই। আমার ননদের ছেলে রোকনুজ্জামান কিছু দেন আর আমি কষ্ট করে অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবন ধারণ করছি।

বর্তমান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ হোসেন এমপি সাম্প্রতিক সময়ে মেহেরপুর সরকারি কলেজ চত্বরকে শহীদ রেজাউল চত্বর হিসাবে ঘোষণা দেন এবং সেখানে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেন।

শহীদ রেজাউল হকের পরিবারের অসহায় সদস্যদের আকুল আবেদন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের গণভবনে ডাকবেন। শুনবেন দলের জন্য জীবন দেওয়া একটি পরিবারের কথা।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২১
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।