ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভায় যেসব সিদ্ধান্ত হলো

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৪
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভায় যেসব সিদ্ধান্ত হলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়:  সরকারের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্পর্ক হবে দ্বন্দ্বের— এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন সমন্বয়কেরা। তারা সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা করবেন এবং মন্দ কাজের সমালোচনায় সরব থাকবেন।

বুধবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিসে দেশের চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা, প্ল্যাটফর্মের আগামীর রূপরেখা এবং সমন্বয়কদের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো নিয়ে আয়োজিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এতে কেন্দ্রীয় ১৫৮ সমন্বয়কের মধ্যে সবমিলিয়ে ৬০-৬৫ জন উপস্থিত হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সদস্যসচিব আরিফ সোহেল, মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

সভায় উপদেষ্টা নিয়োগ ইস্যু নিয়ে ধোঁয়াশা, সরকারের কোনো সিদ্ধান্তে না থেকেও সমালোচনার শিকার হওয়া, সারা দেশে সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখাসহ দেশের নানা ইস্যু নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সমন্বয়করা।

সভায় তিনটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, দুয়েকদিনের মধ্যে একটি নির্বাহী কমিটি গঠন করা হবে। আহ্বায়ক কমিটির চারজনের বাইরে নির্বাহী কমিটিতে ২০ থেকে ২২ জন সদস্য থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজের প্রতিনিধিসহ জেলা পর্যায় থেকে দু-একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে নির্বাহী কমিটি গঠিত হবে।

তিনি বলেন, আরেকটি সিদ্ধান্ত হয়েছে ‘অরগানাইজিং টিম’ গঠনের। এতে সেলভিত্তিক ভাগ করে কাজ করা হবে। কে কোন সেলে থাকবেন, সাংগঠনিক কী দায়িত্ব পালন করবেন, এতে সব ঠিক করা থাকবে। এ ছাড়া আহ্বায়ক কমিটি বাড়িয়ে চলতি মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে অন্যান্য সমন্বয়কদের এতে যুক্ত করা হবে।  

সভাসূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবং বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিনের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। এ সময় জানানো হয়, ফারুকীর বিষয়ে তারা নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। ফ্যাসিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার নিয়োগের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে।

অন্যদিকে সেখ বশিরের বিষয়ে কোনো জবাব আসেনি। তার ভাইয়েরা ফ্যাসিবাদের দোসর হলেও আওয়ামী সময়ে বশির নিগৃহীত হন। তবে যেহেতু নিয়োগ হয়ে গেছে, ফলে তাদের পর্যবেক্ষণে রাখবেন তারা।

উপদেষ্টাদের কীভাবে নিয়োগ হয় এমন প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, ড. ইউনূস ছাড়া বাকি উপদেষ্টাদের নিয়োগের বিষয়ে বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কাউকে জানানো হয়নি। ফলে এ বিষয়ে তারা জানেন না।

সরকারের নানা বিতর্কিত কাজের জন্য সমালোচনার শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন কয়েকজন সমন্বয়ক। এর সমাধানকল্পে সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে উপদেষ্টাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং নেগোসিয়েশনের (দর-কষাকষি) জন্য একটি সেল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেখানে তারা নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে জবাবদিহি চাইবেন।

গত ৩ আগস্ট সরকার পতনের আগে কেন্দ্রীয় ১৫৮ সদস্যের কমিটি দেওয়া হয়। গত ২২ অক্টোবর চার সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়। এতে বাকি সমন্বয়করা পরিচয় সংকটে পড়েছেন জানিয়ে বর্ধিত কমিটি দিতে দেরি হওয়ায় ক্ষোভ দেখান। এ ছাড়া ৫ আগস্টের পর কেন্দ্রীয় প্রথম সারির সমন্বয়কদের ফোনে না পাওয়ার অভিযোগ তোলেন দুয়েকজন।

এ বিষয়ে হান্নান মাসউদ বলেন, ব্যস্ততার কারণে সপ্তাহে একবারও বাবার সঙ্গে কথা বলতে পারেন না তারা।

সভাসূত্রে আরও জানা যায়, সভায় উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে নিয়ে আবেগঘন বক্তব্য দেন আব্দুল হান্নান মাসউদ। তার বক্তব্যে তিনি বলেন, মানুষ কোনো দলের জন্য আন্দোলনে আসেনি, তারা শেখ হাসিনাকে হটিয়ে একটি নতুন বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের জন্য আমাদের আহ্বানে রাস্তায় নেমে এসেছিল। মানুষ আমাদের বিশ্বাস করেছে। সেই জায়গায় আমাদের এক ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের নিজেদের পরস্পরের সম্পর্ক বাড়াতে হবে।

কয়েকজন সমন্বয়ক অভিযোগ করেন, প্রশাসনের কেউ তাদের গোনায় ধরে না। ডিসি-ইউএনওসহ প্রশাসন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করেছে। কিন্তু মানুষের সমালোচনার ভাগীদার হতে হচ্ছে তাদের, এ বিষয়ে তারা ক্ষোভ জানান। আবার অনেকে বিএনপির বিরুদ্ধে আধিপত্য বিস্তারের অভিযোগ তোলেন।

আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। তারা বলেন, সবাই ভাবেন, তারা হয়তো এতদিনে বহু টাকার মালিক হয়েছেন। অথচ আজ একটি সভা হলো। সভায় আসার ভাড়াও তাদের নিজের পকেট থেকে দিতে হচ্ছে। আর্থিক সব বিষয় চার সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির কাছে।

জবাবে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, কারো থেকে পাঁচ টাকা খাওয়ার প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না। পারলে যে কোনো শাস্তি তিনি মেনে নেবেন। এসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে।  
তিনি বলেন, অনেকে নানা জায়গায় সমন্বয়ক পরিচয় নিয়ে সুবিধা নিতে চান। সুবিধা না পেলে বলেন, আমি কি আন্দোলন করিনি? আন্দোলনের দোহাই দিয়ে অন্যায্য সুবিধা চাওয়া অযৌক্তিক।

সমন্বয়ক মাহিন সরকার সভায় বলেন, আন্দোলনে বাপেরা ছেলেদের ঠেলে দিয়েছিলেন তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে সফল হওয়ার পর অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, বাপের আগে ছেলে হাঁটতে চায় কেন? এমন প্রশ্ন তোলা যৌক্তিক নয়। তিনি দ্রুত আহ্বায়ক কমিটি বর্ধিত করার কথা জানান।

সভাসূত্রে আরও জানা যায়, সংবিধান পুনর্লিখন এবং রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে সরানোর বিষয়ে কয়েকজন প্রশ্ন তোলেন। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট জবাব আসেনি। এ নিয়ে সামনে কাজ হবে বলে জানানো হয়। এ ছাড়া জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য সেল, মিডিয়ার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখার জন্য সেল, প্ল্যাটফর্মের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য প্রস্তুত এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে গবেষণা সেলসহ একাধিক সেল গঠনের সিদ্ধান্ত হয় সভায়।

সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ। তিনি জানান, আগামী ১৫ নভেম্বর অভ্যুত্থানের শততম দিন উপলক্ষে একটি কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে ঢাকায় ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে আহতদের খোঁজ-খবর নেওয়া হবে এবং শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হবে। একই সঙ্গে জেলা পর্যায়ে যারা জেলা প্রতিনিধি আছেন, তারা আহত ও শহীদ পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২২৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২৪
এফএইচ/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।